পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Test vo a এই ৰউভাতের নিমন্ত্রণস্থলে, এই আনন্দকার্যের মধ্যে, দুটি দুই রকমের মানুষের দেখা হইল এবং দেখিতে দেখিতে সংসারের অশ্রান্ত জলকুনানির মধ্যে একটা নুতন বর্ণের সূত্র উঠিয়া পড়িল এবং একটা নূতন রকমের গ্রন্থি পড়িয়া গেল । সকলের আহারাদি শেষ হইয়া গেলে ইন্দ্ৰাণী বৈকালের দিকে কিছু বিলম্বে মনিববাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইয়াছিল । বিনোদের স্ত্রী নয়নতারা যখন বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করিল, ইন্দ্ৰাণী গৃহকর্মের ব্যস্ততা, শারীরিক অস্বাস্থ্য প্রভৃতি দুই-চারিটা কারণ প্রদর্শন করিল, কিন্তু তাহা কাহারো সন্তোষজনক 6ाथ इङ्ग्रेख्न व्ा । প্রকৃত কারণ যদিও ইন্দ্ৰাণী গোপন করিল। তথাপি তাহা বুঝিতে কাহারো বাকি রহিল না । সে কারণটি এই-- মুকুন্দবাকুরা প্ৰভু, ধনী বটেন, কিন্তু কুলমৰ্যাদায় গৌরীকান্ত তাহদের অপেক্ষা অনেক শ্ৰেষ্ঠ ! ইন্দ্ৰাণী সে শ্ৰেষ্ঠতা ভুলিতে পারে না ; সেইজন্য মনিবের বাড়ি পাছে খাইতে হয় এই ভয়ে সে যথেষ্ট বিলম্ব করিয়া গিয়াছিল । তাহার অভিসন্ধি বুঝিয়ে তাহাকে খাওয়াইবার জন্য বিশেষ পীড়াপীড়ি করা হইয়াছিল, কিন্তু ইন্দ্ৰাণী পরাস্ত হইবার মেয়ে নহে, তাহাকে কিছুতেই খাওয়ানো গেল না । একবার মুকুন্দ এবং গৌরীকান্ত বর্তমানেও কুলাভিমান লইয়া ইহা অপেক্ষা বৃহত্তর বিপ্লব কাধিয়াছিল । সে ঘটনা। এই স্থানে উল্লেখ করা যাইতে পারে । আছে । সে তুলনা অধিকাংশ স্থলেই খাটে না, কিন্তু ইন্দ্ৰাণীকে খাটে ! ইন্দ্ৰাণী যেন আপনার মধ্যে একটা প্ৰবল বেগ এবং প্রখর জ্বালা একটি সহজ শক্তির দ্বারা অটল গাভীর্যপাশে অতি অনায়াসে বাধিয়া রাখিয়াছে। বিদ্যুৎ তাহার মুখে চক্ষে এবং সর্বঙ্গে নিত্যকাল ধরিয়া নিস্তব্ধ হইয়া রহিয়াছে । এখানে তাহার চপলতা নিষিদ্ধ । এই সুন্দরী মেয়েটিকে দেখিয়া মুকুন্দবাবু তাহার পোষ্যপুত্রের সহিত ইহার বিবাহ দিবার প্রস্তাব গৌবীকাস্তের নিকট উত্থাপিত করিয়াছিলেন । প্ৰভুভক্তিতে গৌরীকান্ত কাহারো নিকটে ন্যান ছিলেন না ; তিনি প্রভুর জন্য প্ৰাণ দিতে পারিতেন ; এবং তঁহার অবস্থার যতই উন্নতি হউক এবং কর্তা তাহার প্রতি বন্ধুর ন্যায় ব্যবহার করিয়া তাহাকে যতই প্রশ্ৰয় দিন, তিনি কখনো ভ্ৰমেও স্বপ্নেও প্রভুর সম্মান বিস্মত হন নাই ; প্রভূর সম্মুখে, এমন-কি, প্রভুর প্রসঙ্গে তিনি যেন সন্নত হইয়া পড়িতেনকিন্তু এই বিবাহের প্রস্তাবে তিনি কিছুতেই সম্মত হন নাই। প্ৰভুভক্তির দেন। তিনি কড়ায় গণ্ডায় শোধ করিতেন, কুলমর্যাদার পাওনা তিনি ছাড়িবেন কেন । মুকুন্দলালের পুত্রের সহিত তিনি তাহার পৌত্রীর বিবাহ দিতে পারেন না । ভূত্যের এই কুলগর্ব মুকুন্দলালের ভালো লাগে নাই । তিনি আশা করিয়াছিলেন এই প্ৰস্তাবের দ্বারা তাহার ভক্ত সেবকের প্রতি অনুগ্রহ প্ৰকাশ করা হইবে ; গৌরীকান্ত যখন কথাটা সেভাবে লইলেন না। তখন মুকুন্দলাল কিছুদিন তাহার সহিত বাক্যালাপ বন্ধ করিয়া তাহাকে অত্যন্ত মনঃকষ্ট দিয়াছিলেন । প্রভুর এই বিমুখভােব গৌরীকান্তের বক্ষে মৃত্যশেলের ন্যায় বাজিয়াছিল, কিন্তু তথাপি তিনি তঁহার পৌত্রীর সহিত এক পিতৃমাতৃহীন দরিদ্র কুলীন সন্তানের বিবাহ দিয়া তাহাকে ঘরে পালন করিয়া নিজের অর্থে শিক্ষাদান করিতে লাগিলেন । সেই কুলমন্দগর্কিত পিতামহের পোস্ত্রী ইন্দ্ৰাণী তাহার প্রভৃগুহে গিয়া আহার করিল না ; ইহাতে তাহার প্রভুপত্নী নয়নতারার অন্তঃকরণে সুমধুর প্রীতিরস উদবেলিত হইয়া উঠে নাই সে কথা বলা আিছল, তখন ইন্দ্রাণীর অনেকগুলি স্পৰ্থ নয়নতারার বিদ্বেষকষায়িত কল্পনাচক্ষে প্ৰকাশ পাইতে 2ोक्त । প্ৰথম, ইন্দ্ৰাণী অনেক গহনা পরিয়া অত্যন্ত সুসজ্জিত হইয়া আসিয়াছিল । মনিব-বাড়িতে এত ঐশ্বর্যের আড়ম্বর করিয়া প্ৰভুদের সহিত সমকক্ষতা দেখাইবার কী আবশ্যক ছিল । দ্বিতীয়, ইন্দ্ৰাণীর রাপের গর্ব । ইন্দ্ৰাণীর রূপটা ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই এবং নিম্নপদস্থ ব্যক্তির এত অধিক রােপ থাকা অনাবশ্যক এবং অন্যায় হইতে পারে, কিন্তু তােহর গর্বিটা সম্পূৰ্ণ নয়নতারার