পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• বঁাশরি SRVed দিনে আপনি এখানে এসেছেন, বড়ো কৃতজ্ঞ হলুম। কোনো এক সময়ে আমাদের শর্তুগড়ে আসবেন, এই আশা রইল। জায়গাটা আপনার মতো সাহিত্যিকের দেখবার যোগ্য । বঁাশরি। (পিছন থেকে এসে) ভুল বলছ শংকর, যা চোখে দেখা যায় তা উনি দেখেন না। ভূতের পায়ের মতো। ওঁর চোখ উলটো দিকে । সে কথা যাক । শংকর, ব্যস্ত হোয়ো না । এখানে আজ আমার নেমন্তান্ন ছিল না। ধরে নিচ্ছি, সেটা আমার গ্রহের ভুল নয়, গৃহকর্তাদেরই ভুল। সংশোধন করতে এলুম। আজ সুষমার সঙ্গে তোমার এনগেজমেন্টের দিন, অথচ এ সভায় আমি থাকব না। এ হতেই পারে না। খুশি হও নি অনাহুত এসেছি বলে ? সোেমশংকর । খুব খুশি হয়েছি, সে কি বলতে হবে। বঁশরি ; সেই কথাটা ভালো করে বলবার জন্যে একটু বোসো এখানে । ক্ষিতীশ, ঐ চাপাগাছটার তলায় কিছুক্ষণ অদ্বিতীয় হয়ে থাকো গে। আড়ালে তোমার নিন্দে করব না। [ক্ষিতীশের প্রস্থান শংকর, সময় বেশি নেই, কাজের কথাটা সেরে এখনই ছুটি দেব। তোমার নূতন এনগেজমেন্টের রাস্তায় পুরোনো জঞ্জাল কিছু জমে আছে। সাফ করে ফেললে সুগম হবে পথ । এই নাও । বাঁশরি রেশমের থলি থেকে একটা পান্নার কণ্ঠী, হীরের ব্রেসলেট, মুক্তোবসানো ব্ৰোচ বের করে দেখিয়ে আবার থলিতে পুরে সোমশংকরের কোলে ফেলে দিলে । সোেমশংকর । বাঁশি, তুমি জান, আমার মুখে কথা জোগায় না । যা বলতে পারলেম না তার মানে নিজে বুঝে নিয়ো । বঁাশরি ; সব কথাই আমার জানা, মানে আমি বুঝি । এখন যাও, তোমাদের সময় হল । সোমশংকর ৷ যেয়ে না, বঁাশি । ভুল বুঝে না। আমাকে । আমার শেষ কথাটা শুনে যাও । আমি জঙ্গলের মানুষ। শহরে এসে কলেজে পড়ার আরম্ভের মুখে প্রথম তোমার সঙ্গে দেখা । সে দৈবের খেলা । তুমিই আমাকে মানুষ করে দিয়েছিলে, তার দাম কিছুতেই শোধ হবে না। তুচ্ছ এই গায়নাগুলো । 坠 বঁাশরি। আমার শেষ কথাটা শোনো, শংকর । আমার তখন প্রথম বয়েস, তুমি এসে পড়লে সেই নতুন-জাগা অরুণরঙের দিগন্তে । ডাক দিয়ে আলোয় আনলে যাকে তাকে লও বা না লও, নিজে তো তাকে পেলুম । আত্মপরিচয় ঘটল । বাস, দুই পক্ষে হয়ে গেল শোধবোধ । এখন দুজনেই অঋণী হয়ে আপন আপন পথে চললুম। আর কী চাই । সোেমশংকর। বাঁশি, যদি কিছু বলতে যাই নির্বোধের মতো বলব। বুঝলুম, আমার আসল কথাটা বলা হবে না কোনোদিনই । আচ্ছা, তবে থাক । অমন চুপ করে আমার দিকে চেয়ে আছ কেন । মনে হচ্ছে, দুইচোখ দিয়ে আমাকে লুপ্ত করে দেবে। বাশরি। আমি তাকিয়ে দেখছি একশো বছর পরোকার যুগন্তে । সে দিকে আমি নেই, তুমি নেই, আজকের দিনের অন্য কেউ নেই। ভুল বোঝার কথা বলছ! সেই ভুল বোঝার উপর দিয়ে চলে যাবে কালের রথ । ধুলো হয়ে যাবে, সেই ধুলোর উপরে বসে খেলা করবে তোমার নাতি-নাতনিরা । সেই নির্বিকার ধুলোর হােক জয় । সোমশংকর । এ গয়নাগুলোর কোথাও স্থান রইল না ; যাক তবে । [ ফেলে দিলে ফোয়ারার জলাশয়ে ফ্রক পরা, চশমা চোখে, বেণী দোলানো, দ্রুতপদে চলা এগারো বছরের মেয়ে । সুষীমা । সন্ন্যাসীবাবা আসছেন, শংকরদা । তোমাকে ডেকে পাঠালেন সবাই । তুমি আসবে না, दैििन्नेि ?