পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

खां°ान्-याईी. 8 SS দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল। ভারতবর্ষে এই ছবি কবে দেখতে পাব ? সেখানে মানুষ আপনার বারো-আনাকে ফাকি দিয়ে কাটাচ্ছে। এমন সব নিয়মের জাল, যাতে মানুষ কেবলই বেধে-বেধে গিয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে পড়েই নিজের অধিকাংশ শক্তির বাজে খরচ করে এবং বাকি অধিকাংশকে কাজে খাটাতে পারে না- এমন বিপুল জটিলতা এবং জড়তার সমাবেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। চারি দিকে কেবলই জাতির সঙ্গে জাতির বিচ্ছেদ, নিয়মের সঙ্গে কাজের বিরোধ, আচারধর্মের সঙ্গে কাল ধর্মের विश्व | চীন সমুদ্র তোসামারু জাহাজ S SR ১৬ই জ্যৈষ্ঠ । আজ জাহাজ জাপানের “কোবে’ বন্দরে পৌছবে । কয়দিন ব্যষ্টি-বাদলের বিরাম নেই । মাঝে মাঝে জাপানের ছোটাে ছোটাে দ্বীপ আকাশের দিকে পাহাড় তুলে সমুদ্রযাত্রীদের ইশারা করছে, কিন্তু বৃষ্টিতে কুয়াশাতে সমস্ত ঝাপসা ; বাদলার হাওয়ায় সদিকাশি হয়ে গলা ভেঙে গেলে তার আওয়াজ যেরকম হয়ে থাকে, ঐ দ্বীপগুলোর সেইরকম ঘোরতর সর্দির আওয়াজের চেহারা । বৃষ্টির ছাট এবং ভিজে হাওয়ার তাড়া এড়াবার জন্যে ডেকের এধার থেকে ওধারে চৌকি টেনে নিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের সঙ্গে যে জাপানি যাত্রী দেশে ফিরছেন তিনি আজ ভোরেই তার ক্যাবিন ছেড়ে একবার ডেকের উপর উঠে এসেছেন, জাপানের প্রথম অভ্যর্থনা গ্ৰহণ করবার জন্যে । তখন কেবল একটি জেগে রয়েছে । তিনি স্থির নেত্রে এইটুকু কেবল দেখে নীচে নেবে গেলেন ; তার সেই চোখে ঐ পাহাড়টুকুকে দেখা আমাদের শক্তিতে নেই- আমরা দেখছি নূতনকে, তিনি দেখছেন তার চিরন্তনকে ; আমরা অনেক তুচ্ছকে বাদ দিয়ে দিয়ে দেখছি, তিনি ছোটাে বড়ো সমস্তকেই তার এক বিরাটের অঙ্গ করে দেখছেন ; এইজন্যেই ছোটোও তার কাছে বড়ো, ভাঙাও তার কাছে জোড়া, অনেক তঁর কাছে এক । এই দৃষ্টিই সত্য দৃষ্টি । জাহাজ যখন একেবারে বন্দরে এসে পৌঁছল তখন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য উঠেছে। বড়ো বড়ো জাপানি অন্সরা নীেকা আকাশে পাল উড়িয়ে দিয়ে, যেখানে বরুণদেবের সভাপ্রাঙ্গণে সূর্যদেবের নিমন্ত্রণ হয়েছে, সেইখানে নৃত্য করছে। প্রকৃতির নাট্যমঞ্চে বাদলার যবনিকা উঠে গিয়েছে ; ভাবলুম, প্রার ডেকের উপরে রাজার হালে বসে সমূত্রের তীরে জাপানের প্রথম প্রবেশটা ভালাে করে দেখে কিন্তু, সে কি হবার জো আছে । নিজের নামের উপমা গ্ৰহণ করতে যদি কোনো অপরাধ না থাকে তা হলে বলি, আমার আকাশের মিতা যখন খালাস পেয়েছেন তখন আমার পালা আরম্ভ হল । আমার চারি দিকে একটু কোথাও ফাক দেখতে পেলুম না । খবরের কাগজের চর তাদের প্রশ্ন এবং তাদের ক্যামেরা নিয়ে আমাকে আচ্ছন্ন করে দিলে । কোবে শহরে অনেকগুলি ভারতবর্ষীয় বণিক আছেন, তার মধ্যে বাঙালির ছিটে-ফোটাও কিছু পাওয়া যায়। আমি হংকং শহরে পৌঁছেই এই ভারতবাসীদের টেলিগ্রাম পেয়েছিলুম, তারাই আমার আতিথ্যের ব্যবস্থা করেছেন । তারা জাহাজে গিয়ে আমাকে ধরলেন । ওদিকে জাপানের বিখ্যাত চিত্রকর টাইকন এসে উপস্থিত । ইনি যখন ভারতবর্ষে গিয়েছিলেন, আমাদের বাড়িতে ছিলেন । কাটন্সটাকেও দেখা গেল, ইনিও আমাদের চিত্রকর বন্ধু। সেইসঙ্গে সানো এসে উপস্থিত, ইনি এককালে আমাদের শান্তিনিকেতন আশ্রমে জুজুৎসু ব্যায়ামের শিক্ষক ছিলেন । এর মধ্যে কাওয়াগুচিরও দর্শন