পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VN 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী হবে, তেত্ৰিশ কোটির ভার নেবার যোগ্যতা আমাদের নেই । কিন্তু, তাই বলে লিজা করব না । কর্মক্ষেত্রের পরিধি নিয়ে গৌরব করতে পারব। এ কল্পনাও আমাদের মনে নেই, কিন্তু তার সত্য নিয়ে ২ যেন গৌরব করতে পারি। কখনো আমাদের সাধনায় যেন এ দৈন্য না থাকে যে, পল্লীর লোকের পক্ষে অতি অল্পটুিকুই যথেষ্ট । ওদের জন্যে উচ্ছিষ্টের ব্যবস্থা করে যেন ওদের অশ্রদ্ধা না করি । শ্রদ্ধয়া দেয়ম । পল্লীর কাছে আমাদের আত্মোৎসর্গের য়ে নৈবেদ্য তার মধ্যে শ্রদ্ধার যেন কোনো অভাব না। . ६९65 ।। SovOA কোরীয় যুবকটি সাধারণ জাপানীর চেয়ে মাথায় বড়ো । ইংরেজি সহজে বলেন, উচ্চারণে জড়তা নেই । আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলুম, “কোরিয়ায় জাপানী রাষ্ট্রশাসন তোমার পছন্দ নয় ? ? "ן וף" “কেন । জাপানী আমলে তোমাদের দেশে পূর্বেকার চেয়ে কি ব্যবস্থা ভালো হয় নি ।” “তা হয়েছে। কিন্তু আমাদের যে দুঃখ, সেটা সংক্ষেপে বলতে গেলে দাড়ায়, জাপানী রাজত্ব ধনিকের রাজত্ব । কোরিয়া তার মূনাফার উপায়, তার ভোজ্যের ভাণ্ডার । প্রয়োজনের আসবাবকে মানুষ উজ্জ্বল করে রাখে, কারণ সেটা তার আপনি সম্পত্তি, তাকে নিয়ে তার অহমিকা । কিন্তু মানুষ তো থালা ঘটি বাটি কিংবা গাড়োয়ানের ঘোড়া বা গোয়ালের গোরু নয় যে বাহ্য যত্ন করলেই তার পক্ষে যথেষ্ট ।” “তুমি কি বলতে চাও জাপান যদি কৈারিয়ার সঙ্গে প্রধানত আর্থিক সম্বন্ধ না পাতিয়ে তোমাদের ’পরে রাজপ্ৰতাপের সম্বন্ধ খােটাত, অর্থাৎ বৈশ্যরাজ না হয়ে ক্ষত্ৰিয়রাজ হত, তা হলে তোমাদের পরিতাপের কারণ থাকত না ।” “আর্থিক সম্বন্ধের যোগে বিরাট জাপানের সহস্ৰমুখী ক্ষুধা আমাদের শোষণ করে ; কিন্তু রাজপ্ৰতাপের সম্বন্ধ ব্যক্তিগত, সীমাবদ্ধ- তার বোঝা হালকা | রাজার ইচ্ছা কেবল যদি শাসনের ইচ্ছা হয়, শোষণের ইচ্ছা না হয়, তবে তাকে স্বীকার করেও মোটের উপর সমস্ত দেশ আপনি স্বাতন্ত্র্য ও আত্মসম্মান রাখতে পারে । কিন্তু ধনিকের শাসনে আমাদের গোটা দেশ আর-একটি গোটা দেশের পণ্যদ্রব্যে পরিণত । আমরা লোভের জিনিস ; আত্মীয়তার না, গৌরবের না ।” “এই-যে কথাগুলি ভাবিছ এবং বলছি, এই-যে সমষ্টিগতভাবে জাতীয় আত্মসম্মানের জন্যে তোমার আগ্রহ, তার কি কারণ এই নয় যে, জাপানের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে তোমরা আধুনিক যুগের রাষ্টিক শিক্ষায় দীক্ষিত ।” কোরীয় যুবক দ্বিধার ভাবে চুপ করে রইলেন । আমি বললুম, “চেয়ে দেখো সামনে ঐ চীনদেশ। সেখানে স্বজাতীয় আত্মসম্মানবােধ শিক্ষার অভাবে দেশের জনসাধারণের মধ্যে অপ্ৰবুদ্ধ । তাই দেখি, ব্যক্তিগত ক্ষমতাপ্ৰাপ্তির দুরাশায় সেখানে কয়েকজন লুব্ধ লোকের হানাহানি-কাটাকাটির ঘূৰ্ণিপাক । এই নিয়ে লুটপাট-অত্যাচারে, ডাকাতের হাতে, সৈনিকের হাতে, হতভাগ্য দেশ ক্ষতবিক্ষত, রক্তে প্লাবিত, অসহায়ভাবে দিনরাত সন্ত্রস্ত । শিক্ষার জোরে যেখানে সাধারণ লোকের মধ্যে স্বাধিকারবোধ স্পষ্ট না হয়েছে সেখানে স্বদেশী বা বিদেশী দুরাকাঙক্ষীদের হাতে তাদের নির্যাতন ঠেকাবে কিসে। সে অবস্থায় তারা ক্ষমতালোলুপের স্বার্থসাধনের উপকরণমাত্র হয়ে থাকে । তুমি তোমার দেশকে ধনীর উপকরণদশাগ্ৰস্ত বলে আক্ষেপ