পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা SSG বিশেষত গরম গরম বেগনি । বেগনির কুড়ি চক্ষে দেখে তবে নাড়ব । বুড়ি । তা হলে দাড়াও, দেরি করব না । মোড়ক হস্তে এক ব্যক্তির প্রবেশ ঐ ব্যক্তি । সরকারমশায় বুঝি ? গদাই । কেন বলো তো । ঐ ব্যক্তি । এই বাড়ির কোন মােঠাকরুন সাত জোড়া সিস্কের মোজা রিফু করতে আমাদের দোকানে পাঠিয়েছিলেন, সেগুলি এনেছি । গদাই । আঁ্যাঃ, পায়ের মোজা ! ঐ জন্যেই তো এতক্ষণ দাড়িয়ে আছি । দাও দাও । দরজি । দামটা নগদ চুকিয়ে দিতে হবে । গদাই । কত ? দরজি । আড়াই টাকা । গদাই । এই নিয়ে যাও । তোমার রেট তো খুব সস্তা হে ! [ দরজির প্রস্থান হায় হায়, আজি কী শুভক্ষণেই বেরিয়েছিলুম ! (বুকের কাছে চাপিয়া) সেই পা দুখানির অদৃশ্য চলন দিয়ে দলন দিয়ে এই মোজার ফাকগুলি ভরা । আহাহা, গা শিউরে উঠছে, কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে।-- ওগো শূন্য মোজামেলানো বড়ো শক্ত । এই সময়ে থাকত বিনন্দা !— আমার শূন্য হৃদয়ের মতো, ওগো শূন্য মোজা, অনুপস্থিত কোন দুটি চরণ সদাই করিতেছ। খোজা । কথা আসছে। কিন্তু ঘুলিয়ে যাচ্ছে— চলে গিয়েছ। সোজা । আইডিয়াটা ওরিজিনাল। তিনটে লাইন হল, সাত জোড়া মোজা আছে ; ঠিক সপ্তপদীর নম্বর । আরো চারটে লাইন চাই । (উপরিতলার বারান্দার দিকে চাহি++ ) অনুদ্দেশকে উদ্দেশ করে এই লাইনগুলি আবৃত্তি করতে ইচ্ছে করছে— যুরোপের টুবেডোরদের তো । ( আপন মনে) আমার শূন্য হৃদয়েব মতো, ওগো শূন্য মোজা, অনুপস্থিত কোন দুটি চরণ সদাই করিছ। খোজা ? ሇፅ কিন্তু আর তো মিল দেখছি নে, এক আছে “মুসলমানের রোজা’- মোজাকে বললে দোষ নেই যে ঈদের দিনে প্রতিপদের চাদ । না না, ওতে আমার লেখার ক্লাসিক্যাল গ্রেসটা চলে যাবে । তা ছাড়া দিন খারাপ, হয়তো সামান্য মোজার জন্যে শান্তিভঙ্গ হতেও পারে— ওটা থাক । নেপথ্যে । হিয়া রোখো । শিবচরণের প্রবেশ শিবচরণ। বেটার তবু ইশ নেই। দেখো-না, হা করে দাড়িয়ে আছে দেখো-না । যেন খিদে পেয়েছে, এই বাড়ির ইটকাঠিগুলো গিলে খাবে । ছোড়ার হল কী ! খাচার পাখির দিকে বেড়াল যেমন তাকিয়ে থাকে তেমনি করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। হতভাগা কলেজে যাবার নাম করে রোজ বুঝলামুসুফু দূর করে। (নিকটে আসিয়া) বাপু মেডিকেল কালেজটা কোনদিকে একবার য় দাও দেখি !