পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○ ど。 রবীন্দ্র-রচনাবলী নবম পরিচ্ছেদ শশিভূষণের বাপ উকিল ব্যারিস্টার লাগাইয়া প্রথমত শশীকে হাজত হইতে জামিনে খালাস করিলেন । তাহার পরে মকদ্দমার জোগাড় চলিতে লাগিল । যে-সকল জেলের জাল নষ্ট হইয়াছে তাহারা শশিভূষণের এক পরগনার অন্তর্গত, এক জমিদারের অধীন । বিপদের সময় কখনো কখনো শশীর নিকটে তাহারা আইনের পরামর্শ লইতেও আসিত । যাহাদিগকে সাহেব বোটে ধরিয়া আনিয়াছিলেন তাহারাও শশিভূষণের অপরিচিত নহে । শশী তাহাদিগকে সাক্ষী মানিবেন বলিয়া ডাকাইয়া আনিলেন । তাহারা ভয়ে অস্থির হইয়া উঠিল । স্ত্রী-পুত্র-পরিবার লইয়া যাহাদিগকে সংসারযাত্ৰা নির্বাহ করিতে হয় পুলিসের সহিত বিবাদ করিলে তাহারা কোথায় গিয়া নিস্কৃতি পাইবে । একটার অধিক প্ৰাণ কাহার শরীরে আছে । যাহা লোকসান হইবার তাহা তো হইয়াছে, এখন আবার সাক্ষীর সপিনা ধরাইয়া এ কী মুশকিল । সকলে বলিল, বিস্তর বলা-কহার পর তাহারা সত্যকথা বলিতে স্বীকার কবিল । ইতিমধ্যে হরকুমার যেদিন বেঞ্চের কর্মোপলক্ষে জেলার সাহেবদিগকে সেলাম করিতে গেলেন পুলিস সাহেব হাসিয়া কহিলেন, “নায়েববাবু, শুনিতেছি তোমার প্রজারা পুলিসের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষা দিতে প্ৰস্তুত হইয়াছে ।” নায়েব সচকিত হইয়া কহিলেন, “হা ! এও কি কখনো সম্ভব হয় ! অপবিত্র জন্তুজাত পুত্রদিগের অস্থিতে এত ক্ষমতা !” 蜗 ংবাদপত্র-পাঠকেরা অবগত আছেন, মকদ্দমায় শশিভূষণের পক্ষ কিছুতেই টিকিতে পারিল না ? জেলেরা একে একে আসিয়া কহিল, পুলিস সাহেব তাহদের জাল কাটিয়া দেন নাই, বোটে ভাকিয়া তাহাদের নাম ধাম লিখিয়া লইতেছিলেন । কেবল তাঁহাই নহে, তাহার দেশস্থ গুটিচারেক পরিচিত লোক সাক্ষ্য দিল যে, তাহারা সে সময়ে ঘটনাস্থলে বিবাহের বরযাত্র উপলক্ষে উপস্থিত ছিল । শশিভূষণ যে অকারণে অগ্রসর হইয়া পুলিসের পাহারাওয়ালাদের প্রতি উপদ্রব করিয়াছে, তাহা তাহারা প্ৰত্যক্ষ দেখিয়াছে ! শশিভূষণ স্বীকার করিলেন যে, গালি খাইয়া বোটের মধ্যে প্রবেশ করিয়া তিনি সাহেবকে মারিয়াছেন । কিন্তু জাল কাটিয়া দেওয়া ও জেলেদের প্রতি উপদ্ৰবই তাহার মূল কারণ । এরূপ অবস্থায় যে বিচারে শশিভূষণ শাস্তি পাইলেন তাহাকে অন্যায় বলা যাইতে পারে না । তবে শাস্তিটা কিছু গুরুতর হইল। তিন-চারিটা অভিযোগ, আঘাত, অনধিকার প্রবেশ, পুলিসের কর্তব্যে ব্যাঘাত ইত্যাদি, সব ক’টাই তাহার বিরুদ্ধে পুরা প্রমাণ হইল । শশিভূষণ তাহার সেই ক্ষুদ্র গৃহে তাহার প্রিয় পাঠ্যগ্রন্থগুলি ফেলিয়া পাঁচ বৎসর জেল খাটিতে গেলেন । তাহার বাপ আপিল করিতে উদ্যত হাহলে তাঁহাকে শশিভূষণ বারংবার নিষেধ করিলেন ; কহিলেন, “জেল ভালো ! লোহার বেড়ি মিথ্যা কথা বলে না, কিন্তু জেলের বাহিরে যে স্বাধীনতা আছে