পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী । 6 8S আমাদের দেশে এক সময়ে শিবকে দুই ভাগ করে দেখেছিল। এক দিকে তিনি অনন্ত, তিনি সম্পূর্ণ, সুতরাং তিনি নিক্রিয়, তিনি প্রশান্ত ; আর-এক দিকে তারই মধ্যে কালের ধারা তার পরিবর্তন-পরম্পরা নিয়ে চলেছে, কিছুই চিরদিন থাকছে না, এইখানে মহাদেবের তাণ্ডবলীলা কালীর মধ্যে রূপ নিয়েছে । কিন্তু, জাভায় কালীর কোনো পরিচয় নেই। কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলারও কোনো চিহ্ন দেখা যায় না । পুতনাবিধ প্রভৃতি অংশ আছে কিন্তু গোপীদের দেখতে পাই নে । এর থেকে সেই সময়কার ভারতের ইতিহাসের কিছু ছবি পাওয়া যায়। এখানে রামায়ণ-মহাভারতের নানাবিধ গল্প আছে যা অন্তত সংস্কৃত মহাকাব্যে ও বাংলাদেশে অপ্রচলিত। এখানকার পণ্ডিতদের মত এই যে, জাভানিরা ভারতবর্ষে গিয়ে অথবা জাভায় সমাগত ভারতীয়দের কাছ থেকে লোকমুখে-প্রচলিত নানাগল্প শুনেছিল, সেইগুলোই এখানে রয়ে গেছে । অর্থাৎ, সে সময়ে ভারতবর্ষেই নানা স্থানে নানা গল্পের বৈচিত্ৰ্য ছিল । আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষের কোনো পণ্ডিতই রামায়ণ-মহাভারতের তুলনামূলক আলোচনা করেন নি । করতে গেলে ভারতের প্রদেশে প্রদেশে স্থানীয় ভাষায় যে-সব কাব্য আছে মূলের সঙ্গে সেইগুলি মিলিয়ে দেখা দরকার হয় । কোনো-এক সময়ে কোনো এক জার্মান পণ্ডিত এই কাজ করবেন বলে অপেক্ষা করে আছি । তার পরে তার লেখার কিছু প্ৰতিবাদ কিছু সমর্থন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ডাক্তার উপাধি পাব । এখানে পাকোয়ালাম লোকটিকে বড়ো ভালো লাগিল । শান্ত, গভীর, শিক্ষিত, চিন্তাশীল । জাভার প্রাচীন কলাবিদ্যা প্রভৃতিকে রক্ষা করবার জন্যে উৎসুক । যোগ্যকর্তার প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন। এখানকার সুলতান । তার বাড়িতে রাত্ৰে নাচ দেখবার নিমন্ত্রণ ছিল । সেখানে একজন ওলন্দাজ পণ্ডিতের কাছে শোনা গেল যে, এই জায়গাটির নাম ছিল অযোধ্যা ; ক্রমে তারই অপভ্ৰংশ হয়ে এখন যোগ্য নামে এসে ঠেকেছে । t এখানে যে নাচ দেখলুম। সে চারজন মেয়ের নাচ । রাজবংশের মেয়েরাই নাচেন । চারজনের মধ্যে দুজন ছিলেন সুলতানেরই মেয়ে । এখানে এসে যত নাচ দেখেছি সব চেয়ে এইটেই সুন্দর লেগেছে । বর্ণনা-দ্বারা এ বোঝানো অসম্ভব । এমন অনিন্দ্যসম্পূর্ণ রূপসৃষ্টি দেখা যায় না । এই-সব নাচের একটা দিক আছে যেটা এর বাইরের সৌন্দর্য, আর-একটা হচ্ছে বিশেষ বিশেষ ভঙ্গির বিশেষ অর্থ আছে । যারা সেগুলি জানে তারাই এর শোভার সঙ্গে এর ভাষাকে মিলিয়ে সম্পূৰ্ণ আনন্দ পেতে পারে । এখানে নাচশিক্ষার বিদ্যালয় আছে, সেখানে নিমন্ত্রণ পাওয়া গেছে । সেখানে গেলে এদের নাচের তত্ত্ব আরো কিছু বুঝতে পারব আশা করছি । আজ রাত্রে রামায়ণ থেকে যে অভিনয় হবে তার একটি সূচীপত্র পাঠাই । এটা পড়লে বোঝা যায়, এখানকার রামায়ণকথার ভাবখানা কী । বীেমা পয়লা অগস্টে যে-চিঠি পাঠিয়েছিলেন আজ দেড় মাস পরে সেটি আমার হাতে এল । আমার চিঠির কোনগুলো তোমাদের কাছে পৌছল। কোনগুলো পৌছল না, তা কেমন করে জািনব । ইতি ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৭ * S a যোগ্যকর্তা &\e কল্যাণীয়াসু রানী, এখানকার পালা শেষ হয়ে এল, শরীরটাও ক্লান্ত । এখানে যে-রাজার বাড়িতে আছি কাল রাত্রে তিনি ছায়াভিনয়ের একটি পালা দেখাবেন : তার পরে আমরা যাব বরোবুন্দরে । সেখানে দুদিন কীটিয়ে ফেরবার পথে বাটাভিয়াতে গিয়ে জাহাজে চড়ে বসব । ১। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লিখিত ।