পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NRS SR রবীন্দ্র-রচনাবলী বিনোদ । সাজটিও যথোপযুক্ত হয়েছে। ইংরেজ রাজাদের যে ফুলগুলো ছিল তাদেরও টুপিটা এই টোপরের মতো । চন্দ্ৰকান্ত । সেজের বাতি নিবিয়ে দেবার ঠোঙাগুলোরও ঐরকম চেহারা । এই পঁচিশটা বৎসরের যত-কিছু শিক্ষাদীক্ষা, যতী-কিছু আশা-আকাঙক্ষণ— ভারতের ঐক্য, বাণিজ্যের উন্নতি, সমাজের সংস্কার, সাহেবের ছেলে পিটােনো প্রভৃতি যে-সকল উচু উচু ভাবের পলতে মগজের ঘি খেয়ে খুব উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠেছিল সেগুলো ঐ টোপর চাপা পড়ে একদম নিবে যাবে। শ্ৰীপতি । চন্দরদী, তুমি তো বিয়ে করেছ, বলো-না কী করতে হবে । হা করে সবাই মিলে দাড়িয়ে থাকলে কি “বিয়ে-বিয়ে মনে হয় ? চন্দ্ৰকান্ত । সে তো ভাই, স্টোন-এজ, আইস-এজের কথা । সে যুগে না ছিল পূর্বরাগের কোমলতা, না ছিল অপূর্ব অনুরাগের উত্তাপ । কেবল বিবাহের যিনি আদ্যশক্তি সেই মহামায়াই আজও আছেন অন্তরে-বাহিরে, আর সমস্তই ভুলেছি। ভূপতি । শ্যালীর হাতের কানমলা ? চন্দ্ৰকান্ত । হায় পোড়াকপাল ! শ্যালী থাকলে তবু বিবাহের সংকীর্ণতা অনেকটা কাটে, ওরই মধ্যে একটুখানি পাশ ফেরবার জায়গা পাওয়া যায়-- শ্বশুরমশায় একেবারে কড়ায় গণ্ডায় ওজন করে দিয়েছেন, সিকি পয়সার ফাউ দেন নি । বিনোদ । বাস্তবিক, কর পছন্দ করবার সময় যেমন জিজ্ঞাসা করে কটি পাস আছে, কনে পছন্দ করবার সময় তেমনি খোজা নেওয়া উচিত কটি ভগিনী আছে । চন্দ্ৰকান্ত । চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে । ঠিক বিয়ের দিনটিতে বুঝি চৈতন্য হল ? নিতান্ত বঞ্চিত হবে না ; তোমার কপালে একটি আছে, নামটি হচ্ছে ইন্দুমতী । গদাই । (স্বগত) ধাকে আমার স্কন্ডের উপর উদ্যত করা হয়েছে- সর্বনাশ আর-কি ! শ্ৰীপতি । বিনোদ, একটুখানি বোসে । বিনোদ । না ভাই, তা হলে আর উঠতে পারব না, মনটা দেহের উপর যেন পাথরের কাগজ চাপ হয়ে চেপে রাখবো । ভূপতি । এসো। তবে, বর-কনের উদ্দেশে শ্ৰী চিয়ারুস দিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক । হিপ হিপ হুরেচন্দ্ৰকান্ত । দেখো, আমার প্ৰিয়বন্ধুর বিয়েতে আমি কখনোই এরকম অনাচার হতে দেব না ; শুভকর্মে অমান বিদেশী শেয়াল-ডাক ডেকো না । তার চেয়ে সবাই মিলে উলু দেবার চেষ্টা করে—না । নলিনাক্ষ । এই তবে আমাদের অবিৰাহিত বন্ধুত্বের শেষ মিলন । জীবনস্রোতে তুমি এক দিকে যাবে, আমি এক দিকে যাব । প্রার্থনা করি তুমি সুখে থাকে । কিন্তু মুহুর্তের জন্যে ভেবে দেখো বিনু, চন্দ্ৰকান্ত । বিনু, তুই বল, মা, আমি তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি। তা হলে কনকাঞ্জলিটা হয়ে যায় । শ্ৰীপতি । এইবার তবে উলু আরম্ভ হােক । ইন্দু ও ক্ষান্তমণির প্রবেশ ক্ষান্তমণি । শুনলি তো ভাই, আমার কর্তটির মধুর কথাগুলি ? ইন্দু। কেন ভাই, আমার তো মন্দ লাগে নি । ক্ষান্তমণি । তোর মন্দ লাগবে কেন ? তোর তো আর বাজে নি । যার বেজেছে সেই জানে ইন্দু। তুমি যে একেবারে ঠাট্টা সইতে পার না । তোমার স্বামী। কিন্তু ভাই তোমাকে সত্যি ভালোবাসে । দিনকতক বাপের বাড়ি গিয়ে বরং পরীক্ষা করে দেখে-না- ক্ষান্তমণি । তাই একবার ইচ্ছা করে, কিন্তু জানি থাকতে পারব না । তা যা হােক, এখন তোদের ওখানে যাই । ওরা তো বউবাজারের রাস্তা ঘুরে যাবে, সে এখনো ঢের দেরি আছে । [সকলে উলুর চেষ্টা ও প্রস্থান