পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ 8 と রবীন্দ্র-রচনাবলী SO - दिव्ि কল্যাণীয়াসু রানী, জাভার পালা সাঙ্গ করে যখন বাটাভিয়াতে এসে পৌছলুম, মনে হল খেয়াঘাটে এ.ে দাড়িয়েছি, এবার পাড়ি দিলেই ওপারে গিয়ে পৌঁছব নিজের দেশে । মনটা যখন ঠিক সেই ভাবে ডান মেলেছে এমন সময় ব্যাংকক থেকে আরিয়ামের টেলিগ্রাম এল যে, সেখানে আমার ডাক পড়েয়ে আমার জন্যে অভ্যর্থনা প্ৰস্তুত । আবার হাল ফেরাতে হল । সারাদিন খাটুনির পর আস্তাবলের রাস্তা এসে গাড়োয়ান যখন নতুন আরোহীর ফরমাশে ঘোড়াটাকে অন্য রাস্তায় বঁাক ফেরায় তখন তা অন্তঃকরণে যে-ভাবের উদয় হয় আমার ঠিক সেইরকম হল । ক্লান্ত হয়েছি, এ কথা মানতেই হবে এমন লোক দেখেছি (নাম করতে চাই নে) ভাগ্য অনুকূল হলে যারা টুরিসটুিব্রত গ্রহণ করে চিরজীবী অসাধ্য সাধন করতে পারত, কিন্তু তারা হয়তো পটলডাঙার কোন—এক ঠিকানায় ধ্রুব হয়ে গৃহক;ে নিযুক্ত । আর, আমি দেহটাকে কোণে বেঁধে মনটাকে গগনপথে ওড়াতে পারলে আরাম পাই অথ৷ সাত ঘাটের জল আমাকে খাওয়াচ্ছে । অতএব, চললুম শ্যামের পথে, ঘরের পথে নয় । এখানকার যে-সরকারি জাহাজে সিঙাপুরে যাবার কথা সে-জাহাজে অত্যন্ত ভিড়, তাই একটি ছোটো জাহাজে আমি আর সুরেন স্থান করে নিয়েছি । কাল শুক্রবার সকালে রওনা হওয়া গেছে সুনীতি ও ধীরেন একদিনের জন্য পিছিয়ে রয়ে গেল ; কেননা, কাল রাত্রে ভারতীয় সভ্যতা সম্বন্ধে সুনীতির একটা বক্তৃতার ব্যবস্থা ছিল । জাভার পণ্ডিতমণ্ডলীর মধ্যে সুনীতি যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন । তার কারণ, তার পাণ্ডিত্যে কোনো ফাকি নেই, যা-কিছু বলেন তা তিনি ভালো করেই VoffGNR | আমাদের জাহাজ দুটি দ্বীপ ঘুরে যাবে, তাই দুদিনের পথে তিন দিন লাগবে । এই জায়গাটাতে বিশ্বকর্মর মাটির ব্যাগ ছিড়ে অনেকগুলো ছোটাে ছোটাে দ্বীপ সমুদ্রের মধ্যে ছিটকে পড়েছে। সেগুলো ওলন্দাজদের দখলে । এখন যে-দ্বীপে জাহাজ নোঙর ফেলেছে তার নাম বিলিটন । মানুষ বেশি নেই ; আছে টিনের খনি, আর আছে সেইসব খনির ম্যানেজার ও মজুর । আশ্চর্য হয়ে বসে বসে ভাবছি, এরা সমস্ত পৃথিবীটাকে কিরকম দোহন করে নিচ্ছে। একদিন এরা সব বঁাকে বঁাকে পালের জাহাজে চড়ে অজানা সমুদ্রে বেরিয়ে পড়েছিল । পৃথিবীটাকে ঘুরে ঘুরে দেখে নিলে, চিনে নিলে, মেপে নিলে । সেই জেনে নেওয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস কত সাংঘাতিক সংকটে আকীর্ণ। মনে মনে ভাবি, ওদের স্বদেশ থেকে অতি দূর সমুদ্রকুলে এই সব দ্বীপে যেদিন ওরা প্রথম এসে পাল নামালে, সে কত আশঙ্কায় অথচ কত প্রত্যাশায় ভরা দিন । গাছপালা জীবজন্তু মানুষজন সেদিন সমস্তই নতুন । আর আজ ! সমস্তই সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত, সম্পূর্ণ অধিকৃত । 尊 এদের কাছে আমাদের হার মানতে হয়েছে । কেন, সেই কথা ভাবি । তার প্রধান কারণ, আমরা স্থিতিবান জাত, আর ওরা গতিবান । অন্যোন্যতন্ত্র সমাজবন্ধনে আমরা আবদ্ধ, ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যে ওরা বেগবান । সেইজন্যেই এত সহজে ওরা ঘুরতে পারল । ঘুরেছে বলেই জেনেছে আর পেয়েছে। সেই কারণেই জািনবার ও পাবার আকাঙক্ষণ ওদের এত প্রবল। স্থির হয়ে বসে থেকে আমাদের সেই আকাঙক্ষাটাই ক্ষীণ হয়ে গেছে। ঘরের কাছেই কে আছে, কী হচ্ছে, ভালো করে তা জানি নে, জানিবার ইচ্ছাও হয় না । কেননা, ঘর দিয়ে আমরা অত্যন্ত ঘেরা। জানিবার জোর নেই যাদের, পৃথিবীতে বঁচবার জোর তাদের কম । এই ওলন্দাজরা যে-শক্তিতে জাভা দ্বীপ সকলেরকমে অধিকার করে নিয়েছে, সেই শক্তিতেই জাভা দ্বীপের পুরাতত্ত্ব অধিকার করবার জন্যে তাদের এত পণ্ডিতের এত একাগ্রমনে তপস্যা । অথচ, এ পুরাতত্ত্ব অজানা নতুন দ্বীপেরই মতো তাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্বন্ধ-পূন্য । নিকটসম্পৰ্কীয় জ্ঞানের বিষয় সম্বন্ধেও আমরা উদাসীন, দূরদৃস্পিকীয় জ্ঞান সম্বন্ধেও এঁদের আগ্রহের অন্ত নেই । কেবল বাহুবলে নয়, এই জিজ্ঞাসার প্রবলতায় এরা জগৎটাকে অন্তরে বাহিরে জিতে