পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ांeत्रि Sግ S বঁশরি । (উচ্চহাস্যে) সেই অভিশাপই তো মেয়েদের বর । সে তুমি জান ৷ জয়যাত্রায় মেয়েদের লুটের মাল প্রতিবেশিনীর ঈর্ষা । সুষমা ৷ ক্ষিতীশবাবু, শেষ দরবার জানিয়ে গেলুম। গণ্ডি পেরোবার স্বাধীনতা যদি থাকে একবার যাবেন ও দিকে । [সুষমার প্রস্থান ক্ষিতীশ । কী আশ্চর্য ওঁকে দেখতে । বাঙালি ঘরের মেয়ে বলে মনেই হয় না । যেন এখীনা, যেন মিনার্ভা, যেন বুনাহিলড ! বঁশরি ; (তীব্ৰহাস্যে) হায় রে হায়, যত বড়ো দিগগজ পুরুষই হােক-না কেন সবার মধ্যেই আছে আদিম যুগের বর্বর। হাড়-পাকা রিয়লিস্ট বলে দেমাক কর, ভান কর মন্তর মান না। লািগল মস্তর চোখের কটাক্ষে, একদম উড়িয়ে নিয়ে গেল মাইথ'লজির যুগে । আজও কচি মনটা রূপকথা আঁকড়িয়ে আছে । তাকে হিঁচড়িয়ে উজোন পথে টানাটানি ক’রে মনের উপরের চামড়াটাকে করে তুলেছ কড়া । দুর্বল বলেই বলের এত বড়াই। ক্ষিতীশ । সে কথা মাথা হেঁট করেই মানব । পুরুষজাত দুর্বল জাত । বঁাশরি । তোমরা আবার রিয়ালিসট ! রিয়ালিসট মেয়েরা। যত বড়ো স্কুল পদার্থ হও না, যা তোমরা তাই বলেই জানি তোমাদের । পাকে-ডোবা জলহস্তীকে নিয়ে ঘর যদি করতেই হয় তাকে ঐরাবত বলে রোমান্স বানাই নে । রঙ মাখাই নে তোমাদের মুখে । মাখি নিজে । রূপকথার খোকা সব ! ভালো কাজ হয়েছে মেয়েদের ! তোমাদের ভোলানো । পোড়া কপাল আমাদের ! এখীনা ! মিনার্ভা ! মরে যাই ! ওগো রিয়ালিসট, রাস্তায় চলতে যাদের দেখেছি পানওয়ালীর দোকানে, গড়েছ কালো মাটির তাল দিয়ে যাদের মূর্তি, তারাই সেজে বেড়াচ্ছে এখীনা, মিনার্ভা । ক্ষিতীশ । বঁশি, বৈদিককালে ঋষিদের কাজ ছিল মন্তর পড়ে দেবতা ভোলানো-যাদের ভোলাতেন তাদের ভক্তিও করতেন । তোমাদের যে সেই দশা । বোকা পুরুষদের ভোলাও তোমরা, আবার পাদোদক নিতেও ছােড় না । এমনি করেই মাটি করলে এই জাতটাকে । বঁাশরি | সত্যি সত্যি, খুব সত্যি । ঐ বোকাদের আমরাই বসাই টঙের উপরে, চোখের জলে কাদশামাখা পা ধুইয়ে দিই, নিজেদের অপমানের শেষ করি, যত ভোলাই তার চেয়ে ভুলি হাজার গুণে । ক্ষিতীশ । এর উপায় ? 哆 বঁশরি | লেখো, লেখো সত্যি করে, লেখো শক্ত করে । মন্তর নয়, মাইথ'লজি নয়, মিনার্ভার মুখোশটা ফেলে দাও টান মেরে । ঠোঁট লাল ক’রে তোমাদের পানওয়ালী যে মস্তর ছড়ায় ঐ আশ্চর্য মেয়েও ভাষা বদলিয়ে সেই মন্তরই ছড়াচ্ছে। সামনে পড়ল পথ-চলতি এক রাজা, শুরু করলে জাদু। কিসের জন্যে । টাকার জন্যে । শুনে রাখো, টাকা জিনিসটা মাইথ'লজির নয়, ওটা ব্যাঙ্কের, ওটা তোমাদের রিয়লিজমের কোঠায় । ক্ষিতীশ । টাকার প্রতি দৃষ্টি আছে সেটা তো বুদ্ধির লক্ষণ, সেইসঙ্গে হৃদয়টাও থাকতে পারে । বঁশরি । আছে গো, হৃদয় আছে । ঠিক জায়গায় খুঁজলে দেখতে পাবে, পানওয়ালীরও হৃদয় আছে । কিন্তু মুনাফা এক দিকে, হৃদয়টা আর-এক দিকে । এইটে যখন আবিষ্কার করবে। তখনই জীমবে গল্পটা ৷ পাঠিকারা ঘোর আপত্তি করবে ; বলবে, মেয়েদের খেলো করা হল, অর্থাৎ তাদের মন্ত্রশক্তিতে বোকাদের মনে খটকা লাগানো হচ্ছে। উচুদরের পুরুষ পাঠকও গাল পাড়বে। বল কী, তাদের মাইথ'লজির রঙ চটিয়ে দেওয়া ! সৰ্ব্বনাশ ! কিন্তু ভয় কোরো না ক্ষিতীশ, রঙ যখন যাবে জ্বলে, মন্ত্র পড়বে চাপা, তখনো সত্য থাকবে টিকে, শেলের মতো, শূলের মতো । ক্ষিতীশ । শ্ৰীমতী সুষমার হৃদয়ের বর্তমান ঠিকানাটা জানতে পারিক কি । বঁাশরি । ঠিকানা বলতে হবে না, নিজের চোখেই দেখতে পাবে। যদি চোখ থাকে । এখন চলো ঐ দিকে । ওরা টেনিস-খেলা সেরে এসেছে। এখন আইসক্রিম পরিবেশনের পালা । বঞ্চিত হবে কেন । [উভয়ের প্রস্থান