পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዒ o রবীন্দ্র-রচনাবলী বঁাশরি । আসব বৈকি, আসার সময় হােক আগে । [সোেমশংকর ও সুধীমার প্রস্থান ক্ষিতীশ, শুনে যাও । চোখ আছে। দেখতে পােচ্ছ কিছু কিছু ? ক্ষিতীশ । রঙ্গভূমির বাইরে আমি । আওয়াজ পাচ্ছি, রাস্তা পাচ্ছি নে । বঁশরি । বাংলা উপন্যাসে নিয়মার্কেটের রাস্তা খুলেছি নিজের জোরে আলকাতরা ঢেলে । এখানে পুতুলনাচের রাস্তােটা বের করতে তোমারও অফিসিয়াল গাইড চাই ! লোকে হাসবে যে ! ক্ষিতীশ । হাসুক-না। রাস্তা না পাই, অমন গাইডকে তো পাওয়া গেল । বঁাশরি ; রসিকতা ! সস্তা মিষ্টান্নের ব্যাবসা ! এজন্যে ডাকি নি তোমাকে । সত্যি করে দেখতে শেখে, সত্যি করে লিখতে শিখবে । চারি দিকে অনেক মানুষ আছে, অনেক অমানুষও আছে, ঠাহর করলেই চোখে পড়বে । দেখো দেখো, ভালো করে দেখো । ক্ষিতীশ । নাই বা দেখলেম, তোমার তাতে কী । বঁাশরি । নিজে লিখতে পারি। নে যে, ক্ষিতীশ । চোখে দেখি, মনে বুঝি, স্বর বন্ধ, ব্যর্থ হয় যে-সব । ইতিহাসে বলে, একদিন বাঙালি কারিগরদের বুড়ো আঙুল দিয়েছিল কেটে । আমিও কারিগর, বিধাতা বুড়ো আঙুল কেটে দিয়েছেন । আমদানি-করা মালে কাজ চালাই, পরখ করে দেখতে হয় সেটা সঁাচ্চা কি না । তোমরা লেখক, আমাদের মতো কলমহারাদের জন্যেই কলমের কাজ তোমাদের । সুষমার প্রবেশ দেখবামাত্র বিস্ময় লাগে । চেহারা সতেজ সবল সমুন্নত । রঙ যাকে বলে কনকগীের, ফিকে চাপার মতো, কপাল নাক চিবুক যেন কুঁদে তোলা । সুষমা। (ক্ষিতীশকে নমস্কার করে) বাঁশি, কোণে লুকিয়ে কেন । বঁাশরি। কুনো সাহিত্যিককে বাইরে আনবার জন্য । খনির সোনাকে শানে চড়িয়ে তার চেকনাই বের করতে পারি, আগে থাকতেই হাতিযশা আছে । জহরতকে দামি করে তোলে জহরী, পরের ভোগেরই জন্য, কী বল । সুষী, ইনিই ক্ষিতীশবাবু, জন বোধ হয় । সুষমা ৷ জানি বৈকি। এই সেদিন পড়ছিলুম ওঁর “বোকার বুদ্ধি' গল্পটা। কাগজে কেন এত গাল দিয়েছে বুঝতে পারলুম না । ক্ষিতীশ । অর্থাৎ বইখানা গাল দেবার যোগ্য, এতই কী ভালো ! সুষমা। ওরকম ধারালো কথা বলবার ভার বঁাশরি আর ঐ আমার পিসতুতো বোন লীলার উপরে । আপনাদের মতো লেখকের বই সমালোচনা করতে ভয় করি, কেননা তাতে সমালোচনা করা হয় নিজেরই বিদ্যে-বুদ্ধির । অনেক কথা বুঝতেই পারি নে। বঁাশরির কল্যাণে আপনাকে কাছে পেয়েছি, দরকার হলে বুঝিয়ে নেব । বঁাশরি। ক্ষিতীশবাবু ন্যাচারাল হিষ্ট্ৰী লেখেন গল্পের ছাচে । যেখানটা জানা নেই, দিগদগে রঙ লেপে দেন মোটা তুলি দিয়ে । রঙের আমদানি সমুদ্রের ওপর থেকে । দেখে দয়া হল । বললুম, জীবজন্তুর সাইকলজির খোজে গুহাগহ্বরে যেতে যদি খরচে না কুলোয়, অন্তত জুয়োলজিকালের খাচার ফাক দিয়ে উকি মারতে দোষ কী । সুষমা । তাই বুঝি এনেছ এখানে ? বঁাশরি। পাপমুখে বলব। কী করে । তাই তো বটে। ক্ষিতীশবাবুর হাত পাকা, মালমসলাও পাকা হওয়া চাই । যথাসাধ্য জোগাড় দেবার মজুরগিরি করছি। সুষমা ৷ ক্ষিতীশবাবু, একটু অবকাশ করে নিয়ে আমাদের ও দিকে যাবেন । মেয়েরা সদ্য আপনার বই কিনে আনিয়েছে সই নেবে বলে । সাহস করছে না। কাছে আসতে । বঁশি, ওঁকে একলা ঘিরে রেখে কেন আভিশাপ কুড়োেচ্ছ।