পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু, এমন সাধারণভাবে কোনো সম্প্রদায় সম্বন্ধে কোনো কথা বলা চলে না, তাহর প্রমাণ পাইয়াছি। এখানে আসিয়া একজন খৃস্টান পাদ্রির সহিত আমার আলাপ হইয়াছে যিনি পত্রির চেয়ে খৃস্টান বেশি।- ধর্ম ধ্যাহার মধ্যে ব্যবসায়িক মূর্তি ধরিয়া উগ্রীরূপে দেখা দেয় নাই, সমস্ত জীবনের সহিত সুসম্মিলিত হইয়া প্ৰকাশ পাইতেছে। এমন মানুষকে কেহ মনে করিতে পারে না যে “ইন আমাদের পক্ষের লোক নহেন, ইনি অন্য দলের । ইহাই অত্যন্ত অনুভব করি, ইনি মানুষ- ইনি সত্যকে মঙ্গলকে সকল মানুষের মধ্যে দেখিতে আনন্দ বোধ করেন- তাহা শ্বস্টানেরই বিশেষ সম্পত্তি মনে করিয়া ঈর্ষা করেন না। আরো আশ্চর্যের বিষয়, ইহার কর্মক্ষেত্র ভারতবর্ষে। সেখানে খৃস্টানের পক্ষে যথাৰ্থ শ্বস্টান হইবার মন্ত একটা বাধা আছে- কারণ, সেখানে তিনি রাজা । সেখানে রাষ্ট্রনীতি ধর্মনীতির সপত্নী । অনেক সময়ে তিনিই সুয়োরানী ; এইজন্য ভারতবর্থের পত্রি ভারতবাসীর সমগ্ৰ জীবনের সঙ্গে সমবেদনার যোগ রাখিতে পারেন না। একটা মন্ত জায়গায় আমাদের সঙ্গে তাহদের জাতীয় স্বার্থের সংঘাত আছে এবং এক জায়গায় তাহারা তাহদের শুরুর উপদেশ শিরোধাৰ্থ করিয়া শিরনত করিতে পারেন না। তিনি নম্ৰতা দ্বারা পৃথিবী জয় করিতে বলিয়াছেন, কিন্তু সেটা স্বৰ্গরাজ্যের নীতি । ইহারা মৰ্তরাজ্যের অধীশ্বর । আমি ধ্যাহার কথা বলিতেছি। ইনি রেভারেন্ড এডুস। ভারতবর্ধের লোকের কাছে ইহার পরিচয় আছে । তিনি আপনার মধ্যে যে ইংরেজ রাজা আছে তাহাকে একেবারে হার মানইয়াছেন এবং আমাদের আপনি হইবার পবিত্র অধিকার লাভ করিয়াছেন। খৃস্টানধর্ম যেখানে সমগ্র জীবনের সামগ্ৰী হইয়া উঠিয়াছে সেখানে যে কী মাধুর্য এবং উদারতা তাহা ইহার মধ্যে প্রত্যক্ষ দেখিতে পাওয়াকে আমি বিশেষ সৌভাগ্য বলিয়া গণ্য করি । ইনিই একদিন আমাকে বলিলেন, “দেশে ফিরিবার পূর্বে এখানকার গৃহস্থবাড়ি তোমাকে দেখিয়া যাইতে হইবে । শহরে তাহার অনেক রূপান্তর ঘটিয়াছে’- পিল্লীগ্রামে না গেলে তাহার ঠিক পরিচয় পাওয়া যায় না। ইহার একজন বন্ধু স্টাফোর্ডশিয়রে এক পল্লীতে পাদ্রির কাজ করিয়া থাকেন ; তঁহারই বাড়িতে এভুস সাহেব কিছুদিন আমাদের বাসের ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। হাওয়া খাইয়া আসিবার জন্য চঞ্চল হইয়া উঠে। আমাদের দেশে এমন অবারিতভাবে আমরা প্রকৃতির সঙ্গ পাই, সেখানে আকাশ এবং আলোক এমন প্রচুর রূপে আমাদের পক্ষে সুলভ যে, তাহার সঙ্গে যোগসাধনের জন্য বিশেষ ভাবে আমাদিগের কোনো আয়োজন করিতে হয় না। কিন্তু এখানে প্রকৃতিকে তাহার ঘোমটা খুলিয়া দেখিবার জন্য লোকের মনের ঔৎসুক্য কিছুতেই ঘুচিতে চায় না। ছুটির দিনে ইহান্না যেখানে একটু খোলা মােঠ আছে সেইখানেই দলে দলে চুটিয়া যায়- বড়ো দুটি পাইলেই শহর হইতে বাহির হইয়া পড়ে। এমনি করিয়া প্রকৃতি ইহাদিগকে চলাচলের মুখে রাখিয়াছে, ইহুদিগকে এক জায়গায় হির হইয়া বসিয়া থাকিতে দেয় না। দুটির ট্রেনগুলি একেবারে লোকে পরিপূর্ণ। বসিবার জায়গা পাওয়া যায় না। সেই শহরের উড়ন্ধু মানুষের বঁাকের সঙ্গে মিশিয়া বাহির হইয়া পড়িলাম। গম্য হানের স্টেশনে আমাদের নিমন্ত্রণকর্তা তাহার খোলা গাড়িটি লইয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন। গাড়িতে যখন চড়িলাম তখন আকাশে মেঘ। ছায়াছন্ন প্ৰভাতের আবরণে পঞ্জীপ্ৰকৃতি মানিমুখে দেখা দিল। অল্প কিছুদূর যাইতেই বৃষ্টি আরম্ভ হইল। বাড়িতে গিয়া যখন পৌছিলাম গৃহস্থামিনী ডাহার আগুন-জ্বালা বসিবার ঘরে লইয়া গেলেন। বাড়িটি পুরাতন পত্রিনিবাস নহে। ইহা নূতন তৈরি। গৃহসংলগ্ন ভূমিখণ্ডে বৃদ্ধ তরুশ্ৰেণী বহুদিনের ধারাবাহিক মানবজীবনের বিলুপ্ত স্মৃতিকে পল্লবপুঞ্জের অঙ্কুট ভাষায় মর্মরিত করিতেছে না। বাগানটি নূতন, বোধ হয় ইহরাই প্ৰস্তুত করিয়াছেন। ঘন সবুজ তৃণক্ষেত্রের ধারে ধারে বিচিত্র রঙের BB BD BDED DuDB BB DB BB DBDD DB DDB DLBL DDiDB ইংলন্ডে ফুলপারবের বেমান সরসতা ও প্রাচুর্য এমন তো আমি কোথাও দেখি নাই। এখানে মাটির