পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ S. রবীন্দ্র-রচনাবলী মুষ্টিতে আপনার আলুলায়িত কেশজাল টানিয়া ছিড়িতেছে, তাহার গৌরবর্ণ ললাট দিয়া রক্ত ফাটিয়া । পড়িতেছে, কখনো সে শুষ্ক তীব্ৰ অট্টহাস্যে হাহা করিয়া হাসিয়া উঠিতেছে, কখনো ফুলিয়া ফুলিয়া মুক্ত বাতায়ন দিয়া বাতাস গর্জন করিয়া আসিতেছে এবং মুষলধারে বৃষ্টি আসিয়া তাহার সর্বাঙ্গ অভিষিক্ত করিয়া দিতেছে । সমস্ত রাত্রি ঝড়ও থামে না, ক্ৰন্দনও থামে না । আমি নিৰ্ম্মফল পরিতাপে ঘরে ঘরে অন্ধকারে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলাম । কেহ কোথাও নাই ; কাহাকে সাত্মনা করিব । এই প্ৰচণ্ড অভিমান কাহার । এই অশান্ত আক্ষেপ কোথা হইতে উখিত হইতেছে । ! পাগল চীৎকার করিয়া উঠিল, “তফাত যাও, তফাত যাও ! সব বুট হ্যায়, সব বুট হ্যায় ।” দেখিলাম ভোর হইয়াছে এবং মেহের আলি এই ঘোর দুর্যোগের দিনেও যথানিয়মে প্রাসাদ প্ৰদক্ষিণ করিয়া তাহার অভ্যস্ত চীৎকার করিতেছে। হঠাৎ আমার মনে হইল, হয়তো ঐ মেহের আলিও আমার মতো এক সময় এই প্রাসাদে বাস করিয়াছিল, এখন পাগল হইয়া বাহির হইয়াও এই পাষাণ-রাক্ষসের মোহে আকৃষ্ট হইয়া প্রত্যহ প্ৰত্যুষে প্ৰদক্ষিণ করিতে আসে । আমি তৎক্ষণাৎ সেই বৃষ্টিতে পাগলার নিকট ছুটিয়া গিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “মেহের আলি, ক্যা কুট হ্যায় রে ?” r সে আমার কথায় কোনো উত্তর না করিয়া আমাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া অজগরের কবলের চতুর্দিকে ঘূর্ণমান মোহাবিষ্ট পক্ষীর ন্যায় চীৎকার করিতে করিতে বাড়ির চারি দিকে ঘুরিতে লাগিল । কেবল প্ৰাণপণে নিজেকে সতর্ক করিবার জন্য বারংবার বলিতে লাগিল, “তফাত যাও, তফাত যাও, সব বুট হ্যায়, সব বুট হ্যায় ।” আমি সেই জলবাড়ের মধ্যে পাগলের মতো আপিসে গিয়া করিম খাকে ডাকিয়া বলিলাম, “ইহার অর্থ কী আমায় খুলিয়া বলো ।” বৃদ্ধ যাহা কহিল, তাহার মর্মার্থ এই : একসময় ঐ প্রাসাদে অনেক অতৃপ্ত বাসনা, অনেক উন্মত্ত সম্ভোগের শিখা আলোড়িত হইত- সেই সকল চিত্তদাহে, সেই-সকল নিৰ্ম্মফল কামনার অভিশাপে এই প্রাসাদের প্রত্যেক প্রস্তরখণ্ড ক্ষুধার্ত তুষার্ত হইয়া আছে ; সজীব মানুষ পাইলে তাহাকে লালায়িত পিশাচীর মতো খাইয়া ফেলিতে চায় । যাহারা ত্রিরাত্রি ঐ প্রাসাদে বাস করিয়াছে, তাহদের মধ্যে কেবল মেহের আলি পাগল হইয়া বাহির হইয়া আসিয়াছে, এ পর্যন্ত আর কেহ তাহার গ্রাস এড়াইতে পারে নাই । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমার উদ্ধারের কি কোনো পথ নাই ।” বৃদ্ধ কহিল, “একটিমাত্র উপায় আছে তাহা অত্যন্ত দুরূহ। তাহা তোমাকে বলিতেছি- কিন্তু তৎপুর্বে ঐ গুলবাগের একটি ইরানী ক্রীতদাসীর পুরাতন ইতিহাস বলা আবশ্যক। তেমন আশ্চর্য এবং তেমন হৃদয়বিদারক ঘটনা সংসারে আর কখনো ঘটে নাই ।” এমন সময় কুলিরা আসিয়া খবর দিল, গাড়ি আসিতেছে। এত শীঘ্র ? তাড়াতাড়ি বিছানাপত্ৰ বঁাধিতে বাধিতে গাড়ি আসিয়া পড়িল । সে গাড়ির ফাস্ট ক্লাসে একজন সুপ্তোখিত ইংরাজ জানলা” হইতে মুখ বাড়াইয়া স্টেশনের নাম পড়িবার চেষ্টা করিতেছিল, আমাদের সহযাত্রী বন্ধুটিকে দেখিয়াই “হ্যালো” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল এবং নিজের গাড়িতে তুলিয়া লইল । আমরা সেকেন্ড ক্লাসে উঠিলাম । বাবুটি কে খবর পাইলাম না, গল্পেরও শেষ শোনা হইল না । । আমি বলিলাম লোকটা আমাদিগকে বোকার মতো দেখিয়া কৌতুক করিয়া ঠকাইয়া গেল ; গল্পটা আগাগোড়া বানানো । এই তর্কের উপলক্ষে আমার থিয়াসফিস্ট আত্মীয়টির সহিত আমার জন্মের মতো বিচ্ছেদ ঘটিয়া Cf | ප්jඳe! Sමය S.