পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের সঞ্চয় VyV9} পাইয়াছি, সেখানেই পদে পদে বিচ্ছেদ ও শৈথিল্যে প্রবেশ করিয়া সমন্ত ছারখার করিয়া দিতেছে। বাহিরের কোনো শত্রুর হােত হইতে নহে, কিন্তু অন্তরের এই শক্তিহীনতা শ্ৰীহীনতা হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করা, ইহাই আমাদের একটিমাত্র সমস্যা । যে নিয়ম মানুষের গলার হার তাহাকে পায়ের বেড়ি করিয়া পরিব না, এই কথা একদিন আমাদিগকে সমস্ত মনের সঙ্গে বলিতে হইবে । এই কথা স্পষ্ট করিয়া জানিতে হইবে যে, সত্যকে যেমন করিয়া হউক মানিতেই হইবে- কিন্তু সত্যকে যখন অন্তরের মধ্যে মানি তখনই তাহা আনন্দ, বাহিরে যখন মানি তখনই তাহা দুঃখ । অন্তরে সত্যকে মানিবার শক্তি যখন না থাকে তখনই বাহিরে তাহার শাসন প্রবল হইয়া উঠে । সেজন্য যেন বাহিরকেই ধিক্কার দিয়া নিজেকে অপরাধ হইতে নিকৃতি দিবার চেষ্টা না করি। क9 সমুদ্রের পালা শেষ হইল। শেষ দুই দিন প্রবল বেগে বাতাস উঠিল; তাহাতে সমুদ্রের আন্দোলনের সমতালে আমাদের আভ্যন্তরিক আলোড়ন চলিতে লাগিল । আমি ভাবিয়া দেখিলাম, ইহাতে সমুদ্রের অপরাধ নাই, কপ্তেনেরই দোষ। যেদিন পৌঁছবার কথা ছিল তাহার দুই দিন পরে ৈ পৌঁছিয়ছি। বরুণদেব নিশ্চয়ই এই দুর্বলন্তঃকরণ যাত্রটির জন্য ঠিকমত হিসাব করিয়া ঝড়-বাতাসের ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছিলেন- কিন্তু, মানুষের হিসাব ঠিক রহিল না । মার্সেলস হইতে এক দৌড়ে পারিসে আসিয়া এক দিনের মতো ইপি ছাড়িলাম। শরীর হইতে সমুদ্রের নিমক সাফ করিয়া ফেলিয়া ডাঙার হাতে আত্মসমৰ্পণ করিলাম। স্নানাহারের পর একটা মোটর-গাড়িতে চড়িয়া পারিসের রাস্তায় রাস্তায় একবার হুহু করিয়া ঘুরিয়া আসিলাম । বাহির হইতে দেখিলে মনে হয়, পারিস সমস্ত যুরোপের খেলাঘর। এখানে রঙ্গশালার প্রদীপ আর নেবে না। চারি দিকে আমোদ-আহলাদের বিরাট আয়োজন। মানুষকে খুশি করিবার জন্য সুন্দরী পারিস-নগরীর কতই সাজসজ্জা । এই কথাই কেবল মনে হয়, মানুষকে খুশি করাটা সহজে সারিবার (कांक 05ों का ! যখন পৃথিবীতে রাজাদের একাধিপত্যের দিন ছিল তখন প্রমোদের চূড়ান্ত ছিল কেবল রাজারই ঘরে । এখন সমস্ত মানুষ রাজা । এই সমগ্ৰ মানুষের বিলাসভবনটি কী প্ৰকাণ্ড ব্যাপার। ইহার জন্য কত দাস যে অহােরাত্র খাটিয়া মরিতেছে তাহার সীমা নাই । ইহার জন্য প্রত্যহ কত জাহাজ, কত রেলগাড়ি বোঝাই করিয়া পৃথিবীর কত দুৰ্গম দেশ হইতে উপকরণ আসিতেছে তাহার ঠিকানা কে Sir এই মানুষ-রাজার আমোদ এমন প্রকাণ্ড, এমন বিচিত্র হইয়া উঠিয়াছে যে, ইহাকে অলস বিলাসীর প্রমোদের সঙ্গে তুলনা করিতে প্ৰবৃত্তি হয় না। ইহা প্রবল চিত্তের প্রবল আমোদ ; যে সহজে সন্তুষ্ট হইতে চায় না। তাহাকে খুশি করিবার দুঃসাধ্য সাধন । বহু লোক ভোগ করিতে করিতে এবং বহু লোক ভোগ জোগাইতে জোগাইতে এই প্রমোদ-পারাবারের মধ্যে তলাইয়া মরিতেছে, কিন্তু তবুও মোটের উপরে ইহার ভিতর হইতে মানুষের যে একটা বিজয়ী শক্তির মূর্তি দেখা যাইতেছে তাহাকে অবজ্ঞা । कब्रिड अनेि नां । 疆 রবিবারের দিন ক্যালে হইতে সমুদ্রে পাড়ি দিয়া ডোভারে পৌছিলাম। সেখানে ইংরেজ যাত্রীর সঙ্গে যখন রেলগাড়িতে চড়িয়া বসিলাম তখন মনের মধ্যে ভারি একটি আরাম বোধ হইল। মনে হইল, আত্মীয়দের মধ্যে আসিয়াছি। ইংরেজের যে ভাবা জানি। মানুষের ভাষা যে আলোর মতো। এই ভাষা যত দূর ছড়ায় তত দূর মানুষের হৃদয় আপনি আপনাকে প্রকাশ করিয়া চলে। ইংরেজের ভাষা যখনই পাইয়াছি তখনই ইংরেজের মন পাইয়াছি। যাহা জানা যায় তাহাতেই আনন্দ । ফ্রান্সে