পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(፩ ዒ S রবীন্দ্র-রচনাবলী তারই একটি সম্পূর্ণ রূপ দিতে চাই। এখানকার ব্যবস্থা ছাত্র ও শিক্ষকদের সমবেত স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা হওয়া দরকার— সেই ব্যবস্থায় যখন এখানকার সমস্ত কর্ম সুসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে তখন এইটুকুর মধ্যে আমাদের সমস্ত দেশের সমস্যার পূরণ হতে পারবে । ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে সাধারণ হিতের অনুগত করে তোেলবার চর্চা রাষ্ট্ৰীয় বক্তৃতামঞ্চে দাড়িয়ে হতে পারে না, তার জন্যে ক্ষেত্র তৈরি করতে হয়— সেই ক্ষেত্ৰ আমাদের আশ্রম । একটা ছোটাে দৃষ্টান্ত তোমাকে দিই। আহারের রুচি এবং অভ্যাস সম্বন্ধে বাংলাদেশে যেমন কদাচার এমন আর কোথাও নেই | পাকশালা এবং পাকযন্ত্রকে অত্যন্ত অনাবশ্যক আমরা ভারগ্রান্ত করে তুলেছি । এ সম্বন্ধে সংস্কার করা বড়ো কঠিন । স্বজাতির চিরন্তন হিতের প্রতি লক্ষ করে আমাদের ছাত্ররা ও শিক্ষকেরা পথ্য সম্বন্ধে নিজের রুচিকে যথোচিতভাবে – ত করবার পণ গ্ৰহণ করতে যদি পারত তা হলে আমি যাকে শিক্ষা বলি সেই শিক্ষা সার্থক হত্য ন-নয়ে সাতাশ হয় এইটাে মুখস্থ করাকে আমরা শিক্ষা বলে গণ্য করে থাকি, সে সম্বন্ধে ছেলেরা কে মতেই ভুল না করে তার প্রতি লক্ষ না করাকে গুরুতর অপরাধ বলে জানি, কিন্তু যে জিনিসটাকে ১ স্থা করি সে সম্বন্ধে শিক্ষাকে তার চেয়ে কম দাম দেওয়াই মূখতা। আমাদের প্রতিদিনের খাওয়া সম্বন্ধে আমাদের সমস্ত দেশের কাছে দায়িত্ব আছে এবং সে দায়িত্ব অতি গুরুতর— সম্পূর্ণ উপলব্ধির সঙ্গে এটাকে মনে রাখা আমি এদের জিজ্ঞাসা করলুম, “ কেউ কোনো অপরাধ করলে এখানে তার বিধান কী ।” একটি মেয়ে বললে, “আমাদের কোনো শাসন নেই, কেননা আমরা নিজেদের শাস্তি দিই ।” আমি বললুম, “আর-একটু বিস্তারিত করে বলে । কেউ অপরাধ করলে তার বিচার করবার জন্যে তোমরা কি বিশেষ সভা ডাকো । নিজেদের মধ্যে থেকে কাউকে কি তোমরা বিচারক নির্বাচন করে । শান্তি দেবার বিধিই বা কী রকমের ।” একটি মেয়ে বললে, “বিচারসভা যাকে বলে তা নয়, আমরা বলা-কওয়া করি । কাউকে অপরাধী করাই শান্তি, তার চেয়ে শাস্তি আর নেই ।” একটি ছেলে বললে, “সেও দুঃখিত হয় আমরাও দুঃখিত হই, বাস চুকে যায় ।” আমি বললুম, “মনে করো কোনো ছেলে যদি ভাবে তার প্রতি অযথা দোষারোপ হচ্ছে তা হলে তোমাদের উপরেও আর-কারও কাছে কি সে ছেলের আপিল চলে ।” ছেলেটি বললে, “তখন আমরা ভোট নিই- অধিকাংশের মতে যদি স্থির হয় যে সে অপরাধ করেছে তা হলে তার উপরে আর কথা চলে না ।” আমি বললুম, “কথা না চলতে পারে, কিন্তু তবু ছেলেটি যদি মনে করে অধিকাংশই তার উপরে অন্যায় করছে তা হলে তার কোনো প্ৰতিবিধান আছে কি ৷” একটি মেয়ে উঠে বললে, “তা হলে হয়তো আমরা শিক্ষকদের পরামর্শ নিতে যাই- কিন্তু এরকম ঘটনা কখনো ঘটে নি।” আমি বললুম, “ যে-একটি সাধনার মধ্যে সকলে আছ সেইটোতেই আপনা হতেই অপরাধ থেকে তোমাদের রক্ষা করে ।” ওদের কর্তব্য কী প্রশ্ন করাতে বললে “অন্য দেশের লোকেরা নিজের কাজের জন্য অর্থ চায়, সম্মান চায়, আমরা তার কিছুই চাই নে, আমরা সাধারণের হিত চাই । আমরা গায়ের লোকদের শিক্ষা দেবার জন্যে পাড়াগায়ে যাই— কী করে পরিষ্কার হয়ে থাকতে হয়, সকল কাজ কী করে বুদ্ধিপূর্বক করতে হয়, এই-সব তাদের বুঝিয়ে দিই। অনেক সময়ে আমরা তাদের মধ্যে গিয়েই বাস করি, নাটক-অভিনয় করি, দেশের অবস্থার কথা বলি ।” তার পরে আমাকে দেখাতে চাইলে কাকে ওরা বলে সজীব সংবাদপত্র । একটি মেয়ে বললে, “ দেশের সম্বন্ধে আমাদের অনেক খবর জানতে হয়, আমরা যা জানি তাই আবার অন্য সবাইকে জানানো আমাদের কর্তব্য । কেননা, ঠিকমত করে তথ্যগুলিকে জানতে এবং তাদের সম্বন্ধে চিস্তা