পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外贾g瓦 VOOGk কী সর্বনাশ ! থানায় খবর ! নীলকণ্ঠের বিরুদ্ধে । তাহার পা উঠিতে চায় না । শেষকালে বনোয়ারির তাড়নায় থানায় গিয়া সে খবর দিল । পুলিস হঠাৎ কাছারিতে আসিয়া বন্ধনদশা হইতে মধুকে খালাস করিল এবং নীলকণ্ঠ ও কাছারির কয়েকজন পেয়াদাকে আসামী করিয়া ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে চালান করিয়া দিল । মনোহর বিষম ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। তঁহার মকদ্দমার মন্ত্রীরা ঘুষের উপলক্ষ করিয়া পুলিসের সঙ্গে ভাগ করিয়া টাকা লুটিতে লাগিল। কলিকাতা হইতে এক বারিস্টার আসিল, সে একেবারে কাচা, নূতন পাস-করা । সুবিধা এই, যত ফি তাহার নামে খাতায় খরচ পড়ে তত ফি তাহার পকেটে উঠে না। ওদিকে মধুকৈবর্তের পক্ষে জেলা-আদালতের একজন মাতব্বর উকিল নিযুক্ত হইল । কে যে তাহার খরচ জোগাইতেছে বোঝা গেল না । নীলকণ্ঠের ছয় মাস মেয়াদ হইল । হাইকোটের আপিলেও তাহাঁই বহাল রহিল । ঘড়ি এবং বন্দুকটা যে উপযুক্ত মূল্যে বিক্রয় হইয়াছে তাহা ব্যর্থ হইল না- আপাতত মধু বাচিয়া গেল এবং নীলকণ্ঠের জেল হইল। কিন্তু, এই ঘটনার পরে মধু তাহার ভিটায় টিকিবে কী করিয়া ? বনোয়ারি তাহাকে আশ্বাস দিয়া কহিল, “তুই থাক, তোর কোনো ভয় নাই।” কিসের জোরে যে আশ্বাস দিল তাহা সেই জানে- বোধ করি, নিছক নিজের পৌরুষের স্পর্ধায় । বনোয়ারি যে এই ব্যাপারের মূলে আছে তাহা সে লুকাইয়া রাখিতে বিশেষ চেষ্টা করে নাই। কথাটা প্ৰকাশ হইল ; এমন-কি, কর্তার কানেও গেল । তিনি চাকরকে দিয়া বলিয়া পাঠাইলেন, “বনোয়ারি যেন কদাচি আমার সম্মুখে না আসে।” বনোয়ারি পিতার আদেশ অমান্য করিল না । কিরণ তাহার স্বামীর ব্যবহার দেখিয়া অবাক । এ কী কাণ্ড । বাড়ির বড়োবাবু- বাপের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ ! তার উপরে নিজেদের আমলাকে জেলে পাঠাইয়া বিশ্বের লোকের কাছে নিজের পরিবারের মাথা হেঁট করিয়া দেওয়া ! তাও এই এক সামান্য মধুকৈবর্তকে লইয়া । অদ্ভুত বটে ! এ বংশে। কতকাল ধরিয়া কত বড়োবাবু জন্মিয়াছে এবং কোনোদিন নীলকণ্ঠেরও অভাব নাই। নীলকণ্ঠেরা বিষয়ব্যবস্থার সমস্ত দায় নিজেরা লইয়াছে আর বড়োবাবুরা সম্পূর্ণ নিশ্চেষ্টভাবে বংশগৌরব রক্ষা করিয়াছে । এমন বিপরীত ব্যাপার তো কোনোদিন ঘটে নাই । আজ এই পরিবারের বড়োবাবুর পদের অবনতি ঘটাতে বড়োবউয়ের সম্মানে আঘাত লাগিল । ইহাতে এতদিন পরে আজ স্বামীর প্রতি কিরণের যথার্থ অশ্রদ্ধার কারণ ঘটিল । এতদিন পরে তাহার বসন্তকালের লাটুকানে রঙের শাড়ি এবং খোপার বেলফুলের মালা লজ্জায় মান হইয়া গেল । কিরণের বয়স হইয়াছে অথচ সন্তান হয় নাই । এই নীলকণ্ঠই একদিন কর্তার মত করাইয়া পাত্রী দেখিয়া বনোয়ারির আর-একটি বিবাহ প্ৰায় পাকাপাকি স্থির করিয়াছিল । বনোয়ারি হালদারবংশের বড়ো ছেলে, সকল কথার আগে এ কথা তো মনে রাখিতে হইবে । সে অপুত্ৰক থাকিবে, ইহা তো হইতেই পারে না । এই ব্যাপারে কিরণের বুক দূরদূর করিয়া কঁাপিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু, ইহা সে মনে মনে না। স্বীকার করিয়া থাকিতে পারে নাই যে, কথাটা সংগত । তখনো সে নীলকণ্ঠের উপরে কিছুমাত্র রাগ করে নাই, সে নিজের ভাগ্যকেই দোষ দিয়াছে । তাহার স্বামী যদি নীলকণ্ঠকে রাগিয়া মারিতে না। যাইত এবং বিবাহসম্বন্ধ ভাঙিয়া দিয়া পিতামাতার সঙ্গে রাগারগি না করিত তবে কিরণ সেটাকে অন্যায় মনে করিত না । এমন-কি, বনোয়ারি যে তাহার বংশের কথা ভাবিল না, ইহাতে অতি গোপনে কিরণের মনে বনোয়ারির পৌরুষের প্রতি একটু অশ্রদ্ধাই হইয়াছিল। বড়ো ঘরের দাবি কি সামান্য দাবি ; তাহার যে নিষ্ঠুর হইবার অধিকার আছে। তাহার কাছে কোনো তরুণী স্ত্রীর কিংবা কোনো দুঃখী কৈবর্তের সুখদুঃখের কতটুকুই বা মূল্য । সাধারণত যাহা ঘটিয়া থাকে এক-একবার তাহা না ঘটিলে কেহই তাহা ক্ষমা করিতে পারে না, এ কথা বনোয়ারি কিছুতেই বুঝিতে পারিল না । সম্পূর্ণরূপে এ বাড়ির বড়োবাবু হওয়াই তাহার উচিত ছিল ; অন্য কোনো প্রকারের উচিত-অনুচিত চিন্তা করিয়া এখানকার ধারাবাহিকতা নষ্ট করা যে তাহার অকৰ্তব্য, তাহা সে ছাড়া সকলেরই কাছে অত্যন্ত সুস্পষ্ট । ای