পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NING B রবীন্দ্র-রচনাবলী মন্ত্রীর প্রবেশ প্ৰতাপ । তুমি ঠিক সময়েই এসেছ । এই বৈরাগীকে এইখানেই ধরে রেখে দাও । ওকে মাধবপুরে যেতে দেওয়া হবে না । মন্ত্রী । মহারাজ প্ৰতাপ । কী । হুকুমটা তোমার মনের মতো হচ্ছে না বুঝি । উদয় । মহারাজ, বৈরাগীঠাকুর সাধুপুরুষ । প্ৰজারা । মহারাজ, এ আমাদের সহ্য হবে না । মহারাজ, অকল্যাণ হবে । ধনঞ্জয় । আমি বলছি, তোরা ফিরে যা । হুকুম হয়েছে। আমি দুদিন রাজার কাছে থাকিব, বেটাদের সেটা সহ্য হল না । প্ৰজারা । আমরা এইজন্যেই কি দরবার করতে এসেছিলুম ? আমরা যুবরাজকেও পাব না, তোমাকেও হারাব ? ধনঞ্জয় । দেখ, তোদের কথা শুনলে আমার গা জ্বালা করে । হারাবি কি রে বেটা । আমাকে তোদের গাঠে বেঁধে রেখেছিলি ? তোদের কাজ হয়ে গেছে, এখন পালা সব পালা । প্ৰজারা । মহারাজ, আমরা কি আমাদের যুবরাজকে পাব না । প্ৰতাপ । না । দ্বিতীয় দৃশ্য অন্তঃপুর সুরমা ও বিভা সুরমা ! বিভা, ভাই বিভা, তোর চোখে যদি জল দেখতুম তা হলে আমার মনটা যে খোলসা হত । তোর হয়ে যে আমার কঁদতে ইচ্ছা করে ভাই, সব কথাই কি এমনি করে চেপে রাখতে হয় । বিভা ৷ কোনো কথাই তো চাপা রইল না বউরানী । ভগবান তো লজা রাখলেন না । সুরমা । আমি কেবল এই কথাই ভাবি যে, জগতে সব দাহই জুড়িয়ে যায় । আজকের মতো এমন কপাল-পোড়া সকাল তো রোজ আসবে না। সংসার লজ্জা দিতেও যেমন, লজ্জা মিটিয়ে দিতেও তেমনি । সব ভাঙাচোরা জুড়ে আবার দেখতে দেখতে ঠিক হয়ে যায় । • বিভা ৷ ঠিক নাও যদি হয়ে যায়। তাতেই বা কী । যেটা হয় সেটা তো সইতেই হয় । সুরমা । শুনেছিস তো বিভা, মাধবপুর থেকে ধনঞ্জয় বৈরাগী এসেছেন । তার তো খুব নাম শুনেছি, বড়ো ইচ্ছা করে তার গান শুনি । গান শুনিবি বিভা ? ঐ দেখ, কেবল অতটুকু মাথা নাড়লে হবে না । লোক দিয়ে বলে পাঠিয়েছি, আজ যেন একবার মন্দিরে গান গাইতে আসেন, তা হলে আমরা উপরের ঘর থেকে শুনতে পাব ! ও কী, পালাচ্ছিস কোথায় ? বিভা ৷ দাদা আসছেন । সুরমা । তা, এলই বা দাদা । বিভা ৷ না, আমি যাই বউরানী । [ প্ৰস্থান সুরমা । আজ ওর দাদার কাছেও মুখ দেখাতে পারছে না । উদয়াদিত্যের প্রবেশ আজি ধনঞ্জয় বৈরাগীকে আমাদের মন্দিরে গান গাবার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি । উদয় । সে তো হবে না ।