পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰহাসিনী তা হলে হঠাৎ বুক উঠিবে যে কঁপিয়া বৈতরণীতে যবে যাব খেয়া চাপিয়া। এ কী গোরো। কাজ কী এ কল্পনাবিহারে, সেন্টিমেন্টালিটি বলে লোকে ইহারে। মারে। তবু বঁচিবার আবদার খোকামি, সংসারে এর চেয়ে নেই ঘোর বোকামি। এটা তো আধুনিকার সহিবে না কিছুতেই; এসটিমেশনে তার পড়ে যাব নিচুতেই। অতএব, মন, তোর কলসি ও দড়ি আনি, অতলে মারিস ডুব মিড়-ভিকটােরিয়ান। কোনো ফল ফলিবে না আঁখিজল-সিচনে; শুকনো হাসিটা। তবে রেখে যাই পিছনে। শেষ বেলা কেটে যাক ঠাট্টায় ঠাট্টায়। তোমাদের মুখে থাক হস্যের রোশনাইকিছু সীরিয়াস কথা বলি তবু, দোষ নাই। কখনো দিয়েছে দেখা হেন প্ৰভাশালিনী শুধু এ কালিনী নয়, যারা চিরকালিনী। এ কথাটা বলে যাব মোর কনফেশানেই তাদের মিলনে কোনো ক্ষণিকের নেশা নেই। জীবনের সন্ধ্যায় তাহাদেরি বরণে শেষ রবিরেখা রবে সোনা-আঁকা স্মরণে। সুর-সুরধুনীধারে যে অমৃত উথলে৷ মাঝে মাঝে কিছু তার ঝরে পড়ে ভূতলে, এ জনমে। সে কথা জানার সম্ভাবনা কেমনে ঘটিবে। যদি সাক্ষাৎ পাব না। আমাদের কত ক্ৰটি আসনে ও শয়নে, ক্ষমা ছিল চিরদিন তাহদের নয়নে। প্ৰেমদীপ জ্বেলেছিল পুণ্যের আলোকে, মধুর করেছে তারা যত কিছু ভালোকে। নানারাপে ভোগসুধা যা করেছে বরষন তারে শুচি করেছিল সুকুমার পরাশন। দামি যাহা মিলিয়াছে জীবনের এ পারে মরণের তীরে তারে নিয়ে যেতে কে পারে। তবু মনে আশা করি মৃত্যুর রাতেও তাহাদেরি প্ৰেম যেন নিতে পারি পাথেয়। আর বেশি কাজ নেই, গেছে কেটে তিনকাল, যে কালে এসেছি আজ সে কালটা সিনিকাল! কিছু আছে যার লাগি সুগভীর নিশ্বাস জেগে ওঠে- ঢাকা থাক তার প্রতি বিশ্বাস।