পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wo(br রবীন্দ্র-রচনাবলী কল্পনা । রূপের জন্য কাহাকেও দোষী করা যায় না, এইজন্য নিন্দা করিতে হইলে অগত্যা গর্বের অবতারণা করিতে হয় । তৃতীয়, ইন্দ্রাণীর দাক্তিকতা, চালিত ভাষায় যাহাকে বলে দেমাক । ইন্দ্রাণীর একটি স্বাভাবিক গভীৰ্য ছিল । অত্যন্ত প্রিয় পরিচিত ব্যক্তি ব্যতীত সে কাহারো সহিত মাখামাখি করিতে পারিত না । তাহা ছাড়া গায়ে পড়িয়া একটা সোরগোল করা, অগ্রসর হইয়া সকল কাজে হস্তক্ষেপ করিতে যাওয়া, সেও তাহার স্বভাৱসিদ্ধ ছিল না । এইরূপ নানাপ্রকার অমূলক ও সমূলক কারণে নয়নতারা ক্রমশ উত্তপ্ত হইয়া উঠিতে লাগিল । এবং অনাবশ্যক সূত্র ধরিয়া ইন্দ্ৰাণীকে “আমাদের ম্যানেজারের শ্ৰী” “আমাদের দেওয়ানের নাতনী বলিয়া বারংবার পরিচিত ও অভিহিত করিতে লাগিল । তাহার একজন প্রিয় মুখরা দাসীকে শিখাইয়া দিল— সে ইন্দ্রাণীর গায়ের উপর পিডিয়া সখীভাবে তাহার গহনাগুলি হাত দিয়া নাডিয়া নাডিয়া সমালোচনা করিতে লাগিল । কণ্ঠী এবং বাজুবন্দের প্রশংসা করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “হয় ভাই, এ কি গিল্টি-কর্য ।” ইন্দ্ৰাণী পরম গভীরমুখে কহিল, “না, এ পিতলের (” নয়নতারা ইন্দ্ৰাণীকে সম্বোধন করিয়া কহিল, “ওগো, তুমি ওখানে একলা দাড়িয়ে কী করছ, এই খাবারগুলো হাটখোলার পালকিতে তুলে দিয়ে এসো-না৷ ” অদূরে বাড়ির দাসী উপস্থিত ছিল । ইন্দ্ৰাণী কেবল মুহুর্তকালের জন্য তাহার বিপুলপক্ষুন্নািচ্ছায়াগভীর উদার দৃষ্টি মেলিয়া নয়নতারার মুখের দিকে চাহিল এবং পরীক্ষণেই নীরবে মিষ্টান্নপূর্ণ সারা খুরি তুলিয়া লইয়া হাটখোলার পালকির উদ্দেশে নীচে চলিল । বিনি এই মিষ্টান্ন উপহার প্রাপ্ত হইয়াছেন তিনি শশব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “তুমি কেন ভাই, কষ্ট করছ, प्रा9-ना वे प्रानीव्र शcठ प्राप्e !” ইন্দ্ৰাণী তাহাতে সম্মত না হইয়া কহিল, “এতে আর কষ্ট কিসের ” অপরা কহিলেন, “তবে ভাই, আমার হাতে দাও ।” ইন্দ্ৰাণী কহিল, “না, আমিই নিয়ে যাচ্ছি। ” তেমনি অটল স্নিগ্ধভাবে ইন্দ্ৰাণী পালকিতে মিষ্টাত্র রাবিয়া আসিল— এবং সেই দুই মিনিট-কালের সংস্রবে। হাটখোলবাসিনী ধনিগৃহবধু এই স্বল্পভাষিণী মিতহাসিনী ইন্দ্রাণীর সহিত জন্মের মতো প্ৰাণের সখীত্ব স্থাপনের জন্য উচ্ছসিত হইয়া উঠিল । এইরূপে নয়নতারা শ্ৰীজনীসুলভ নিষ্ঠুর নৈপুণ্যের সহিত যতগুলি অপমািনশর বর্ষপ করিল ইন্দ্ৰাণী তাহার কোনোটাকেই গায়ে বিধিতে দিল না ; সকলগুলিই তাহার। অকলঙ্ক সমুজ্জ্বল সহজ তেজস্বিতার কঠিন বর্মে ঠেকিয়া আপনি ভাঙিয়া ভাঙিয়া পড়িয়া গেল। তাহার গভীর অবিচলতা দেখিয়া নয়নতারার আক্রোশ আরো বাড়িয়া উঠিতে লাগিল এবং ইন্দ্ৰাণী তাহা বুঝিতে পারিয়া একসময় অলক্ষ্যে কাহারও নিকট বিদায় না লইয়া বাড়ি চলিয়া আসিল । বাহরা শান্তভাবে সহ্য করে তাহারা গভীরতররূপে আহত হয় ; অপমানের আঘাত ইন্দ্ৰাণী যদিও অসীম অবজ্ঞা ভরে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল, তথাপি তাহা তাহার অন্তরে বাজিয়ছিল । দূরসম্পর্কের নিঃস্ব পিসতুতো ভাই বামাচরণের সহিত নয়নতারার বিবাহের কথা হয়, সেই বামাচরণ এখন বিনোদের সেরেস্তায় একজন সামান্য কর্মচারী । ইন্দ্রাণীর এখনো মনে পড়ে, বাল্যকালে একদিন