পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 Jurg VgG29 দুই ইচ্ছা! কেবল মানুষই বলে, আশার অন্ত নাই। পৃথিবীর আর কোেনা জীব এমন কথা বলে না। আর-সকল প্ৰাণী প্ৰকৃতির একটা সীমার মধ্যে প্ৰাণ ধারণ করে এবং তােহর মনের সমস্ত আকাঙ্ক্ষাও সেই সীমাকে মানিয়া চলে । জন্তদের আহার বিহার নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজনের সীমাকে লঙ্ঘন করিতে চায় না । এক জায়গায় তাহদের সাধ মেটে এবং সেখানে তাহারা ক্ষান্ত হইতে জানে। অভাব পূর্ণ হইলে তাহদের ইচ্ছ। আপনি থামিয়া যায়, তাহার পরে আবার সেই ইচ্ছাকে তাড়না করিয়া জাগাইবার জন্য তাহদের দ্বিতীয় আর-একটা ইচ্ছা নাই । মানুষের প্রকৃতিতে আশ্চর্য এই দেখা যায়, একটা ইচ্ছার উপর সওয়ার হইয়া আর-একটা ইচ্ছা! চাপিয়া আছে । পেট ভরিয়া গেলে খাইবার ইচ্ছা যখন আপনি মিটিয়া যায়, তখনো সেই ইচ্ছাকে জোর করিয়া জাগাইয়া রাখিবার জন্য মানুষের আর-একটা ইচ্ছা তাগিদ করিতে থাকে । সে কোনোমতে চাটুনি খাইয়া, ঔষধ প্রয়োগ করিয়া, আহারের অবসর ইচ্ছাকে প্রয়োজনের উর্ধের্বও চালনা করিতে थक । ইহাতে মানুষের যথেষ্ট ক্ষতি করে । কারণ, ইহা স্বাভাবিক ইচ্ছা নহে। স্বাভাবিক ইচ্ছা সহজেই আপন প্রাকৃতিক স্বভাবের সীমার মধ্যে পরিতৃপ্ত হইয়া থাকে। আর, মানুষের এই অস্বাভাবিক ইচ্ছা! কিছুতেই তৃপ্তি মানিতে চায় না । তাছার মধ্যে একটা কী আছে যে কেবলই বলিতেছে- আরো, । VI, ENG ! কিন্তু, যাহাতে মানুষের ক্ষতি করিতে পারে সে ইচ্ছা মানুষের থাকে কেন । নিজের এই দুরন্তু ইচ্ছাটার দিকে তাকাইয়াই মানুষ বিশ্বব্যাপারে একটা শয়তানের কল্পনা করিয়াছে। য়িহুদি পুরাণের প্ৰথম নরনারী যখন স্বর্গোদানে ছিল তখন ঈশ্বর তাহদের ইচ্ছাকে প্রকৃতির সীমার মধ্যে বাধিয়া দিয়া বলিয়ছিলেন, "ইহার মধ্যেই সন্তুষ্ট থাকিয়ো । প্ৰাণের রাজ্যই তোমাদের রহিল, জ্ঞানের রাজ্যে লোভ দিয়ে না। স্বর্গোেদ্যানের প্রত্যেক জীবজন্তুই সেই সন্তোষের সীমার মধ্যেই বন্ধ রহিল ; কেবল মানুষই বলিল, “যাহা পাওয়া গেছে তাহার চেয়ে আরো পাওয়া চাই ।” এই-যে আরো'র দিকে সে পা বাড়াইল এ বড়ো বিষম রাজ্য। এখানে স্বাভাবিক পরিতৃপ্তির কোনো সীমা কোথাও নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া নাই, এইজন্য কোন দিকে কত দূর পর্যন্ত যে যাওয়া যায় তাহার পরামর্শদাতা পাওয়া শক্ত । এইজনা এই অতৃপ্তির পথহীন রাজো মরিবার আশঙ্কা চারি দিকেই বিকীর্ণ। এমন ভয়ানক ক্ষেত্রে মানুষকে দুনিবার বেগে যে টানিয়া আনিল মানুষ তাহাকে গালি দিয়া বলিল “শয়তান । কিন্তু, রাগই করি আর যাই করি, জগতে শয়তানকে তো মানিতে পারি না । এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে, মানুষের এই-যে ইচ্ছার উপরে আরোর জন্য আরো একটা ইচ্ছা ইহা তাহার বাহিরের দিক হইতে একটা শক্রির আক্রমণ নহে। ইহাকে মানুষ রিপু বলে বলুক, কিন্তু এই ইচ্ছাই তাহার যথার্থ মানবস্বভাবগত ইচ্ছা । সুতরাং যতক্ষণ এই ইচ্ছাকে সে জয়ী করিতে না পরিবে ততক্ষণে তাহার কিছুতেই শান্তি নাই- ততক্ষণ তাহাকে কেবলই আঘাত খাইয়া খাইয়া ঘুরিয়া মরিতে হইবে । কিন্তু, এই আরোয় ইচ্ছাকে সে জয়ী করিবে কেমন করিয়া । আহার করিলে পেট তাহার ভরিবেই, ভোগ করিলে এক জায়গায় তাহার নিবৃত্তিতে আসিয়া ঠেকিতেই হইবে- আরো'র ইচ্ছাকে সেখানে কোনো-একটা সীমায় আসিয়া হার মানিতেই হইবে । শুধু হার মানা নয়, সে জায়গায় সে দুঃখ পাইবে এবং দুঃখ ঘটাইবে । ব্যাধি আসিবে, বিকৃতি আসিবে, সে নিজেকে এবং অন্যকে বাধা দিতে থাকিবে । কেননা, প্রকৃতি যেখানে সীমা টানিয়াছেন তাহকে লঙ্ঘন করিতে গেলেই শান্তি আছে। শুধু তাই নয়। প্রকৃতির সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে আমাদের এই আরোর ইচ্ছাকে দীেড় করাইতে গেলেই । পরম্পরের ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িতে হয়। যেটুকু আমার আছে তাহার চেয়ে বেশি লাইতে গেলেই যেটুকু তোমার আছে তাহার উপর হাত দিতে হয়। তখন, হয় গোপনে ছলনা নয় প্রকাশ্যে গায়ের SOs