পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিত্রাণ ՀԵ՞Տ) আসতে পারতুম— এতে আমার কপালে যা থাকে তাই হবে । রামমোহন। তবে শোন মা, সেই ময়ূরপংখি তোর জন্যে নয় । বিভা । নাই হল মোহন, দুঃখ কিসের । আমি হেঁটে চলে যাব । gi রামমোহন । যাবি কোথায় । সেখানে যে আজ আর-এক রানী আসছে। বিভা । আর-এক রানী ! রামমোহন । হা, আর-এক রানী । আজ মহারাজের বিবাহ । বিভা। । ওঃ- আজি বিবাহের লগ্ন ! রামমোহন। এক বিবাহের লগ্নে মহারাজ তোমাদের ঘরে গিয়েছিলেন- আজ কোন বিবাহের লগ্নে তুমি তার ঘরের সামনে এসে পৌছলে । আর, আমার এমন কপাল আজ। আমি বেঁচে আছি। চল মা, ফিরে চল, আর এক দণ্ড নয়— ঐ বাশি আমার কানে বিষ ঢালছে। ওরে, আর-একদিন কী বাশি শুনেছিলুম, সেই কথা মনে পড়ছে। চল চল, ফিরে চল। অমন চুপ করে বসে রইলে কেন মা ? কেমন করে যে কান্দতে হয় তাও কি একেবারে ভুলে গেছ । বিভা ৷ মোহন, আমার একটি কথা রাখতে হবে । রামমোহন । কী কথা । বিভা। আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। যদি না যাস আমি একলা যাব । রামমোহন । সে আজ ময়ূরপংখিতে চড়বে, আর তুমি আজ হেঁটে যাবে ? বিভা ৷ হেঁটে যাওয়াই আমাকে সাজে- আমি হেঁটেই যাব । তুই সঙ্গে যাবি নে ? রামমোহন । আমি সঙ্গে যাব না, তো কে যাবে। কিন্তু মা, সে সভায় আজ তুমি কিসের জন্যে যাবে | বিভা । তা বটে, কেন যাব । মোহন, আমাকে দুঃখ সইতে হবে সে কথাটা হঠাৎ আমি ভুলে গিয়েছিলুম- ভেবেছিলুম, যা ভোগ হবার তা বুরি হয়ে চুকে গেছে। রামমোহন । কেন মা, তুমি সতীলক্ষ্মী, তুমি দুঃখ কেন পাও । বিভা ৷ মোহন, সেদিন অপরাধ যে সত্যি হয়েছিল । সে অপরাধের শাস্তি না হয়ে তো মিটবে না, সে শাস্তি আমিই নিলুম— প্ৰায়শ্চিত্ত আমাকে দিয়েই হবে । রামমোহন । মা, তোমার পিতার হাতের আঘাত সেও তুমিই মাথায় করে নিয়েছ, আবার তোমার স্বামীর হাতের আঘাত সেও তুমিই নিলে । কিন্তু আমি বলছি মা, সকলের চেয়ে বড়ো দণ্ড পেলে তোমার স্বামী । সে আজ দ্বারের কাছ থেকেও তোমাকে হারালো । উদয়াদিত্যের প্রবেশ উদয় । ওরে বিভা ! বিভা । দাদা, সব জানি । কিছু ভেবো না । উদয় । এখন কী করবি বোন । বিভা ৷ ভেবেছিলুম রাজবাড়িতে একবার যাব, কিন্তু যাব না। রামমোহন। মা, যেয়াে না, যেয়াে না। গেলে তোমার অপমান হত- সেই অপমানে তোমার স্বামীর পাপ আরো বাড়তি । বিভা । আমার মান-অপমান সব চুকে গেছে। কিন্তু দাদার অপমান হত যে | দাদা, এবার নীেকা ফেরাও । উদয় । তুই কোথায় যাবি বিভা ৷ বিভা । তোমার সঙ্গে কাশী যাব । আমি আজ মুক্তি পেয়েছি। এখন তোমার চরণসেবা করে আমার জীবন আনন্দে কাটবে। মোহন, তুই তোর প্রভুর কাছে ফিরে যা । রামমোহন। ঐ দেখো মা, ফেরবার পথে আগুন লেগেছে, ঐ-যে ময়ূরপংখি চলেছে। ও পথ •