পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दैश्विझेि Sዒዓ দ্বিতীয় অঙ্ক প্রথম দৃশ্য চৌরঙ্গি-অঞ্চলের বঁাশরিদের বাড়ি । ক্ষিতীশ ও বঁাশরি ক্ষিতীশ । তোমার হিন্দুস্থানী শোফারটা ভোরবেলা মুহুর্মুহ বাজাতে লাগল। গাড়ির ভেঁপু। চেনা আওয়াজ, ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লুম। বঁাশরি । ভোরবেলায় ? অর্থাৎ ? ক্ষিতীশ । অর্থাৎ আটটার কম হবে না । T বঁাশরি । অকালবোধন । ক্ষিতীশ । দুঃখ নেই, তবু জানতে চাই কারণটা । কোনো কারণ না থাকলেও নালিশ করব না । বাশরি । বুঝিয়ে বলছি। লেখবার বেলায় নলিনাক্ষের দল বলে যাদের দাগ দিয়েছ তাদের সামনে এলেই দেখি তোমার মন যায় এতটুকু হয়ে । মনে মনে চেচিয়ে নিজেকে বোঝাতে থােক- ওরা তো ডেকোরেটেড ফুলস। কিন্তু, সেই স্বগতোক্তিতে সংকোচ চাপা পড়ে না। সাহিত্যিক আভিজাত্যবোধকে অন্তরের মধ্যে ফাপিয়ে তোল তবু নিজেকে ওদের সমান বহরে দাড় করাতে পার না । সেই চিত্তবিক্ষেপ থেকে বাচাবার জন্য নলিনাক্ষ-দলের দিন আরম্ভ হবার পূর্বেই তোমাকে ডাকিয়েছি । সকালবেলায় অন্তত নটা পর্যন্ত আমাদের এখানে রাতের উত্তরাকাণ্ড । আপাতত এ বাড়িটা সাহারা মরুভূমির মতো নির্জন । ক্ষিতীশ । ওয়েসিস দেখতে পাচ্ছি। এই ঘরটার সীমানায় । বঁাশরি ; ওগো পথিক, ওয়েসিস নয়, ভালো করে যখন চিনবে তখন বুঝবে মরীচিকা । ক্ষিতীশ । আমার মাথায় আরো উপমা আসছে বঁাশি, আজ তোমার সকালবেলাকার অসজিত রূপ দেখাচ্ছে যেন সকালবেলাকার অলস চাদের মতো । বঁাশরি। দোহাই তোমার, গদগদ ভাবটা রেখে দিয়ে একলা-ঘরের বিজনবিরহের জন্য । মুগ্ধ দৃষ্টি তোমাকে মানায় না। কাজের জন্য ডেকেছি, বাজে কথা স্ট্রিক্টলি প্রোহিবিটেড । ক্ষিতিশ । এর থেকে ভাষার রেলেটিভিটি প্রমাণ হয় । আমার পক্ষে যা মর্মান্তিক জরুরি তোমার পক্ষে তা বেঁটিয়ে-ফেলা বাজে । বঁাশরি। আজ সকালে এই আমার শেষ অনুরোধ, গাজিয়ে-ওঠা রসের ফেনা দিয়ে তাড়িখানা বানিয়ো না নিজের ব্যবহারটাকে । আটিস্টের দায়িত্ব তোমার । ক্ষিতিশ । আচ্ছা, তবে মেনে নিলুম দায়িত্ব । বঁাশরি ; সাহিত্যিক, হতাশ হয়ে পড়েছি তোমার অসাড়তা দেখে । নিজের চক্ষে দেখলে একটা আসন্ন ট্র্যাজেডির সংকেত- আগুনের সাপ ফণা ধরেছে- এখনো চেতিয়ে উঠল না তোমার কলম, আমার তো কাল সারারাত্রি ঘুম হল না। এমন লেখা লেখবার শক্তি কেন আমাকে দিলেন না বিধাতা, যার অক্ষরে অক্ষরে ফেটে পড়ত রক্তবর্ণ আগুনের ফোয়ারা । দেখতে পাচ্ছি। আটিস্টের চোখে, বলতে পারছি না। আটিস্টের কণ্ঠে । ব্ৰহ্মা যদি বোবা হতেন তা হলে অসৃষ্ট বিশ্বের ব্যথায় মহাকাশের বুক যেত ফেটে । ক্ষিতিশ। কে বলে তুমি প্রকাশ করতে পার না বাঁশি, তুমি নও আর্টিস্ট ! তুমি যেন হীরেমুক্তোর হরির লুঠ দিচ্ছি। কথায় কথায় তোমার শক্তির প্রমাণ ছড়াছড়ি যায়, দেখে ঈৰ্ষা হয় মনে । বঁাশরি । আমি যে মেয়ে, আমার প্রকাশ ব্যক্তিগত । বলবার লোককে প্ৰত্যক্ষ পেলে তবেই বলতে পারি। কেউ নেই। তবু বলা- সেই বলা তো চিরকালের । আমাদের বলা নগদ বিদায়, হাতে হাতে, দিনে দিনে। ঘরে ঘরে মুহুর্তে মুহুর্তে সেগুলো ওঠে। আর মেলায় । ক্ষিতিশ, । পুরুষ আর্টিস্টকে এবার মেরেছ ঠেলা আচ্ছা বেশ, কাজ আরম্ভ হােক । সেদিন একটা চিঠির কথা ।