পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

শেষরক্ষা R) R গদাই । সেকেন্ডহ্যান্ড নিলেম থেকে সস্তায় কিনেছি, আপনার কাছ থেকে টাকা চাইতে ভয় করে । শিবচরণ। চাইলেই পেতিস কিনা ! ফিরিয়ে দে। ছি ছি!! ঐ নোংরা মোজাগুলো নিয়ে বেড়াচ্ছিস । কী জানি কোন ব্যামোর ছোয়াচ আছে। ওর মধ্যে— গদাই । আমারও সে ভয় আছে। বাবা, ছোয়াচ যে কোথায় কী থাকে কিছু বলবার জো নেই। এখনো ফিরিয়ে দিতে পারব, কালই নহয়- ] শিবচরণ । সেই ভালো । এই নে, তোকে দেড় টাকা দিচ্ছি- পাকপ্ৰণালী দু খণ্ড কিনে তাকে দিস। এখন গাড়িতে ওঠ । (সহিসের প্রতি) দেখ, একেবারে সেই পটলডাঙার কলেজে নিয়ে যাবি, কোথাও থামাবি নে । গদাই । (জন্নান্তিকে সহিসের প্রতি) মির্জাপুর চন্দ্ৰবাবুর বাসায় চল, তোদের এক টাকা বিকশিশ দেব, ছুটে চল । [ প্ৰস্থান শিবচরণ । আজ আর রুগি দেখা হল না । আমার সকাল বেলাটা মাটি করে দিলে । [ প্ৰস্থান দ্বিতীয় দৃশ্য চন্দ্ৰকাস্তের বাসা চন্দ্ৰকান্ত । নাঃ, এ আগাগোড়া কেবল ছেলেমানুষি করা হয়েছে । আমার এমন অনুতাপ হচ্ছে ! মনে হচ্ছে যেন আমিই এ সমস্ত কাণ্ডটি ঘটিয়েছি । ইদিকে এত কল্পনা, এত কবিতত্ত্ব, এত মাতামাতি, আর বিয়ের দু দিন না যেতে যেতেই কিছু আর মনে ধরছে না । গদাইয়ের প্রবেশ গদাই । কী হচ্ছে চন্দারদা ? চন্দ্ৰকান্ত । না। গদাই, তোরা আর বিয়েথাওয়া করিস নে । গদাই । কেন বলে দেখি । তোমার ঘাড়ে ম্যালথাসের ভূত চাপল নাকি ? : চন্দ্ৰকান্ত । এখনকার ছেলেরা তোরা মেয়েমানুষকে বিয়ে করবার যোগ্য নোস । তোরা কেবল লম্বাচওড়া কথা কবি আর কবিতা লিখবি, তাতে যে পৃথিবীর কী উপকার হবে ভগবান জানেন । গদাই । কবিতা লিখে পৃথিবীর কী উপকার হয় বলা শক্ত, কিন্তু এক-এক সময় নিজের কাজে লেগে যায় সন্দেহ নেই । যা হােক, এত রাগ কেন ? চন্দ্ৰকান্ত । শুনেছ তো সমস্তই ! আমাদের বিনুর তার স্ত্রীকে পছন্দ হচ্ছে না । গদাই । বাস্তবিক, এরকম গুরুতর ব্যাপার নিয়ে খেলা করাটা ভালো হয় নি । চন্দ্ৰকান্ত । বিনুটা যে এত অপদার্থ তা কি জানতুম ! একটা স্ত্রীলোককে ভালোবাসার ক্ষমতাটুকুও নেই । গদাই । আমি জানি, কবিতা লেখার চেয়েও সেটা সহজ কাজ । চন্দ্ৰকান্ত । আমি ওর মুখদর্শন করছি নে । গদাই । তুমি তাকে ছাড়লে সে যে নেহাত অধঃপাতে যাবে। চন্দ্ৰকান্ত । না, তার সঙ্গে কিছুতেই মিশছি নে, পায়ে এসে ধরে পড়লেও না । তুমি ঠিক বলেছিলে গদাই, আজকাল সবাই যাকে ভালোবাসা বলে সেটা একটা স্নায়ুর ব্যামো- হঠাৎ চিড়িক মেরে আসে, তার পরে ছেড়ে যেতেও তার সয় না । গদাই । সে-সব বিজ্ঞানশাস্ত্রের কথা পরে হবে, আপাতত আমার একটা কাজ করে দিতে হচ্ছে । চন্দ্ৰকান্ত । যে কাজ বল তাতেই রাজি আছি, কিন্তু ঘটকালি আর করছি নে । গদাই । ঐ ঘটকালিই করতে হবে ।