পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ જે તે તે অতঃপর জয়েন্ট সাহেবের সমস্ত ভূতাবগকে যথাযোগ্য পারিতোষিক দিয়া হরকুমার মফস্বলে মাজিষ্ট্রেট সাহেবের সহিত দেখা করিতে গেলেন । ম্যাজিষ্ট্রেট তাহার মুখে শশিভূষণের স্পর্ধার কথা শুনিয়া কহিলেন, “আমিও আশ্চর্য হইতেছিলাম যে, নায়েব বাবুকে বরাবর ভালো লোক বলিয়াই জানিতাম, তিনি যে সর্বাগ্রে আমাকে জানাইয়া গোপনে মিটমাট না করিয়া হঠাৎ মকদ্দমা আনিবেন, এ কী অসম্ভব ব্যাপার ! এখন সমস্ত বুঝিতে পারিতেছি ।” 娜 অবশেষে নায়েবকে জিজ্ঞাসা করিলেন, শশী কনগ্রেসে যোগ দিয়াছে কি না । নায়েব অম্লানমুখে ठ‘लtन्नन्, ६ ।। সাহেব তাহার সাহেবি বুদ্ধিতে স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন, এ সমস্তই কনগ্রেসের চাল । একটা পাকচক্ৰ বাধাইয়া অমৃতবাজারে প্রবন্ধ লিখিয়া গবর্মেন্টের সহিত খিটিমিটি করিবার জন্য কনগ্রেসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোলাগণ লুক্কায়িতভাবে চতুর্দিকে অবসর অনুসন্ধান করিতেছে । এই সকল ক্ষুদ্র কণ্টকগণকে একেদমে দালন করিয়া ফেলিবার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তে অধিকতর সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয় নাই বািলয়া সাহেব ভারতবর্ষীয় গাবমেন্টকে অত্যন্ত দুর্বল গবর্মেন্ট বলিয়া মনে মনে ধিককার দিলেন। কিন্তু, কনগ্রস ওয়ালা শশিভূষণের নাম ম্যাজিস্ট্রেটের মনে রহিল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ সংসারে বডো বড়ো ব্যাপারগুলি যখন প্রবলভাবে গজাইয়া উঠিতে থাকে তখন ছোটো ছোটো ব্যাপারগুলিও ক্ষুধিত ক্ষুদ্র শিকড়জাল লইয়া জগতের উপর আপনি দাবি বিস্তার করিতে ছাড়ে না । শশিভূষণ যখন এই মাজিস্ট্রেটের হাঙ্গামা লইয়া বিশেষ ব্যস্ত, যখন বিস্তুত পুঁথিপত্র হইতে আইন উদ্ধার করিতেছেন, মনে মনে বক্তৃতায় শাণ দিতেছেন, কল্পনায় সাক্ষীকে জেবা করিতে বসিয়া গিয়াছেন ও প্রকাশ্য আদালতের লোকারণ্যদৃশ্য এবং এই যুদ্ধপর্বের ভাবী পর্বধায়গুলি মনে আনিয়া ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত ও ঘর্মািক্ত হইয়া উঠিতেছেন, তখন তাহার ক্ষুদ্র ছাত্রীটি তাহার ছিন্নপ্রায় চারুপাঠ ও মসীবিচিত্র লিখিবার খাতা, বাগান হইতে কখনো ফুল, কখনো ফল, মাতৃভাণ্ডার হইতে কোনোদিন আচার, কোনোদিন নারিকেলের মিষ্টান্ন, কোনোদিন পাতায়-মোড়া কেতকীকেশর সুগন্ধি গৃহনির্মিত খয়ের আনিয়া নিয়মিত সময়ে তাহার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইত । প্রথম দিনকতক দেখিল, শশিভূষণ একখানা চিত্রহীন প্ৰকাণ্ড কঠোরমূর্তি গ্ৰন্থ খুলিয়া অনামিনস্কভাবে পাতি উদ্ভটাইতেছেন, সেটা যে মনোযোগ দিয়া পাঠ করিতেছেন তাহাও বোধ হইল " অন্য সময়ে শশিভূষণ যে-সকল গ্রন্থ পড়িতেন, তাহার মধ্য হইতে কোনাে-না-কোনো অংশ পরিবােলাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ঐ স্থূলকায় কালো মলাটের পুস্তক হইতে গিরিবালাকে శా যোগ্য কি দুটাে কথাও ছিল না । তা না থােক, তাই বলিয়া ঐ বইখানা কি এতই বড়ো, আর "রিবালা কি এতই ছোটাে । প্রথমটা, গুরুর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গিরিবালা সুর করিয়া, বানান করিয়া, বেণীসমেত দেহের টুকেরাধ সবেগে দুলাইতে দুলাইতে উচ্চৈঃস্বরে আপনিই পড়া আরম্ভ করিয়া দিল । দেখিল তাঁহাতে ধৈ ফল হইল না। কালে মোটা বইখানার উপর মনে মনে অত্যন্ত চটিয়া গেল ওটাকে একটা ধুমেকতুকু নিষ্ঠুর মানুষের মতাে করিয়া দেখিতে লাগিল। ঐ বইখানা যে গিরিবালাকে বালিকা "পূর্ণ অবজ্ঞা করে তাহা যেন তাহার প্রত্যেক দূর্বোিধ পাতা দুই মানুষের মুখের মতাে আকার যো নীরবে প্রকাশ করিতে লাগিল। সেই বইখানা যদি কোনাে চােরে চুরি করিয়া লইয়া * সেই চোরকে সে তাহার মাতৃভাণ্ডারের সমন্ত কেয়াখয়ের চুরি করিয়া পুরস্কার দিতে সেই বইখানার বিনাশের জন্য সে মনে মনে দেবতার নিকট যে-সকল অসংগত ও অসম্ভব

  • ○ー

رf ;ن