পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা Ν. Ο Οζ ইন্দু। তুই ভাই, কথায় কথায় বড়ো বেশি গভীর হয়ে পড়িস। বিনোদের কাছে যদি আমনি করে থাকিস তা হলে সে তোর সঙ্গে প্ৰেমালাপ করতে সাহস করবে না । কমল । সেজন্য নাহয় তুই নিযুক্ত থাকিস । ইন্দু। তা হলে যে তোর গভীৰ্য আরো সাতগুণ বেড়ে যাবে। দেখ ভাই, তুই তো একটা পোষা কবি হাতে পেলি, এবার তাকে দিয়ে তোর নিজের নামে কবিতা লিখিয়ে নিস, যতক্ষণ পছন্দ না হয় ছাডিস নে । নিজের নামে কবিতা দেখলে কিরকম লাগে, কে জানে । কমল । মনে হয়, আমার নাম করে আর কাকে লিখছে । তোর যদি শখ থাকে। আমি তোর নামে একটা লিখিয়ে নেব । ইন্দু। তুই কেন, সে আমি নিজে করে নেব । আমাদের যে সম্পর্ক আমি যে কান ধরে লিখিয়ে নিতে পারি। তুমি তো তা পারবে না । আপাতত ছবিটা তোর কাছে রােখ। কমল । ছবিতে আমার দরকার নেই । ইন্দু। নেই দরকার ? তবে ওটা আমার রইল ? সর্বস্বত্ব ত্যাগ করলে ? কমল । কেন বল দেখি । এত উৎসাহ কেন তোর ? ইন্দু। সেদিন নাম খুঁজছিলুম, রূপও তো খুঁজতে হবে । এই ছবির মধ্যে যদি নামে রূপে মিল হয়ে যায় ? কমল । অর্থাৎ ? ইন্দু । অর্থাৎ (গদাইয়ের ছবি দেখাইয়া) এর নাম যদি গদাই না হয়, যদি কুমুদ কিংবা পরিমল, কিংবা কিশলয় কিংবা কোকানদ, কিংবা কপিঞ্জল হয়ে দাড়ায় ? কমল । তা হলেই চুকে যাবে ? ইন্দু। একেবারে চুকে না যাক, মিউজিয়মে একটা প্রথম স্পেসিমেন পাওয়া যাবে তো ? কমল । আচ্ছা, তোর স্পেসিমেন জমা কর— আপাতত তোর চুল বেঁধে দিই গে চল । দ্বিতীয় অঙ্ক প্রথম দৃশ্য চন্দ্রের অন্তঃপুর ক্ষান্তমণি ও ইন্দুমতী ইন্দু । তোমার স্বামী আদর করেই ঠাট্টা করে, সে কি আর সত্যি ! ক্ষান্তমণি। না ভাই, ঠাট্টা কি সত্যি ঠিক বুঝতে পারি নে। আর সত্যি হবারই বা আটক কী ? নিজে তো জানি নিজের গুণ কত । ইন্দু। তোমার স্বামীর আবার তেমনি সব বন্ধু জুটেছে, তারাই পাঁচ জনে পাচ কথা বলে তার মন উতলা করে দেয় । বিশেষ সেদিন বিনোদবাবু আর তোমার স্বামীর সঙ্গে আর-একটি কে বাবু আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল, তাকে দেখে আমার আদবে ভালো লাগল না । লোকটা কে ভাই ? ক্ষান্তমণি । কী জানি ভাই ! বন্ধু একটি-আধটি তো নয়, সবগুলোকে আবার চিনিও নে । ইন্দু। এই দেখ-না তার ছবি । (কাপড় খুঁজিয়া) এ কী হল ! এই যাঃ, কোথায় ফেললুম ! ক্ষান্তমণি । কী ফেললি ?