পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী তৃতীয় অঙ্ক প্ৰথম দৃশ্য বাগবাজারের রাস্তা গদাই । আহা, এই বাড়িটা আমার শরীর থেকে আমার মনটুকুকে যেন শুষে নিচ্ছে, ব্লটিং যেমন কাগজ থেকে কালি শুষে নেয় । কিন্তু কোন দিকে সে থাকে এ পর্যন্ত কিছুই সন্ধান করতে পারলুম। না । ঐ যে পশ্চিমের জানলার ভিতর দিয়ে একটা সাদা কাপড়ের মতন যেন দেখা গেল না ? না, ও তো নয়, ও তো একজন দাসী দেখছি । ও কী করছে ? একটা ভিজে শাড়ি শুকুতে দিচ্ছে । বোধ হয় র্তারই শাড়ি । আহা, নাগাল পেলে একবার স্পর্শ করে নিতুম । তা হলে এতক্ষণে তার স্নান হল । পিঠের উপরে ভিজে চুল ফেলে সাফ কাপড়টি পরে এখন কী করছেন ! [এই বাড়ির চৌকাঠ পার হইতে ইহঁচট খাইয়া একজন বুড়ির কক্ষ হইতে তরকারির কুড়ি পড়িয়া গেল । ] বুড়ি । আমার নাম ঠাকুরদাসী, এই বাড়ির ঝি । গদাই । এই বাডির ঝি ! আহা, লাগে নি তো ? বুড়ি । না, কিছু লাগে নি । গদাই । আলুগুলো সব যে ছড়িয়ে পড়েছে। রোসো, কুড়িয়ে দিচ্ছি। তুমি বুঝি এই বাড়ির ঝি ! বুড়ি । ইহা বাবু। গদাই । চৌধুরীদের বাড়ির ঝি ? বুড়ি । ইহা গো, গঙ্গামাধব চৌধুরী । tগদাই । আহাহা, ভাড়াটা উলটে গিয়ে তেল যে সব গড়িয়ে গেছে । তোমার দিদি ঠাকরুন রাগ করবেন । বুড়ি । না, দিদিঠাকরুন কথাটি কবেন না, কিন্তু গিন্নি মাগদাই । কথাটি কবেন না । আহা ! (দীর্ঘনিশ্বাস) তা এক কাজ করে । এই টাকাটি দিচ্ছি, নাহয় বাজার থেকে তেল কিনে আনো, আমি ততক্ষণ তোমার তরকারি। আগলাচ্ছি । তোমার দিদি ঠাকরুন বুঝি কথাটি কবেন না, আঁ্যা ঠাকুরদাসী ? বুড়ি । তিনি বড়ো লক্ষ্মী ! গদাই । লক্ষ্মী ! আহা, তা তোমার দিদি ঠাকরুন কী খেতে ভালোবাসেন বলে দেখি । বুড়ি । ছাতাওয়ালা গলির মোড়ে ভরু ফুলুরিওয়ালা গরম গরম বেগনি ভেজে দেয়, তাই দিয়ে আমের আচার দিয়ে খেতে তার খুব শখ । গদাই । বটে ! তা এই নাও, ঠাকুরদাসী, একটাকার বেগনি কিনে আনো তো । বুড়ি । একটাকার বেগনি ! সে যে অনেক হবে । গদাই । তা হােক, নাহয় কিছু বেশিই হল । বুড়ি । তা আমি কিনে নাহয় আনিব পারে, তুমি এই দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকবে কতক্ষণ । গদাই । তাতে ক্ষতি নেই, ওটা আমার একটা শাখ । বুড়ি । দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকা ! গদাই । না, না, ঐ যে তোমার বেগনি- ঐ যে তুমি বললে না— বুড়ি । নাহয় দিদিঠাকরুনকে বেগনি খাওয়াব, তাই বলে কিগদাই । আমি এইরকম খাওয়াতে বড়ো ভালোবাসি, ওটা আমার একটা বাতিক বললেই হয় ।