পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঁাশরি Sbra পুরন্দর । আচ্ছা, বলো তুমি । বঁশরি । জিজ্ঞাসা করি, সোমশংকরকে শ্ৰদ্ধা করেন। আপনি ? ওকে খেলার পুতুল বলে মনে করেন ? পুরন্দর । বিশেষ শ্রদ্ধা করি । বঁশরি । তবে কেন এমন মেয়ের ভার দিচ্ছেন ওর হাতে যে ওকে ভালোবাসে না । পুরন্দর । জান না। এ অতি মহৎ ভার, একই কালে ক্ষত্ৰিয়ের পুরস্কার এবং পরীক্ষা । সোমশংকরই এই ভার গ্রহণ করবার যোগ্য । বঁাশরি । যোগ্য বলেই ওর চিরজীবনের সুখ নষ্ট করতে চান। আপনি ? পুরন্দর । সুখকে উপেক্ষা করতে পারে ঐ বীর মনের আনন্দে । বঁশরি । আপনি মানবপ্রকৃতিকে মানেন না ? পুরন্দর । মানবপ্রকৃতিকেই মানি, তার চেয়ে নীচের প্রকৃতিকে নয় । বাশরি । এতই যদি হল, ওরা বিয়ে নাই করত ? পুরন্দর। ব্ৰতকে নিষ্কামভাবে পোষণ করবে মেয়ে, ব্ৰতকে নিষ্কামভাবে প্রয়োগ করবে। পুরুষ, এই কথা মনে করে দুটি মেয়ে-পুরুষ অনেকদিন খুঁজেছি । দৈবাৎ পেয়েছি। বঁাশরি । পুরুষ বলেই বুঝতে পারছি না যে, ভালোবাসা। নইলে দুজন মানুষকে মেলানো যায় না । পুরন্দর । মেয়ে বলেই বুঝতে ইচ্ছা করছ না, ভালোবাসার মিলনে মোহ আছে, প্রেমের মিলনে মোহ নেই । বঁাশরি । মোহ চাই, চাই ; সন্ন্যাসী, মোহ নইলে সৃষ্টি কিসের । তোমার মোহ তোমার ব্ৰত নিয়েসেই ব্ৰতের টানে তুমি মানুষের মনগুলো নিয়ে কেটে ছিড়ে জোড়াতাড়া দিতে বসেছ- বুঝতেই পারছি না। তারা সজীব পদার্থ, তোমার প্ল্যানের মধ্যে খাপ-খাওয়াবার জন্য তৈরি হয় নি । আমাদের মোহ সুন্দর, আর ভয়ংকর তোমাদের মোহ । পুরন্দর । মোহ নইলে সৃষ্টি হয় না, মোহ ভাঙলে প্ৰলয়, এ কথা মানতে রাজি আছি। কিন্তু, তুমিও এ কথা মনে রেখো, আমার সৃষ্টি তোমার সৃষ্টির চেয়ে অনেক উপরে । তাই আমি নির্মম হয়ে তোমার সুখ দেব ছারখার করে । আমিও চাইব না সুখ ; যারা আসবে আমার কাছে সুখের দিক থেকে, মুখ দেব ফিরিয়ে । আমার ব্ৰতই আমার সৃষ্টি, তার যা প্রাপ্য তা তাকে দিতেই হবে । যতই কঠিন হােক । বঁাশরি। সেইজন্যেই সজীব নয় তোমার আইডিয়া, সন্ন্যাসী । তুমি জান মন্ত্র, জান না মানুষকে । মানুষের মর্মগ্রন্থি টেনে ছিড়ে সেইখানে তোমার কেঠো আইডিয়ার ব্যাণ্ডেজ বেঁধে অসহ্য ব্যথার পরে মস্ত মস্ত বিশেষণ চাপা দিতে চাও । তাকে বল শান্তি ? টিকবে না ব্যাণ্ডেজ, ব্যথা যাবে থেকে । তোমরা সব অমানুষ, মানুষের বসতিতে এলে কী করতে । যাও-না তোমাদের গুহাগহবরে বদরিকাশ্ৰমে । সেখানে মনের সাধে নিজেদের শুকিয়ে পাথর করে ফেলো। আমরা সামান্য মানুষ, আমাদের তৃষ্ণার জল মুখের থেকে কেড়ে নিয়ে মরুভূমিতে ছড়িয়ে দিয়ে তাকে সাধনা বলে প্রচার করতে চাও কোন করুণায় । ব্যর্থজীবনের অভিশাপ লাগবে না তোমাকে ? যা নিজে ভোগ করতে জান না তা ভোগ করতে দেবে না। ক্ষুধিতকে ? সুষমার প্রবেশ এই যে সুষমা, শোন বলি। মরিয়া হয়ে মেয়েরা চিতার আগুনে মরেছে। অনেক, ভেবেছে তাতেই পরমার্থ। তেমনি করেই নিজের হাতে নিজের ভাগ্যে আগুন লাগিয়ে দিনে দিনে মরতে চাস জ্বলে জ্বলে ? চাস নে তুই ভালোবাসা, কিন্তু যে-মেয়ে চায়, পাষাণ সে করে নি। আপন নারীর প্রাণ, কেন কেড়ে নিতে এলি তার চিরজীবনের আনন্দ । এই আমি আজ বলে দিলুম তোকে, ঘোড়ায় চড়িস, শিকার করিস, সন্ন্যাসীর কাছে মন্ত্র নিস, তবু তুই পুরুষ নোস । আইডিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তোর দিন কাটবে না গো, তোর রাত বিছিয়ে দেবে কঁাটার শয়ন । d NR|dd