পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা OS শিবচরণ । তা হােক-না কালের গতি, অসম্ভব কখনো সম্ভব হতে পারে না । একটু ভেবেই দখো-না, যে ছোড়া পূর্বে একবারও বিবাহ করে নি। সে স্ত্রী চিনবে কী করে ? পাট না চিনলে পাটের লালি করা যায় না, আর স্ত্রীলোক কি পাটের চেয়ে সিধে জিনিস ? আজ পয়ত্ৰিশ বৎসর হল আমি দাইয়ের মাকে বিবাহ করেছি, তার থেকে পাচটা বৎসর বাদ দাও, তিনি গত হয়েছেন সে আজ বছর চেকের কথা হবে, যা হােক তিরিশটা বৎসর তাকে নিয়ে চালিয়ে এসেছি, আমি আমার ছেলের বউ ছন্দ করতে পারব না। আর সে ছোড়া ভূমিষ্ঠ হয়েই আমার চেয়ে পেকে উঠল ? তবে যদি তোমার ময়ের কোনো ধনুৰ্ভঙ্গ পাণ থাকে, আমার গদাইকে যাচিয়ে নিতে চান, সে আলাদা কথা । নিবারণ । নাঃ, আমার মেয়ে কোনো আপত্তিই করবে না, তাকে যা বলব। সে তাই শুনবে । আর-একটি কথা তোমাকে বলা উচিত । আমার মেয়েটির কিছু বয়স হয়েছে। শিবচরণ । আমিও তাই চাই । ঘরে যদি গিন্নি থাকতেন তা হলে বউমা ছোটো হলে ক্ষতি ছিল না । এখন এই বুড়োটাকে যত্ন করে আর ছেলেটাকে কড়া শাসনে রাখতে পারে, এমন একটি মেয়ে না হলে সংসারটি গেল । নিবারণ । তা হলে তোমার একটি অভিভাবকের নিতান্ত দরকার দেখছি। শিবচরণ । হা ভাই, মা ইন্দুকে বোলো আমার গদাইয়ের ঘরে এলে এই বুড়ো নাবালকটিকে প্ৰতিপালনের ভার তাকেই নিতে হবে । তখন দেখব। তিনি কেমন মা । , নিবারণ। তা ইন্দুর সে অভ্যাস আছে। বহুকাল একটি আস্ত বুড়ো বাপ তারই হাতে পড়েছে। দেখতেই তো পােচ্ছ, ভাই, খাইয়ে-দাইয়ে বেশ একরকম ভালো অবস্থাতেই রেখেছে। শিবচরণ । তাই তো । তার হাতের কাজটিকে দেখে তারিফ করতে হয় । যা হােক, আজ তবে আসি ৷ গুটিদুয়েক রোগী এখনো মরতে বাকি আছে। ইন্দুমতীর প্রবেশ ইন্দু । ও বুড়োটি কে এসেছিল বাবা ? নিবারণ। কেন মা “বুড়ো বুড়ো” করছিস— তোর বাবাও তো বুড়ো । ইন্দু। (নিবারণের পাকা চুলের মধ্যে হাত বুলাইয়া) তুমি তো আমাদের আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো, তোমার সঙ্গে কার তুলনা ? কিন্তু ওকে তো কখনাে দেখি নি। নিবারণ । ওর সঙ্গে ক্রমে খুবই পরিচয় হবেইন্দু। আমি খুব পরিচয় করতে চাই নে । - নিবারণ । তোর এ বাবা পুরোনো ঝরঝরে হয়ে এসেছে, একবার বাবা বদল করে দেখবি নে ইন্দু ? ইন্দু। তবে আমি চললুম। নিবারণ। না না, শোেন-না। তোরই যেন বাবার দরকার নেই, আমার একটি বাপের পদ খালি আছে- তাই আমি একটি সন্ধান করে বের করেছি। মা । ইন্দু। তুমি কী বকছ বুঝতে পারছি নে । নিবারণ। নাঃ, তুমি আমার তেমনি হাবা মেয়ে কিনা। সব বুঝতে পেরেছিস, কেবল দুষ্টুমি ! [ প্ৰস্থান ভূত্যের প্রবেশ ভূত্য । তিনটি বাবু এসেছে দেখা করতে । ইন্দু। তাদের যেতে বলে দে ।। সকাল থেকে কেবলই বাবু আসছে। নিবারণ । না না, ভদ্রলোক এসেছে, দেখা করা চাই । ইন্দু । তোমার যে নাবার সময় হয়েছে। নিবারণ । একবার শুনে নিই। কী জন্যে এসেছেন, বেশি দেরি হবে না ।