পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVoVo রবীন্দ্র-রচনাবলী লীলা । কী বল তার ঠিক নেই । বঁাশরির জন্যে ভয় ! ওর একটা গল্প বলি, ভয় ভাঙবে শুনে । আমি উপস্থিত ছিলুম। : শচীন । কী মিছে তাস খেলছ তোমরা ! এসো এখানে, গল্প-লিখিয়ের উপর গল্প ! শুরু করো । লীলা । সোমশংকর হাতছাড়া হবার পরে বঁাশরির শখ গেল নখী-দন্তী-গোছের একটা লেখক পোষবার । হঠাৎ দেখি জোটালো কোথা থেকে আস্ত একজন কঁচা সাহিত্যিক । সেদিন উৎসাহ পেয়ে লোকটা শোনাতে এসেছে একটা নুতন লেখা । জয়দেব-পদ্মাবতীকে নিয়ে তাজা গল্প। জয়দেব দূর থেকে ভালোবাসে রাজমহিষী পদ্মাবতীকে । রাজবধুর যেমন রূপ তেমনি সাজসজ্জা, তেমনি বিদ্যেসাধ্যি । অৰ্থাৎ এ কালে জন্মালে সে হত ঠিক তোমারই মতো শৈল । এ দিকে জয়দেবের স্ত্রী ষোলো আনা গ্ৰাম্য, ভাষায় পানাপুকুরের গন্ধ, ব্যবহারটা প্রকাশ্যে বৰ্ণনা করবার মতো নয়, যে-সব তার বীভৎস প্রবৃত্তি- ড্যাশ দিয়ে ফুটকি দিয়েও তার উল্লেখ চলে না । লেখক শেষকালটায় খুব কালো কালিতে দেগে প্ৰমাণ করেছে, যে জয়দেব সুব, পদ্মাবতী মেকি, একমাত্র খাটি সোনা মন্দাকিনী । বঁশরি চৌকি ছেড়ে দাঁড়িয়ে তারস্বরে বলে উঠল, “মাসটির পীস !” ধন্যি মেয়ে ! একেবারে সাব্লাইম ন্যাকামি । শচীন। মানুষটা চুপসে চ্যাপটা হয়ে গেল বোধ হয় । লীলা । উলটাে । বুক উঠল। ফুলে। বললে, “শ্ৰীমতী বঁাশরি, মাটি খোড়বার কোদালকে আমি খনিত্র নাম দিয়ে শুদ্ধ করে নিই নে, তাকে কোদালই বলি |’ বঁাশরি বলে উঠল, “তোমার খেতাব হওয়া উচিত— নব্যসাহিত্যের পূর্ণচন্দ্ৰ, কলঙ্কগর্কিত । ওর মুখ দিয়ে কথা বেরোয় যেন আতসবাজির মতো । শচীন । এটাও লোকটার গলা দিয়ে গলল ? বাধল না ? লীলা । একটুও না । চায়ের পেয়ালায় চামচ নাড়তে নাড়তে ভাবল, আশ্চর্য করেছি, এবার মুগ্ধ করে দেব । বললে, “শ্ৰীমতী বঁাশরি, আমার একটা থিয়োরি আছে । দেখে নেবেন একদিন * ল্যাবরেটারিতে তার প্রমাণ হবে । মেয়েদের জৈব কণায় যে এনাৰ্জি থাকে সেটা ব্যাপ্ত সমস্ত পৃথিবীর মাটিতে । নইলে পৃথিবী হত বন্ধ্যা ।” আমাদের সর্দার-নেকি শুনেই এতখানি চোখ করে বললে, “মাটিতে ! বলেন কী ক্ষিতীশবাবু! মেয়েদের মাটি করবেন না । মাটি তো পুরুষ । পঞ্চভূতের কোঠায় মেয়ে যদি কোথাও থাকে সে জলে । নারীর সঙ্গে মেলে বারি। স্কুল মাটিতে সূক্ষ্ম হয়ে সে প্রবেশ করে, কখনো আকাশ থেকে নামে বৃষ্টিতে, কখনো মাটির তলা থেকে ওঠে ফোয়ারায়, কখনো কঠিন হয় বরফে, কখনো ঝরে পড়ে ঝরনায় ।” যা বলিস ভাই শৈল, বঁাশি কোথা থেকে কথা আনে জুটিয়ে, ভগীরথের গঙ্গার মতো, হাঁপ ধরিয়ে দিতে পারে ঐরাবত হাতিটাকে পর্যন্ত । শচীন । ক্ষিতীশ সেদিন ভিজে কাদা হয়ে গিয়েছিল বলো ! লীলা । সম্পূর্ণ। বাঁশি আমার দিকে ফিরে বললে, “তুই তো এম. এসসি.-তে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়েছিস, শুনলি তো ? বিশ্বে রমণীর রমণীয়তা যে অংশে সেইটিকে কেটে ছিড়ে পুড়িয়ে গুড়িয়ে হাইড্রলিক প্রেস দিয়ে দলিয়ে সলফরিক অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে তোকে রিসর্চে লাগতে হবে ।’ দেখো একবার দুষ্টুমি, আমি কোনােকালে বায়োকেমিস্ট্র নিই নি । ওর পোষা জীবকে নাচাবার জন্যে চাতুরী। তাই বলছি, ভয় নেই, মেয়েরা যাকে গাল দেয় তাকেও বিয়ে করতে পারে। কিন্তু যাকে বিদ্রুপ করে তাকে নৈব নৈব চ। সাব-শেষে বোকাটা বললে, “আজ স্পষ্ট বুঝলুম, পুরুষ তেমনি করেই নারীকে চায় মুদ্রার মরুভূমি চায় জলকে মাটির তলার বােবা ভাষাকে উক্ত করে তােলবার জন্য এত তারক । তুমি তো ঐ বললে। আমি একদিন ক্ষিতীশের তালি-দেওয়া মুখ নিয়ে একটু ঠাট্টার আভাস দিয়েছিলেম। বাঁশরি বলে উঠলেন, “দেখো লাহিড়ি, ওর মুখ দেখতে আমার পজিটিভূলি ভালো লাগে।” আমি আশ্চর্য হয়ে বললেম, তা হলে মুখখানা বিশুদ্ধ মডারন আর্ট । বুঝতে ধাধা। লাগে।” ওর সঙ্গে কথায় কে পারবে- ও বললে, “বিধাতার তুলিতে অসীম সাহস। যাকে ভালো দেখতে করতে চান তাকে সুন্দর দেখতে করা দরকার বোধ করেন না । তার মিষ্টান্ন ছড়ান ইত্যর