পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रांशिद्ध ठि V2 (? করছিলে, সেই পরের উপকরণদশা তাদের কিছুতেই ঘোচে না যারা মূঢ়, যারা কাপুরুষ, ভাগ্যের মুখপ্রত্যাশী, যারা আত্মকর্তৃত্বে আস্থাবান নয়। কোরিয়ার অবস্থা জানি নে, কিন্তু সেখানে নবযুগের শিক্ষার প্রভাবে যদি সাধারণের মধ্যে স্বাধিকারবোধের অঙ্কুরমাত্র উদগত হয়ে থাকে। তবে সে শিক্ষা কি জাপানের কাছ থেকেই পাও নি ।” “কার কাছ থেকে পেয়েছি তাতে কী আসে যায় । শক্ৰ হােক, মিত্ৰ হােক, যে-কেউ আমাদের যে উপায়ে জাগিয়ে তুলুক-না কেন, জাগরণের যা ধর্ম তার তো কাজ চলবে ।” “ সে কথা আমি মানি, সে তর্ক আমার নয় । বিচারের বিষয় এই যে, তোমার দেশে শিক্ষাবিস্তার এতটা হয়েছে কি না যাতে দেশের অধিকাংশ লোক স্বাধিকার উপলব্ধি এবং সেটা যথার্থভাবে দাবি করতে পারে । যদি তা না হয়ে থাকে। তবে সেখানে বিদেশী নিরস্ত হলেও সর্বসাধারণের যোগে আত্মশাসন ঘটবে না, ঘটবে কয়েকজনের দৌরাত্ম্যে আত্মবিপ্লব । এই স্বল্প লোকের ব্যক্তিগত স্বার্থবোধকে সংযত করবার একমাত্র উপায় বহু লোকের সমষ্টিগত স্বার্থবোধের উদবোধন ৷” “ যে পরিমাণ ও যে প্ৰকৃতির শিক্ষায় বৃহৎভাবে সমস্ত দেশের চৈতন্য হতে পারে সেটা আমরা সম্পৰ্ণভাবে পরের হাত থেকে প্রত্যাশা করব কেমন করে ।” “ তোমরা শিক্ষিত লোকেরা দেশে সেই শিক্ষার অভাব যদি অনুভব কর তবে এই শিক্ষাবিস্তারের ' সাধনাকেই সর্বপ্রথম ও সর্বপ্ৰধান কর্তব্য-রূপে নিজেরাই গ্ৰহণ করবে না কেন । দেশকে বাচাতে গেলে কেবল তো ভাবুকতা নয়, জ্ঞানের প্রয়োজন করে । আমার মনে আরো একটি চিন্তার বিষয় আছে । ভৌগোলিক ঐতিহাসিক বা জাতীয়প্ৰকৃতিগত কারণে কোরিয়া অনেককাল থেকেই দুর্বল। আজকের দিনে যুদ্ধবিগ্রহ যখন বৈজ্ঞানিক-সাধনা-সাধ্য ও প্ৰভূতব্যয়সাধ্য তখন জাপান হতে নিজের শক্তিতে “পাবি নে সে কথা স্বীকার করতেই হবে ।” “যদি না পার তবে এ কথাও মানতে হবে যে, দুর্বল কেবল নিজের বিপদ নয়, অন্যের বিপদ ঘটায় । দুর্বলতার গহবর-কেন্দ্রে প্রবলের দুরাকাঙক্ষণ আপনিই দূর থেকে আকৃষ্ট হয়ে আবর্তিত হতে থাকে । সওয়ার সিংহের পিঠে চড়ে না ; ঘোড়াকেই লাগামে বাধে । মনে করো, রাশিয়া যদি কোরিয়ায় ধবজা গেডে বসে। তবে সেটা, কেবল কোরিয়ার পক্ষে নয়, জাপানের পক্ষেও বিপদ । এমন অবস্থায় অন্য প্ৰবলকে ঠেকাবার জন্যই কোরিয়ায় জাপানের নিজের শক্তিকেই প্ৰবল করতে হয় । এমন অবস্থায় কোনো একদিন জাপান বিনা পরাভাবেই কোরিয়ার ক্ষীণ হস্তেই কোরিয়ার” ভাগ্যকে সমাপণ করবে, এ সম্ভবপর নয় । এর মধ্যে জাপানের শুধু মুনফার লোভ না, প্ৰাণের দায় ।” “আপনার প্রশ্ন এই যে, তা হলে কোরিয়ার উপায় কী । জানি, আধুনিক যুদ্ধের উপযোগী সৈন্যদল এ-সমস্ত তৈরি করা, চালনা করা, বর্তমান অবস্থায় আমাদের কল্পনার অতীত । সেই উদ্দেশ্যে চেষ্টা করাও বিদেশী শাসনাধীনে অসম্ভব । তবু তাই বলে হাল ছেড়ে দেব, এ কথা বলতে পারি। নে ৷” “এ কথা বলা ভালে) ও না । হাল ছাড়ব না, কিন্তু কোন দিক বাগে হাল চালাতে হবে সেটা যদি না ভাবি ও বৃদ্ধিসংগত তার একটা জবাব না দিই। তবে মুখে যতই আস্ফালন করি, ভাষান্তরে তাকেই বলে হাল ছেডে দেওয়া ।” “আমি কী ভাবি তা বলা যাক । এমন একটা সময় আসবে যখন পৃথিবীতে জাপানী চীনীয় রুশীয় কোরীয় প্রভৃতি নানা জাতির মধ্যে আর্থিক-স্বার্থগিত রাষ্ট্রীয় প্রতিযোগিতাই সব চেয়ে প্রধান ঐতিহাসিক ঘটনারূপে থাকবে না । কেন থাকবে না তা বলি । যে দেশের মানুষকে চলিত ভাষায় স্বাধীন বলে থাকে তাদেরও ঐশ্বর্য এবং প্ৰতাপের ক্ষেত্রে দুই ভাগ | এক ভাগের অল্প লোকে ঐশ্বর্য ভোগ করে, আর-এক ভাগের অসংখ্যা দূৰ্ভাগা সেই ঐশ্বর্যের ভার বয় ; এক ভাগের দু-চারজন লোক প্ৰতাপ যজ্ঞশিখা নিজের ইচ্ছায় উদ্দীপিত করে, আর-এক ভাগের বিস্তর লোক ইচ্ছা না থাকলেও নিজের অস্থিমাংস দিয়ে সেই প্ৰতাপের ইন্ধন জোগায় । সমস্ত পৃথিবী জুড়ে যুগে যুগে মানুষের মধ্যে