পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেবেল AVSN) তখন বঙ্গদর্শনের’’ ঘুম লেগেছে; সূর্যমুখী আর কুন্দনন্দিনী আপনি লোকের মতো আনাগোনা করছে। ঘরে ঘরে । কী হল কী হবে, দেশসুদ্ধ সবার এই ভাবনা । বঙ্গদর্শন এলে পাড়ায় দুপুরবেলায় কারো ঘুম থাকত না। আমার সুবিধে ছিল, কড়াকড়ি করবার দরকার হত না ; কেননা, আমার একটা গুণ ছিল, আমি ভালো পড়ে শোনাতে পারতুম। আপন মনে পড়ার চেয়ে আমার পড়া শুনতে বউঠাকরুন ভালোবাসতেন। তখন বিজলি পাখা ছিল না, পড়তে পড়তে বউঠাকরুনের হাতপাখার হাওয়ার একটা ভাগ আমি আদায় করে নিতুম। SV) মাঝে মাঝে জ্যোতিদাদা যেতেন। হাওয়া বদল করতে গঙ্গার ধারের বাগানে । বিলিতি সওদাগরির ছোওয়া লেগে গঙ্গার ধার তখনো জাত খোওয়ায় নি। মুষড়ে যায় নি। তার দুই ধারে পাখির বাসা, আকাশের আলোয় লোহার কলের শুড়গুলো ফুয়ে দেয় নি কালো নিশ্বাস। গঙ্গার ধারের প্রথম যে বাসা আমার মনে পড়ে, ছোটাে সে দোতলা বাড়ি। নতুন বর্ষা নেমেছে। মেঘের ছায়া ভেসে চলেছে স্রোতের উপর ঢেউ খেলিয়ে, মেঘের ছায়া কালো হয়ে ঘনিয়ে রয়েছে ও পারে বনের মাথায় । অনেকবার এইরকম দিনে নিজে গান তৈরি করেছি, সেদিন তা হল না। বিদ্যাপতির পদটি জেগে উঠল আমার মনে, “এ ভরা বােদর মাহ ভাদর, শূন্য মন্দির মোর। নিজের সূত্র দিয়ে ঢালাই করে রাগিণীর ছাপ মেরে তাকে নিজের করে নিলুম। গঙ্গার ধারে সেই সুর দিয়ে মিনে-করা এই বাদল-দিন আজও রয়ে গেছে আমার বর্ষাগানের সিন্ধুকটাতে । মনে পড়ে, থেকে থেকে বাতাসের ঝাপটা লাগছে। গাছগুলোর মাথার উপর, বুটােপুটি বেধে গেছে ডালে-পালায়, ডিঙিনীেকাগুলো সাদা পাল তুলে হাওয়ার মুখে ঝুকে পড়ে ছুটছে, ঢেউগুলো বঁটাপ দিয়ে দিয়ে কাপ বাপ শব্দে পড়ছে ঘাটের উপর। বউঠাকরুন ফিরে এলেন ; গান শোনালুম তাকে ; ভালো লাগল বলেন নি, চুপ করে শুনলেন। তখন আমার বয়স হবে যোলো কি সতেরো। যা-তা তর্ক নিয়ে কথা-কাটাকাটি তখনো চলে, কিন্তু বঁজ কমে গিয়েছে। তার কিছুদিন পরে বাসা বদল করা হল মোরান সাহেবের বাগানে। সেটা রাজবাড়ি বললেই হয়। রঙিন কাচের জানলা দেওয়া উচুনিচু ঘর, মাৰ্বল পাথরে বাধা মেজে, ধাপে ধাপে গঙ্গার উপর থেকেই সিঁড়ি উঠেছে লম্বা বারান্দায়। ঐখানে রাত জাগাবার ঘোর লগত আমার মনে, সেই সবরমতী নদীর ধারের পায়চারির সঙ্গে এখানকার পায়চারির তাল মেলানো চলত। সে বাগান আজ আর নেই, লোহার দাঁত কড়িমড়িয়ে তাকে গিলে ফেলেছে ডাণ্ডির কারখানা। ঐ মোরান-বাগানের কথায় মনে পড়ে এক-একদিন রান্নার আয়োজন বকুলগাছতলায়। সে রান্নায় মসলা বেশি ছিল না, ছিল হাতের গুণ। মনে পড়ে পাইতের সময় বউঠাকরুন আমাদের দুই ভাইয়ের হবিন্যান্ন রোধে দিতেন, তাতে পড়ত গাওয়া ঘি। ঐ তিন দিন তার স্বাদে, তার গন্ধে, মুগ্ধ করে রেখেছিল লোভীদের । আমার একটা বড়ো মুশকিল ছিল, শরীরটাকে সহজে রোগে ধরত না। বাড়ির আর আর যে-সব, ছেলে রোগে পড়তে জানত তারা পেত। তার হাতের সেবা । তারা শুধু যে তার সেবা পেত তা নয়, তার সময় জুড়ে বসত। আমার ভাগ বেত কমে । সেদিনকার সেই তেতালার দিন মিলিয়ে গেলষ্ঠাকে সঙ্গে নিয়ে। তার পরে আমার এল তেতালার বসতি, আগেকার অঙ্গে এর ঠিক জোড়-লাগানো চলে না । > eNy RMN y AAA [ R fè yra ) DD DDDBDB SBBD BBB LLiDS Du LKBBS BG GLL BBrDSDD DDLL