পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা So a ক্ষান্তমণি । দেখ ভাই ইন্দু, তোকে সত্যি করে বলি। তোরা তো আমাকে বঙ্কিমবাবুর বইগুলো পড়ালি, ভেবেছিলুম একটুও বুঝতে পারব না— কিন্তু বেশ লাগছে। ইন্দু। এই দেখ, মুশকিলে ফেললি তো । তোর মনটা এখন আয়েষ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু ওজনমত জগৎ সিংহ পাবি কোথা ? ক্ষান্তমণি । তা বলিস নে ইন্দু। আমি যেরকম মাপের আয়েষা সেরকম মাপের জগৎসিংহও ঘরে মজুদ আছে । কিন্তু ইন্দু। চাল-চলনটা দোরস্ত হয় নি। মনে মনে আয়েষ্যা হয়েছ, ব্যবহারে আয়েষাগিরি করে উঠতে পারছি না । - ক্ষান্তমণি । কতকটা তাই বটে । ইন্দু। প্র্যাকটিকাল এডুকেশনটা হয় নি। আর-কি। কিছুদিন প্র্যাকটিস চাই । ক্ষান্তমণি । তোর ইংরিজি আমি বুঝতে পারি নে, ভাই । ইন্দু। আমার বক্তব্য হচ্ছে, বঙ্কিমের কাছে মন্ত্র পেয়েছ, আমার কাছ থেকে তার সাধনা পেতে হবে । ক্ষান্তমণি । তোমার কাছ থেকে ? ইন্দু। আমার কাছ থেকে হলেই নিরাপদ হবে । মনুসংহিতার সঙ্গে বঙ্কিমবাবুর মিল রক্ষা করেই আমি তোমাকে শিক্ষা দেব । আজ এখনি হােক হাতে-খড়ি । আচ্ছা, এক কাজ করা যাক । মনে করো, আমি চন্দ্ৰবাবু, আপিস থেকে ফিরে এসেছি, খিদেয় প্ৰাণ বেরিয়ে যাচ্ছে- তার পর তুমি কী করবে: বলো দেখি । রোসো ভাই, চন্দ্ৰবাবুর ঐ চাপকন আর শামলাটা পরে নিই, নইলে আমাকে চন্দ্ৰবাবু মনে হবে না । আপিসের বেশ পরিধান ও ক্ষান্তর উচ্চহাস্য ক্ষান্তমণি, স্বামীর প্রতি পরিহাস অত্যন্ত গহিত কাৰ্য । পতিব্ৰতা রমণী কদাপি উচ্চহাস্য করেন না । কোনো কারণে হাস্য অনিবাৰ্য হইলে সাধবী স্ত্রী প্ৰথমে স্বামীর অনুমতি লইয়া পরে বদনে অঞ্চল দিয়া নয়ন নত করিয়া ঈষৎ স্মিতহাস্য হাসিতে পারেন । এই গেল মনুসংহিতা, এবার এসো নবীন কবির গীতিকাব্যে। আমি আপিস থেকে ফিরে এসেছি, এখন তোমার কী কর্তব্য বলো । ক্ষান্তমণি । প্ৰথমে তোমার চাপিকানটি এবং শামলাটি খুলে দিই, তার পরে জলখাবারইন্দু। নাঃ, তোমার কিছু শিক্ষা হয় নি । আচ্ছা, তুমি তবে চন্দ্রবাবু সাজো, আমি তোমার স্ত্রী সাজিছি ক্ষান্তমণি । না ভাই, সে আমি পারব নাইন্দু । আচ্ছা, তবে আর-একবার চেষ্টা করো । বড়োবাউ, চাপিকানটা খুলে আমার ধুতি-চাদরটা এনে te Qi ক্ষান্তমণি । (উঠিয়া) এই দিচ্ছি। ইন্দু। ও কী করছ ! তুমি ঐখানে হাতের উপর মাথা রেখে বসে থাকে- বলে, “নাথ, আজি সুবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে। আজ আর কিছুতে মন লাগছে না, ইচ্ছে করছে পাধি হয়ে উড়ে ক্ষান্তমণি । (যথাশিক্ষিত) নাথ, আজি সন্ধেবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে ! আজি আর কিছুতে মন লাগছে না, ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে যাই । ইন্দু। কোথায় উড়ে যাবে ? তার আগে আমায় লুচি দিয়ে যাও, ভারি খিদে পেয়েছেক্ষান্তমণি । (তাড়াতাড়ি উঠিয়া) এই দিচ্ছিইন্দু। এই দেখো, সব মাটি করলে। অস্থানে মনুসংহিতা এসে পড়ে। তুমি যেমন ছিলে তেমনি থাকো, বলো, ‘লুচি ? কই, লুচি তো আজ ভাজি নি । মনে ছিল না । আচ্ছা, লুচি কাল হবে এখন ।