পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

votOS রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মানুষের বিলাপগান একদিন শুনেছিলেম পথিক ভিখারির মুখে আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে । দেশ-বিদেশে বেড়াই ঘুরে । সেই নিরক্ষর গায়ের লোকের মুখেই শুনেছিলেম।-- তোরই ভিতর অতল সাগর । সেই পাগলাই গেয়েছিল— মনের মধ্যে মনের মানুষ করো অন্বেষণ । সেই অন্বেষণেরই প্রার্থনা বেদে আছে, আবিরাবীমা এধি— পরম মানবের বিরাটররূপে র্যার স্বতঃপ্ৰকাশ আমারই মধ্যে তার প্রকাশ সার্থক হােক । দুই অথর্ববেদ বলেছেন ঋতং সত্যং তপো রাষ্ট্রং শ্রমো ধৰ্মশ্চ কর্মচ ভূতং ভবিষ্যদৃচ্ছিষ্টে বীর্যং লক্ষ্মীর্বলং বলে । ঋত সত্য তপস্যা রাষ্ট্র শ্রম ধর্ম কর্ম ভূত ভবিষ্যৎ বীর্য সম্পদ বল সমস্তই উচ্ছিষ্টে অর্থাৎ উদ্যবৃত্তে আছে । অর্থাৎ মানবধর্ম বলতে আমরা যা বুঝি প্রকৃতির প্রয়োজন সে পেরিয়ে, সে আসছে অতিরিক্ততা থেকে । জীবজগতে মানুষ বাড়তির ভাগ । প্রকৃতির বেড়ার মধ্যে তাকে কুলোল না । ইতিপূর্বে জীবাণুকোষের সঙ্গে সমগ্র দেহের সম্বন্ধ আলোচনা করেছিলুম। অথর্ববেদের ভাষায় বলা যেতে পারে, প্ৰত্যেক জীবকোষ তার অতিরিক্তের মধ্যে বাস করে । সেই অতিরিক্ততাতেই উৎপন্ন হচ্ছে স্বাস্থ্য ভূত ভবিষ্যৎ । জীবকোষ এই সমগ্ৰ দেহগত বিভূতি উপলব্ধি করে না । কিন্তু, মানুষ প্রকৃতিনির্দিষ্ট আপন ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যকে পেরিয়ে যায় ; পেরিয়ে গিয়ে যে আত্মিক সম্পদকে উপলব্ধি করে অথর্বদেব তাকেই বলেছেন, ঋতং সত্যম। এ-সমস্তই বিশ্বমানবমনের ভূমিকায়, যারা একে স্বীকার করে তারাই মনুষ্যত্বের পদবীতে এগোতে থাকে । অথর্ববেদ যে-সমস্ত গুণের কথা বলেছেন তার সমস্তই মানবগুণ । তার যোগে আমরা যদি আমাদের জীবধর্মসীমার অতিরিক্ত সত্তাকে অনুভব করি তবে বলতে হবে, সে সত্তা কখনোই অমানব নয়, তা মানবব্রহ্ম । আমাদের ঋতে সত্যে তপস্যায় ধর্মে কর্মে সেই বৃহৎ মানবকে আমরা আত্মবিষয়ীকৃত করি । এই কথাটিকেই উপনিষদ আর-এক রকম করে বলেছেন এষাস্য পরম গতি রেষাস্য পরমা সম্পদ এযোহস্য পরমো লোক এযোহস্য পরম আনন্দঃ । এখানে উনি এবং এ, এই দুয়ের কথা । বলছেন, উনি এর পরম গতি, উনি এর পরম সম্পদ, উনি এর পরম আশ্রয়, উনি এর পরম আনন্দ । অর্থাৎ, এর পরিপূর্ণতা তার মধ্যে । উৎকর্ষের পথে এ চলেছে সেই বৃহতের দিকে, এর ঐশ্বর্য সেইখানেই, এর প্রতিষ্ঠা তার মধ্যেই, এর শাশ্বত আনন্দের ধন ঘা-কিছু সে তাতেই। এই তিনি বস্তু-অবচ্ছিন্ন একটা তত্ত্বমাত্র নন । যাকে বলি, “আমার আমি সে যেমন অন্তরতমভাবে আমার একান্ত বোধবিষয় তিনিও তেমনি । যখন তার প্রতি ভক্তি জেগে ওঠে, যখন তাতে আনন্দ