পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেবেল ԳՀԳ এমনি কমজোরি। মাঠজোড়া ফুটবল খেলার লাফঝাম্প তখনো ছিল সমুদ্রপারে। এমনি করে একই মাপের দিনগুলো শুকনো খুঁটির বেড়া পুঁতে চলেছিল আমাকে পাকে পাকে ঘিরে। এমন সময় একদিন বাজল সানাই বারোয়ী সুরে। বাড়িতে এল নতুন বউ’, কচি শামলা হাতে সরু সোনার চুড়ি। পলক ফেলতেই ফাক হয়ে গেল বেড়া, দেখা দিল চেনাশোনার বাহির সীমানা থেকে মায়াবী দেশের নতুন মানুষ । দূরে দূরে ঘুরে বেড়াই, সাহস হয় না। কাছে আসতে। ও এসে বসেছে আদরের আসনে, আমি যে হেলাফেলার ছেলেমানুষ । দুই মহলে বাড়ি তখন ভাগ করা। পুরুষরা থাকে বাইরে, মেয়েরা ভিতর-কোঠায়। নবাবি কায়দা তখনো চলে আসছে। মনে আছে দিদিৰ বেড়াচ্ছিলেন ছাদের উপর নতুন বউকে পাশে নিয়ে, মনের কথা বলাবলি চলছিল । আমি কাছে যাবার চেষ্টা করতেই এক ধমক ৷ এ পাড়া যে ছেলেদের দাগকাটা গণ্ডির বাইরের। আবার শুকনো মুখ করে ফিরতে হবে সেই ছাৎলাপড়া পুরোনো দিনের আড়ালে । হঠাৎ দূর পাহাড় থেকে বর্ষার জল নেমে সাবেক বঁধের তলা খইয়ে দেয়, এবার তাই ঘটল । বাড়িতে নতুন আইন চালালেন কত্রী । বউঠাকরুনের জায়গা হল বাড়ি-ভিতরের ছাদের লাগাও ঘরে । সেই ছাদে তারই হল পুরো দখল । পুতুলের বিয়েতে ভোজের পাতা পড়ত সেইখানে। নেমন্তল্পের দিনে প্রধান ব্যক্তি হয়ে উঠত এই ছেলেমানুষ । বউঠাকরুন রাধতে পারতেন ভালো, খাওয়াতে ভালোবাসতেন, এই খাওয়াবার শখ মেটাতে আমাকে হাজির পেতেন। ইস্কুল থেকে ফিরে এলেই অল্প একটু লঙ্কার আভাস দিয়ে, সেদিন আর কথা ছিল না। মাঝে মাঝে যখন আত্মীয়-বাড়িতে যেতেন, ঘরের সামনে তার চটিজুতোজোড়া দেখতে পেতুম না, তখন রাগ করে ঘরের থেকে একটা-কোনো দামি জিনিস লুকিয়ে রেখে ঝগড়ার পত্তন করতুম। বলতে হত, “তুমি গেলে তোমার ঘর সামলাবে কে । আমি কি চৌকিদার।” তিনি রাগ দেখিয়ে বলতেন, “তোমাকে আর ঘর সামলাতে হবে না, নিজের হাত সামলিয়ো ।” এ কালের মেয়েদের হাসি পাবে, তারা বলবেন, নিজের ছাড়া সংসারে কি পরের দেওর ছিল না। কোনোখানে । কথাটা মানি । এখনকার কালের বয়স সকল দিকেই তখনকার থেকে হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তখন বড়ো-ছোটাে সবাই ছিল ছেলেমানুষ । এইবার আমার নির্জন বেদুয়িনি। ছাদে শুরু হল আর-এক পালা- এল মানুষের সঙ্গ, মানুষের স্নেহ । সেই পালা জমিয়ে দিলেন আমার জ্যোতিদাদাত । SO ছাদের রাজ্যে নতুন হাওয়া বইল, নামিল নতুন ঋতু । তখন পিতৃদেব জোড়ার্সাকোয় বাস ছেড়েছিলেন । জ্যোতিদাদা এসে বসলেন বাইরের তেতালার ঘরে । আমি একটু জায়গা নিলুম তারই একটি কোণে । অন্দরমহলের পর্দা রইল না। আজ এ কথা নতুন ঠেকবে না, কিন্তু তখন এত নতুন ছিল যে মেপে দেখলে তার থই পাওয়া যায় না। তারও অনেক কাল আগে, আমি তখন শিশু, মেজদাদা’ সিভিলিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছেন। বোম্বাইয়ে প্রথম তার কাজে যোগ দিতে যাবার সময় বাইরের লোকেদের ১ কাদম্বরী দেবী, ক্টোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী ২ “ছোড়িদিদি বর্ণকুমারী দেবী ৩ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ৪ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর