পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ما ۹ ) মজিয়ম । নানাপ্রকার মজিয়মের জালে এরা সমস্ত গ্রাম-শহরকে জড়িয়ে ফেলেছে। সে মজিয়ম আমাদের শাস্তিনিকেতনের লাইব্রেরির মতো অকারী (passive) নয়, সকারী (active) । রাশিয়ার region study অর্থাৎ স্থানিক তথ্যসন্ধানের উদ্যোগ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। এরকম শিক্ষাকেন্দ্ৰ প্ৰায় দু হাজার আছে, তার সদস্যসংখ্যা সত্তর হাজার পেরিয়ে গেছে। এই সব কেন্দ্ৰে তত্তৎ স্থানের অতীত ইতিহাস এবং অতীত ও বর্তমানের আর্থিক অবস্থার অনুসন্ধান হয় । তা ছাড়া সে-সব জায়গার উৎপাদিকা শক্তি কিরকম শ্রেণীর কিংবা কোনো খনিজ পদার্থ সেখানে প্ৰচ্ছন্ন আছে কি না, তার খোজ হয়ে থাকে। এই-সব কেন্দ্রের সঙ্গে যে-সব মজিয়ম আছে তারই যোগে সাধারণের শিক্ষাবিস্তার একটা গুরুতর কর্তব্য । সোভিয়েট রাষ্ট্রে সর্বসাধারণের জ্ঞানোন্নতির যে নবযুগ এসেছে, এই স্থানিক তথ্যসন্ধানের ব্যাপক চর্চা এবং তৎসংশ্লিষ্ট ম্যজিয়ম তার একটা প্ৰধান প্ৰণালী । এইরকম নিকটবর্তী স্থানের তথ্যানুসন্ধান শান্তিনিকেতনে কালীমোহন কিছু পরিমাণে করেছেন ; কিন্তু এই কাজের সঙ্গে আমাদের ছাত্র ও শিক্ষকেরা যুক্ত না থাকাতে তাদের এতে কোনো উপকার হয় নি । সন্ধান করবার ফল পাওয়ার চেয়ে সন্ধান করার মন তৈরি করা কম কথা নয় । কলেজ-বিভাগের ইকনমিকস ক্লাসের ছাত্রদের নিয়ে প্রভাত এইরকম চর্চার পত্তন করছেন শুনেছিলুম ; কিন্তু এ কাজটা আরো বেশি সাধারণভাবে করা দরকার, পাঠভবনের ছেলেদেরও এই কাজে দীক্ষিত করা চাই, আর এইসঙ্গে সমস্ত প্ৰাদেশিক সামগ্রীর মজিয়াম স্থাপন করা আবশ্যক । এখানে ছবির ম্যজিয়মের কাজ কিরকম চলে তার বিবরণ শুনলে নিশ্চয় তোমার ভালো লাগবে । মস্কো শহরে ট্রেটিয়াকভ গ্যালারি (Tretyakov Gallery) নামে এক বিখ্যাত চিত্ৰভাণ্ডার আছে । সেখানে ১৯২৮ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত এক বছরের মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ লোক ছবি দেখতে এসেছে । যত দর্শক আসতে চায় তাদের ধরানো শক্ত হয়ে উঠেছে । সেইজন্যে ছুটির দিনে আগে থাকতে দর্শকদের নাম রেজেষ্টি করানো দরকার হয়েছে । ১৯১৭ খ্রীস্টাব্দে সোভিয়েট-শাসন প্রবর্তিত হবার পূর্বে যে-সব দর্শক এইরকম গ্যালারিতে আসত তারা ধনী মানী জ্ঞানী দলের লোক এবং তারা, যাদের এরা বলে। bourgeoisie, অর্থাৎ পরিশ্রমজীবী । এখন আসে অসংখ্য স্বশ্রমজীবীর দল, যথা রাজমিস্ত্রি, লোহার, মুদি, দরজি ইত্যাদি । আর আসে সোভিয়েট সৈনিক, সেনানায়ক, ছাত্র এবং চাষী-সম্প্রদায় । আর্টের বোধ ক্ৰমে ক্রমে এদের মনে জাগিয়ে তোলা আবশ্যক । এদের মতো আনাডিদের পক্ষে চিত্রকলার রহস্য প্রথম দৃষ্টিতে ঠিকমত বোঝা অসাধ্য । দেয়ালে দেয়ালে ছবি দেখে দেখে এরা ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, বুদ্ধি যায় পথ হারিয়ে । এই কারণে প্রায় সব মজিয়মেই উপযুক্ত পরিচায়ক রেখে দেওয়া হয়েছে। ম্যজিয়মের শিক্ষাবিভাগ কিংবা অন্যত্র তদনুরূপ রাষ্ট্রকর্মশালায় যে-সমস্ত বৈজ্ঞানিক কমী আছে তাদেরই মধ্যে থেকে পরিচায়ক বাছাই করে নেওয়া হয় । যারা দেখতে আসে তাদের সঙ্গে এদের দেনাপাওনার কোনো কারবার থাকে না । ছবিতে যে বিষয়টা প্রকাশ করছে সেইটে দেখলেই যে ছবি দেখা হয়, দর্শকেরা যাতে সেই ভুল না করে পরিদর্শায়িতার সেটা জানা চাই । fsgKVg3 Kfar (composition). VOK Kofkar (colour scheme) VOKI VOISIR, VOKI অবকাশ (space) তার উজ্জ্বলতা (illumination), যাতে করে তার বিশেষ সম্প্রদায় ধরা পড়ে সেই তার বিশেষ আঙ্গিক (technique)- এ-সকল বিষয়ে আজও অল্প লোকেরই জানা আছে । এইজন্যে পরিচায়কের বেশ দস্তুরমত শিক্ষা থাকা চাই, তবেই দর্শকদের ঔৎসুক্য ও মনোযোগ সে জাগিয়ে রাখতে পারে । আর-একটি কথা তাকে বুঝতে হবে, ম্যজিয়মে কেবল একটিমাত্র ছবি নেই, অতএব একটা ছবিকে চিনে নেওয়া দর্শকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয় ; মজিয়মে যে-সব বিশেষ শ্রেণীর ছবি রক্ষিত আছে তাদের শ্রেণীগত রীতি বোঝা চাই । পরিচায়কদের কর্তব্য কয়েকটি করে বিশেষ ছাদের ছবি বেছে নিয়ে তাদের প্রকৃতি বুঝিয়ে দেওয়া । আলোচ্য ছবিগুলির সংখ্যা খুব বেশি হলে চলবে না এবং সময়ও বিশ মিনিটের বেশি হওয়া ঠিক নয় । ছবির যে-একটি স্বকীয় ভাষা, একটি ছন্দ আছে সেইটেই বুঝিয়ে দেবার বিষয় ; ছবির রূপের সঙ্গে ছবির বিষয়ের ও ভাবের সম্বন্ধ কী