পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ V)N) অগ্রভাগের ন্যায় ক্ষীণতম হইয়া আসিল, এত ক্ষীণ শব্দ কখনো শুনি নাই, কল্পনা করি নাই ; আমার মাথার মধ্যে যেন অনন্ত আকাশ রহিয়াছে এবং সেই শব্দ যতই দূরে যাইতেছে কিছুতেই আমার মস্তিষ্কের সীমা ছাড়াইতে পারিতেছে না ; অবশেষে যখন একান্ত অসহ্য হইয়া আসিল তখন ভাবিলাম, আলো নিবাইয়া না দিলে ঘুমাইতে পারিব না । যেমন আলো নিবাইয়া শুইলাম অমনি আমার মশারির পাশে, আমার কানের কাছে, অন্ধকারে আবার সেই অবরুদ্ধ স্বর বলিয়া উঠিল, “ও কে, ও কে, ও কে গো ।” আমার বুকের রক্তের ঠিক সমান তালে ক্ৰমাগতই ধ্বনিত হইতে লাগিল, “ও কে, ও কে, ও কে গো । ও কে, ও কে, ও কে গো ।” সেই গভীর রাত্রে নিস্তািন্ধ বোটের মধ্যে আমার গোলাকার ঘডিটাও সজীব হইয়া উঠিয়া তাহার ঘন্টার কাটা মনোরমার দিকে প্রসারিত করিয়া শেলফের উপর হইতে তালে তালে বলিতে লাগিল, “ও কে, ও কে, ও কে গো ! ও কে, ও কে, ও কে গো ?” বালতে বলিতে দক্ষিণাবাবু পাংশুবৰ্ণ হইয়া আসিলেন, তাহার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হইয়া আসিল । আমি তাহাকে স্পর্শ করিয়া কহিলাম, “একটু জল খান ।” এমন সময় হঠাৎ আমার কেরোসিনের শিখাটা দপ দপ করিতে করিতে নিবিয়া গেল । হঠাৎ দেখিতে পাইলাম, বাহিরে আলো হইয়াছে । কাক ডাকিয়া উঠিল । দোয়েল শিস দিতে লাগিল । আমার বাডির সম্মুখবতী পথে একটা মহিষের গাডির র্ক্যাচ ক্যাচ শব্দ জাগিয়া উঠিল । তখন দক্ষিণাবাবুর মুখের ভাব একেবারে বদল হইয়া গেল । ভয়ের কিছুমাত্র চিহ্ন রহিল না । রাত্রির কুহিকে, কাল্পনিক শঙ্কার মত্ততায় আমার কাছে যে এত কথা বলিয়া ফেলিয়াছেন সেজন্য যেন অত্যন্ত লজ্জিত এবং আমার উপর আন্তরিক ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন । শিষ্টসম্ভাষণমাত্র না কবিয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দ্রুতবেগে চলিয়া গেলেন । সেইদিনই অর্ধরাত্রে আবার আমার দ্বারে আসিয়া ঘা পডিল, “ডাক্তার ! ডাক্তার ”

  • NTK S SDo S

আপদ সন্ধ্যার দিকে ঝড় ক্রমশ প্রবল হইতে লাগিল । বৃষ্টির ঝাপট, বজের শব্দ এবং বিদ্যুতের ঝিকমিকিতে আকাশে যেন সুরাসুরের যুদ্ধ বাধিয়া গেল । কালো কালো মেঘগুলো মহাপ্রলয়ের জয়পতাকার মতো দিগবিদিকে উড়িতে আরম্ভ করিল, গঙ্গার এপারে ওপারে বিদ্রোহী ঢেউগুলো । কলশব্দে নৃত্য জুডিয়া দিল, এবং বাগানের বড়ো রড়ো গাছগুলো সমস্ত শাখা ঝটপট করিয়া হাহুতাশ সহকারে দক্ষিণে বামে লুটােপুটি করিতে লাগিল । তখন চন্দননগরের বাগানবাড়িতে একটি দীপালোকিত রুদ্ধ কক্ষে খাটের সম্মুখবতী নীচের বিছানায় বসিয়া স্ত্রী-পুরুষে কথাবার্তা চলিতেছিল । শরৎবাবু বলিতেছিলেন, “আর কিছুদিন থাকিলেই তোমার শরীর সম্পূর্ণ সারিয়া উঠিবে, তখন আমরা দেশে ফিরিতে পারিব ।” অনুগ্ধ বুলিতেছিলেন, “আমার শরীর সম্পূর্ণ সারিয়া উঠিয়াছে, এখন দেশে ফিরিলে কোনো •ौंङ ठू३हुद ब्ा ।” বিবাহিত ব্যক্তিমাত্রেই বুঝিতে পরিবেন, কথাটা যত সংক্ষেপে রিপোর্ট করিলাম তত সংক্ষেপে শেষ হয় নাই । বিষয়টি বিশেষ দুরূহ নয়, তথাপি বাদপ্রতিবাদ কিছুতেই মীমাংসার দিকে অগ্রসর