পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঁশরি Rà Y সোমশংকর । নিমন্ত্রণ করতে এসেছি । জানি অন্যপক্ষ থেকে ডাকে নি তোমাকে । আমার পক্ষ থেকে কোনো সংকোচ নেই । বঁশরি । কেন সংকোচ নেই। ঔদাসীন্য ? সোমশংকর । তোমার কাছ থেকে যা পেয়েছি। আর আমি যা দিয়েছি তোমাকে, এ বিবাহে তাকে সম্পর্শমাত্র করতে পারবে না, এ তুমি নিশ্চয় জান । বঁাশরি । তবে বিবাহ করতে যােচ্ছ কেন ? সোমশংকর । সে কথা বুঝতে যদি নাও পাের, তবু দয়া কোরো আমাকে । বঁাশরি। তবু বলে । বুঝতে চেষ্টা করি । সোেমশংকর। কঠিন ব্ৰত নিয়েছি, একদিন প্রকাশ হবে, আজ থােক, দুঃসাধ্য আমার সংকল্প, ক্ষত্ৰিয়ের যোগ্য । কোনো-এক সংকটের দিনে বুঝবে সে ব্ৰত ভালোবাসার চেয়েও বড়ো । তাকে সম্পন্ন করতেই হবে প্ৰাণ দিয়েও । বঁাশরি । আমাকে সঙ্গে নিয়ে সম্পন্ন করতে পারতে না ? সোেমশংকর। নিজেকে কখনো তুমি ভুল বোঝাও না বাঁশি । তুমি নিশ্চিত জান তোমার কাছে আমি দুর্বল। হয়তো একদিন তোমার ভালোবাসা আমাকে টলিয়ে দিত। আমার ব্রত থেকে । যে-দুৰ্গমপথে সুষমার সঙ্গে সন্ন্যাসী আমাকে যাত্রায় প্রবৃত্ত করেছেন সেখানে ভালোবাসার গতিবিধি বন্ধ । বাঁশরি ; সন্ন্যাসী হয়তো ঠিকই বুঝেছেন । তোমার চেয়েও তোমার ব্ৰতকে আমি বড়ো করে দেখতে পারতুম না । হয়তো সেইখানেই বাধত সংঘাত । আজ পর্যন্ত তোমার ব্ৰতের সঙ্গেই আমার শত্ৰুতা। তবে এই শত্রুর দুর্গে কোন সাহসে তুমি এলে । একদিন যে-শক্তি আমার মধ্যে দেখেছিলে আজ কিছু কি তার অবশিষ্ট নেই। ভয় করবে না ? সোমশংকর । শক্তি একটুও কমে নি, তবু ভয় করব না । বাঁশরি । যদি তেমন করে পিছু ডাকি এড়িয়ে যেতে পারবে ? সোমশংকর । কী জানি, না পারতেও পারি । বঁাশরি । তবে ? সোমশংকর । তোমাকে বিশ্বাস করি । আমার সত্য কখনোই ভাঙা পড়বে না তোমার হাতে । সংকটের মুখে যাবার পথে আমাকে হেয় করতে পারবে না। তুমি । নিশ্চিত জান, সত্যভঙ্গ হলে আমি প্রাণ রাখব না। মরব তুষানলে পুড়ে । বঁাশরি। শংকর, তুমি ক্ষত্ৰিয়ের মতোই ভালোবাসতে পাের। শুধু ভাব দিয়ে নয়। বীর্য দিয়ে । সত্যি করে বলো, আজও কি আমাকে সেদিনের মতোই ততখানি ভালোবাস । সোমশংকর । ততখানিই । বঁাশরি। আর কিছুই চাই নে আমি । সুষমাকে নিয়ে পূর্ণ হােক তোমার ব্রত, তাকে ঈর্ষা করব না। সোমশংকর । একটা কথা বাকি আছে । বাশরি। কী, বলো । সোমশংকর। আমার ভালোবাসার কিছু চিহ্ন রেখে যাচ্ছি। তোমার কাছে, ফিরিয়ে দিতে পারবে না । (অলংকারের সেই থলি বের করলে) বঁশরি ; ও কী, ও-সব যে তলিয়ে ছিল জলে । সোমশংকর। ডুব দিয়ে আবার তুলে এনেছি। বঁশরি । মনে করেছিলুম আমার সব হারিয়েছে। ফিরে পেয়ে অনেকখানি বেশি করে পেলুম। নিজের হাতে পরিয়ে দাও আমাকে । (সোেমশংকর গয়না পরিয়ে দিলে)। শক্ত আমার প্রাণ। তোমার কাছেও কোনোদিন কেঁদেছি বলে মনে পড়ে না, আজ যদি কঁাদি কিছু মনে কোরো না । (হাতে মাথা রেখে কান্না)