পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R রবীন্দ্র-রচনাবলী সেই অজানা গাইয়ে আপন ইচ্ছেমত রয়ে গেলেন কিছুদিন । কেউ প্রশ্নও করলে না। ভোরবেলা মশারি থেকে টেনে বের করে তার গান শুনতেম। নিয়মের শেখা যাদের ধাতে নেই, তাদের শখ অনিয়মের শেখায়। সকাল বেলায় সুর চলত বংশী হমারি রে” । তার পরে যখন আমার কিছু বয়েস হয়েছে তখন বাড়িতে খুব বড়ো ওস্তাদ এসে বসলেন যদুভট্ট। একটা মন্ত ভুল করলেন, জেদ ধরলেন আমাকে গান শেখাবেনই ; সেইজন্যে গান শেখাই হল না। কিছু কিছু সংগ্রহ করেছিলুম। লুকিয়ে-চুরিয়ে- ভালো লাগল কাফি সুরে রুম ঝুম বরখে আজু বান্দরওয়া, রয়ে গেল। আজ পর্যন্ত আমার বর্ষার গানের সঙ্গে দল বেঁধে । মুশকিল হল, এই সময়ে আর-এক অতিথি হাজির হল কিছু না বলে কয়ে । বাঘ-মারা বলে তার খ্যাতি । বাঙালি বাঘ মারে এ কথাটা সেদিন শোনােত খুব অদ্ভুত, কাজেই বেশির ভাগ সময় আটকা পড়ে গেলুম তারই ঘরে । যে বাঘের কবলে পড়েছিলেন বলে আমাদের বুকে চমক লাগিয়েছিলেন সে বাঘের মুখ থেকে তিনি কামড় পান নি, কামড়ের গল্পটা আন্দাজ করে নিয়েছিলেন মিউজিয়মে মরা বাঘের স্থা থেকে- তখন সে কথা ভাবি নি, এখন সেটা পষ্ট বুঝতে পারছি। তবু তখনকার মতো ঐ বীরপুরুষের জন্য ঘন ঘন পান-তামাকের জোগাড় করতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। দূর থেকে কানে পীেছত কানাড়ার আলাপ | এই তো গেল। গান। সেজদাদার হাতে আমার অন্য বিদ্যের যে গোড়াপত্তন হয়েছিল সেও খুব ফলাও রকমের । বিশেষ কিছু ফল হয় নি, সে স্বভাবদোষে । আমার মতো মানুষকে মনে রেখেই జ్ఞాణా সেন বলেছিলেন, মন, তুমি কৃষিকাজ বোঝে না।” কোনোদিন আবাদের কাজ করা হয় চাষের আঁচড় কাটা হয়েছিল কোন কোন খেতে তার খবরটা দেওয়া যাক । অন্ধকার থাকতেই বিছানা থেকে উঠি, কুস্তির সাজ করি, শীতের দিনে শিরশির করে গায়ে কাটা দিয়ে উঠতে থাকে। শহরে এক ডাকসাইটে পালোয়ান ছিল, কানা পালোয়ান, সে আমাদের কুস্তি লড়াত। দালানঘরের উত্তর দিকে একটা ফাকা জমি, তাকে বলা হয় গোলাবাড়ি। নাম শুনে বোঝা যায়, শহর একদিন পাড়াগাটাকে আগাগোড়া চাপা দিয়ে বসে নি, কিছু কিছু ফাক ছিল। শহুরে সভ্যতার শুরুতে আমাদের গোলাবাড়ি গোলা ভরে বছরের ধান জমা করে রাখত, খাস জমির রায়তরা দিত তাদের ধানের ভাগ। এই পাচিল ঘেঁষে ছিল কুস্তির চালাঘর। এক হাত আন্দাজ খুঁড়ে মাটি আলগা করে তাতে এক মোন সরষের তেল ঢেলে জমি তৈরি হয়েছিল । সেখানে পালোয়ানের সঙ্গে আমার প্যাচ কন্যা ছিল ছেলেখেলা মাত্র । খুব খানিকটা মাটি মাখামাখি করে শেষকালে গায়ে একটা জামা চড়িয়ে চলে আসতুম। সকালবেলায় রোজ এত করে মাটি ঘেঁটে আসা ভালো লগত না মায়ের, তঁর ভয় হত ছেলের গায়ের রঙ মেটে হয়ে যায় পাছে । তার ফল হয়েছিল ছুটির দিনে তিনি লেগে যেতেন শোধন করতে । এখনকার কালের শৌখিন গিরিরা রঙ সাফ করবার সরঞ্জাম কীেটোতে করে কিনে আনেন বিলিতি দোকান থেকে, তখন তারা মলম বানাতেন নিজের হাতে । তাতে ছিল বাদাম-বাটা, সর, কমললেবুর খোসা, আরো কত কী- যদি জানতুম আর মনে থাকত। তবে বেগম-বিলাস নাম দিয়ে ব্যাবসা করলে সন্দেশের দোকানের চেয়ে কম আয় হত না । রবিবার দিন সকালে বারান্দায় বসিয়ে দালন-মলিন চলতে থাকত, অস্থির হয়ে উঠত মন ছুটির জন্যে। এ দিকে ইস্কুলের ছেলেদের মধ্যে একটা গুজব চলে আসছে যে, জন্মমাত্র আমাদের বাড়িতে শিশুদের ডুবিয়ে দেওয়া হয় মদের মধ্যে, তাতেই রঙটাতে সাহেব জেল্পা লাগে । কুক্তির আখড়া থেকে ফিরে এসে দেখি মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্র বসে আছেন মানুষের হাড় চেনাবার বিদ্যে শেখাবার জন্যে। দেয়ালে ঝুলছে আন্ত একটা কঙ্কাল। রাত্রে আমাদের শোবার ঘরের দেয়ালে এটা কুলত, হাওয়ায় নাড়া খেলে হাড়গুলো উঠত। খটখট করে। তাদের নড়াচাড়া করে করে LLL LT CT BD DBDB BBB DBBSDD DDD DD DLLL