পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t ቅ (፩ Ow@ কিন্তু সত্যের ব্যবহার জানে নি । সে দেবতার শক্তি পেয়েছিল, দেবত্ব পায় নি। বর্তমান যুগে মানুষের মধ্যে সেই দেবতার শক্তি দেখা দিয়েছে য়ুরোপে । কিন্তু সেই শক্তি কি মানুষকে মারবার জন্যেই দেখা দিল । গত যুরোপের যুদ্ধে এই প্রশ্নটাই ভয়ংকর মূর্তিতে প্ৰকাশ পেয়েছে। যুরোপের বাইরে সর্বত্রই যুরোপ বিভীষিকা হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ আজ এশিয়া আফ্রিকা জুড়ে । যুরোপ আপন বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের মধ্যে আসে নি, এসেছে আপনি কামনা নিয়ে । তাই এশিয়ার হৃদয়ের মধ্যে যুরোপের প্রকাশ অবরুদ্ধ। বিজ্ঞানের স্পর্ধায়, শক্তির গর্বে, অর্থের লোভে, পৃথিবী জুড়ে মানুষকে লাঞ্ছিত করবার এই-যে চৰ্চা বহুকাল থেকে যুরোপ করছে, নিজের ঘরের মধ্যে এর ফল যখন ফলল। তখন আজ সে উদবিগ্ন । তৃণে আগুন লাগাচ্ছিল, আজ তার নিজের বনস্পতিতে সেই আগুন লািগল । সে ভাবছে, থামাব কোথায় । সে থামা কি যন্ত্রকে থামিয়ে দিয়ে । আমি তা বলি নে । থামাতে হবে লোভ । সে কি ধর্ম-উপদেশ দিয়ে হবে । তাও সম্পূৰ্ণ হবে না । তার সঙ্গে বিজ্ঞানেরও যোগ চাই। যে-সাধনায় লোভকে ভিতরের দিক থেকে দমন করে সে-সাধনা ধর্মের, কিন্তু যে-সাধনায় লোভের কারণকে বাইরের দিক থেকে দূর করে সে-সাধনা বিজ্ঞানের । দুইয়ের সম্মিলনে সাধনা সিদ্ধ হয়, বিজ্ঞানবুদ্ধির, সঙ্গে ধর্মবুদ্ধির আজ মিলনের অপেক্ষা আছে । জাভায় যাত্রাকালে এই-সমস্ত তর্ক আমার মাথায় কেন এল জিজ্ঞাসা করতে পার । এর কারণ হচ্ছে এই যে, ভারতবর্ষের বিদ্যা একদিন ভারতবর্ষের বাইরে গিয়েছিল । কিন্তু সেই বাইরের লোক তাকে স্বীকার করেছে। তিব্বত মঙ্গোলিয়া মালয়দ্বীপসকলে ভারতবর্ষ জ্ঞানধর্ম বিস্তার করেছিল, মানুষের সঙ্গে মানুষের আন্তরিক সত্যসম্বন্ধের পথ দিয়ে । ভারতবর্ষের সেই সর্বত্র-প্রবেশের ইতিহাসের চিহ্ন দেখবার জন্যে আজ আমরা তীর্থযাত্রা করেছি । সেইসঙ্গে এই কথাও দেখবার আছে, সেদিনকার ভারতবর্ষের বাণী শুষ্কতা প্রচার করে নি। মানুষের ভিতরকার ঐশ্বর্যকে সকল দিকে উদবোধিত করেছিল, স্থাপত্যে ভাস্কর্যে চিত্রে সংগীতে সাহিত্যে ; তারই চিহ্ন মরুভূমে অরণ্যে পর্বতে দ্বীপে দ্বীপান্তরে, দুৰ্গম স্থানে দুঃসাধ্য কল্পনায় । সন্ন্যাসীর যে-মন্ত্র মানুষকে রিক্ত করে নগ্ন করে, মানুষের যৌবনকে পঙ্গু করে, মানবচিত্তবৃত্তিকে নানাদিকে খর্ব করে, এ সে-মস্ত্র নয় । এ জরাজীর্ণ কৃশপ্ৰাণ বৃদ্ধের বাণী নয়, এর মধ্যে পরিপূর্ণপ্ৰাণ বীর্যবান যৌবনের প্রভাব । ১ শ্রাবণ ১৩৩৪ * SR কল্যাণীয়াসু দেশ থেকে বেরবার মুখে আমার উপর ফরমাশ এল কিছু-কিছু লেখা পাঠাতে হবে । কাকে পাঠাব লেখা, কে পড়বে । সর্বসাধারণ ? সর্বসাধারণকে বিশেষ করে চিনি নে, এইজন্যে তার ফরমাশে যখন লিখি তখন শক্ত করে বাধানো খুব একটা সাধারণ খাতা খুলে লিখতে হয় ; সে-লেখার দাম খতিয়ে হিসেব কষা চলে । কিন্তু, মানুষের একটা বিশেষ খাতা আছে ; তার আলগা পাতা, সেটা যা-তা লেখবার জন্যে, সে লেখার দামের কথা কেউ ভাবেও না । লেখাটাই তার লক্ষ্য, কথাটা উপলক্ষ । সেরকম লেখা চিঠিতে ভালো চলে ; আটপৌরে লেখা- তার না আছে মাথায় পাগড়ি, না আছে পায়ে জুতো । পরের কাছে পরের বা নিজের কোনো দরকার নিয়ে সে যায় না- সে যায় যেখানে বিনা-দরকারে গেলেও জবাবদিহি নেই, যেখানে কেবলমাত্র বকে যাওয়ার জন্যেই যাওয়া-আসা । স্রোতের জলের যে-ধবনি সেটা তার চলারই ধবনি, উড়ে-চলা মৌমাছির পাখার যেমন গুঞ্জন । আমরা যেটাকে বকুনি বলি সেটাও সেই মানসিক চলে যাওয়ারই শব্দ । চিঠি হচ্ছে লেখার অক্ষরে यक यों९3यों । ১ নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লিখিত ।