পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি १४१ যে আলোচনা হয়ে থাকে তার সফলতা কতদূর আমি আনাড়ি তা বুঝি নে, কিন্তু তার থেকে প্রজাদের যে শিক্ষা হতে পারত তা একটুও হল না । আর-একটা অংশ : Whenever questions of cultural-economic construction in the national republics and districts come before the organs of the Soviet government, they are settled not on the lines of guardianship but on the lines of the maximum development of independence among the broad masses of workers and peasants and of initiative of the local Soviet organs. যাদের কথা বলা হল তারা হচ্ছে পিছিয়ে-পড়া জাত । তাদের আগাগোড়া সমস্তই ডিফিকালটিজ, কিন্তু এই ডিফিকালটিজ সরিয়ে দেবার জন্যে সোভিয়েটরা দুশো বছর চুপচাপ বসে থাকবার বন্দোবস্ত করে নি । ইতিমধ্যে দশ বছর কাজ করেছে । দেখেশুনে ভাবছি, আমরা কি উজবেকদের চেয়ে, তুর্কমানীদের চেয়েও, পিছিয়ে-পড়া জাত । আমাদের ডিফিকালটিজের মাপ কি এদের চেয়েও বিশগুণ বেশি । একটা কথা মনে পড়ল । এদের এখানে খেলনার মজিয়ম আছে । এই খেলনা সংগ্রহের সংকল্প বহুকাল থেকে আমার মনের মধ্যে ঘুরেছে । তোমাদের নন্দনালয়ে কলাভাণ্ডারে এই কাজ অবশেষে আরম্ভও হল । রাশিয়া থেকে কিছু খেলনা পেয়েছি । অনেকটা আমাদেরই মতো । পিছিয়ে-পড়া জাতের সম্বন্ধে আরো কিছু জানাবার আছে । কাল লিখব। পরশু সকালে পৌছব নিয়ইয়র্কে— তার পরে লেখবার যথেষ্ট অবসর পাব কি না কে জানে । ইতি ৭ অক্টোবর ১৯৩০ ܠ ܐ পিছিয়ে-পড়া জাতের শিক্ষার জন্যে সোভিয়েট রাশিয়ায় কিরকম উদ্যোগ চলছে সে কথা তোমাকে লিখেছি । আজ দুই-একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক । উরাল পর্বতের দক্ষিণে বাষকিরদের বাস । জারের আমলে সেখানকার সাধারণ প্ৰজার অবস্থা আমাদের দেশের মতোই ছিল । তারা চির-উপবাসের ধার দিয়ে দিয়েই চলন্ত । বেতনের হার ছিল তাদের ছিল নিতান্তই মজুরের কাজ । বিপ্লবের পরে এই দেশের প্রজাদের স্বতন্ত্র শাসনের অধিকার দেবার চেষ্টা আরম্ভ হল । প্ৰথমে যাদের উপর ভার পড়েছিল তারা ছিল আগেকার আমলের ধনী জোতদার, ধর্মযাজক এবং বর্তমানে আমাদের ভাষায় যাদের বলে থাকি শিক্ষিত । সাধারণের পক্ষে সেটাতে সুবিধা হল না । আবার এই সময়ে উৎপাত আরম্ভ করলে কলচাকের সৈন্য । সে ছিল জার-আমলের পক্ষপাতী, তার পিছনে ছিল ক্ষমতাশালী বহিঃশত্রুদের উৎসাহ এবং আনুকূল্য । সোভিয়েটরা যদি বা তাদের তাড়ালে, এল ভীষণ দুর্ভিক্ষ । দেশে চাষ-বাসের ব্যবস্থা ছারখার হয়ে গেল । ১৯২২ খৃস্টােব্দ থেকে সোভিয়েট আমলের কাজ ঠিকমত শুরু হতে পেরেছে । তখন থেকে দেশে শিক্ষাদান এবং অর্থোৎপত্তির ব্যবস্থা প্রবলবেগে গড়ে উঠতে লাগল। এর আগে বাষকিরিয়াতে নিরক্ষরতা ছিল প্রায় সর্বব্যাপী । এই কয় বছরের মধ্যে এখানে আটটি নর্মল স্কুল, পাচটি কৃষিবিদ্যালয়, একটি ডাক্তারি শিক্ষালয়, অর্থকরী বিদ্যা শেখাবার জন্যে দুটি, কারখানার কাজে হাত পাকাবার জন্যে সতেরোটি, প্ৰাথমিক শিক্ষার জন্যে ২৪৯৫টি এবং মধ্য-প্ৰাথমিকের জন্যে ৮৭টি স্কুল শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাষকিরিয়াতে দুটি আছে সরকারি থিয়েটার, দুটি মজিয়াম, চৌদ্দটি পৌরগ্রন্থাগার, ১১২টি গ্রামের পাঠগৃহ (reading room), ৩০টি সিনেমা শহরে এবং ৪৬টি গ্রামে,