পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ১ । না, এতক্ষণ আমরাই ওখানে বেড়াচ্ছিলাম । [ বিভাসিনীর প্রস্থান ২ । চেয়ে দেখ, ভাই, তোদের সুধাংশু কী খাটুনিই খাটছে। নিজের খরচে ফুল কিনে এনে টেবিল সাজিয়েছে নিজের হাতে । কাল এক কাণ্ড বাধিয়েছিল । নেপু বিশ্বাস মুখ বাকিয়ে বলেছিল, সুষমা টাকার লোভে এক বুনো রাজাকে বিয়ে করছে । ১ । নেপু বিশ্বোস ! ওর মুখ বাকবে না ? বুকের মধ্যে যে ধনুষ্টংকার ! আজিকাল সুষমাকে নিয়ে ছেলেদের দলে বুক-জ্বলুনির লঙ্কাকাণ্ড । ঐ সুধাংশুর বুকখানা যেন মনোয়ারি জাহাজের বয়লার ঘরের মতো হয়ে উঠেছে। ২ । সুধাংশুর তেজ আছে, যেমন শোনা নেপুর কথা অমনি তাকে পেড়ে ফেললে মাটিতে, বুকের উপর চেপে বসে বললে, মাপা চেয়ে চিঠি লিখতে হবে । ১ । দারুণ গোয়ার, ওর ভয়ে পেট ভরে কেউ নিন্দে করতেও পারে না । বাঙালির ছেলেদের বিষম কষ্ট । ২ । জানিস নে, আমাদের পাড়ায় বসেছে হতাশের সমিতি ? লোকে যাদের বলে সুষমাভক্ত সম্প্রদায়, সৌষমিক যাদের উপাধি, তারা নাম নিয়েছে লক্ষ্মীছাড়ার দল । নিশেন বানিয়েছে, তাতে ভাঙাকুলোর চিহ্ন। সন্ধ্যাবেলায় কী চেচামেচি । পাড়ার গোরস্তরা বলছে কাউন্সিলে প্ৰস্তাব তুলবে, আইন করে ধরে ধরে অবিলম্বে সাব-ক্যাটার জীবন্ত সমাধি, অর্থাৎ বিয়ে দেওয়া চাই । নইলে রাত্তিরে ভদ্রলোকদের ঘুম বন্ধ | পাবলিক-না৷সেন্স যাকে বলে । ১ । এই লোকহিতকর কার্যে তুই সাহায্য করতে পারবি, প্ৰিয় । ২ । দয়াময়ী, লোকহিতৈষিতা তোমারও কোনো মেয়ের চেয়ে কম নয়, ভাই । লক্ষ্মীছাড়ার ঘরে লক্ষ্মী স্থাপন করবার শখ আছে তোমার । আন্দাজে তা বুঝতে পারি। অনু, ঐ লোকটাকে চিনিস ? ১ । কখনো তো দেখি নি । ২ । ক্ষিতীশবাবু। গল্প লেখে, খুব নাম । বঁাশরি দামি জিনিসের বাজারদার বোঝে । ঠাট্টা করলে বলে- ঘোলের সাধ দুধে মেটাচ্ছি, মুক্তার বদলে শুক্তি । ১ । চল ভাই, সবাই এসে পড়ল । আমাদের একত্র দেখলে ঠাট্টা করবে । [ উভয়ের প্রস্থান দ্বিতীয় দৃশ্য বাগানের কোণে তিনটে ঝাউগাছ চক্র করে দাড়িয়ে । তলায় কাঠের আসন । সেই নিভৃতে। ক্ষিতীশ । অন্যত্র নিমন্ত্রিতের দল কেউ-বা আলাপ করছে বাগানে বেড়াতে বেড়াতে, কেউ-বা খেলছে। টেনিস, কেউ-বা টেবিলে সাজানাে আহার্য ভোগ করছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে । শচীন। আই সে, তারক, লোকটা আমাদের এলাকায় পিলপেগাড়ি করেছে, এর পরে পার্মােনন্ট টেন্যুরের দাবি করবে। উচ্ছেদ করতে ফৌজদারি । তারক । কার কথা বলছি । শচীন । ঐ-যে নববার্তা কাগজের গল্প-লিখিয়ে ক্ষিতীশ । তারক । ওর লেখা একটাও পড়ি নি, সেইজন্যে অসীম শ্রদ্ধা করি । , শচীন । পড় নি। ওর নূতন বই ‘বেমানান ? বিলিতিমার্কা, নব্যবাঙালিকে মুচড়ে মুচড়ে নিংড়েছে। অরুণ । দুরে বসে কলম চালিয়েছে, ভয় ছিল না মনে । কাছে এসেছে এইবারে বুঝবে, নিংড়ে ধবধবে সাদা করতে পারি। আমরাও । তার পরে চড়াতে পারি গাধার পিঠে । অৰ্চনা। ওর ছোওয়া বাচাতে চাও তোমরা, ওরাই ভয় তোমাদের ছোওয়াকে দেখছি না- দূরে বসে আইডিয়ার ডিমগুলোতে তা দিছে ?