পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাসের দেশ প্ৰথম দৃশ্য রাজপুত্র ও সদাগরপুত্ৰ রাজপুত্র । আর তো চলছে না, বন্ধু । সদাগর । কিসের চাঞ্চল্য তোমার, রাজকুমার । রাজপুত্র । কেমন ক'রে বলব। কিসের চাঞ্চল্য বলো দেখি ঐ হাসের দলের, বসন্তে যারা ঝাকে বঁাকে চলেছে হিমালয়ের দিকে । সদাগর । সেখানে যে ওদের বাসা । রাজপুত্র । বাসা যদি, তবে ছেড়ে আসে কেন । না না, ওড়বার আনন্দ, অকারণ আনন্দ । সদাগর । তুমি উড়তে চাও ? রাজপুত্র । চাই বৈকি । সদাগর। বুঝতেই পারি। নে তোমার কথা । আমি তো বলি অকারণ ওড়ার চেয়ে সকারণ খাচায় বন্ধ থাকাও ভালো । রাজপুত্র । সকারণ বলছ কেন । সদাগর । আমরা-যে সোনার খাচায় থাকি শিকলে বাধা দানাপানির লোভে । রাজপুত্র । তুমি বুঝতে পারবে না, বুঝতে পারবে না । সদাগর। আমার ও দোষটা আছে, যা বোঝা যায় না তা আমি বুঝতেই পারি নে। একটু স্পষ্ট করেই বলো-না, কী তোমার অসহ্য হল । রাজপুত্র। রাজবাড়ির এই একঘেয়ে দিনগুলো । সদাগর । একঘেয়ে বল তাকে ? কতরকম আয়োজন, কত উপকরণ । রাজপুত্র । নিজেকে মনে হয় যেন সোনার মন্দিরে পাথরের দেবতা । কানের কাছে কেবল একই আওয়াজে বাজছে শঙ্খ র্কাসর ঘণ্টা । নৈবেদ্যের বাধা বরাদ, কিন্তু ভোগে রুচি নেই । এ কি সহ্য হয় । সদাগর। আমাদের মতো লোকের তো খুবই সহ্য হয় । ভাগ্যিস বাধা বরাদ্দ। বাধন ছিড়লেই তো মাথায় হাত দিয়ে পড়তে হয় । যা পাই তাতেই আমাদের ক্ষুধা মেটে । আর, যা পাও না। তাই দিয়েই তোমরা মনে মনে ক্ষুধা মেটাতে চাও । রাজপুত্র । আর, রোজ রোজ ঐ-যে চারণদের স্তব শুনতে হয় একই বাধা ছন্দে- সেই শার্দুলবিক্ৰীড়িত । সদাগর । আমার তো মনে হয়, স্তব জিনিসটা বার বার যতই শোনা যায় ততই লাগে ভালো । কিছুতেই পুরনো হয় না । রাজপুত্র । ঘুম ভাঙতেই সেই এক বৈতালিকের দল। আর, রোজ সকালে সেই এক পুরুতঠাকুরের ধান দূর্ব দিয়ে আশীৰ্বাদ । আর আসতে যেতে দেখি, সেই বুড়ো কফুর্কীটা কাঠের পুতুলের মতো খাড়া দাড়িয়ে আছে। দরজার পাশে । কোথাও যাবার জন্যে একটু পা বাড়িয়েছি কি আমনি কোথা থেকে প্ৰতিহারী এসে হাজির, বলে- ইত ইতীে, ইত ইতীে, ইত ইতীে । সকাবাই মিলে মনটাকে যেন বুলি-চাপা দিয়ে রেখেছে। ܡܠ ܠ 11ܔ