পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻甄邻瓦 K) SS হইল তাহাই জানিবার জন্য বাহির হইয়াছিলাম।” বনোয়ারি । আমার রুমালে-বাধা কাগজগুলো তুমিই লইয়াছ । নীলকণ্ঠ নিতান্ত ভালোমানুষের মতো কহিল, “আজ্ঞা, না ।” বনোয়ারি । মিথ্যা কথা বলিতে ছু। তোমার ভালো হইবে না, এখনি ফিরাইয়া দাও । বনোয়ারি মিথ্যা তর্জন গর্জন করিল। কী জিনিস তাহার হারাইয়াছে তাহাও সে বলিতে পারিল না। এবং সেই চোরাই মাল সম্বন্ধে তাহার কোনো জোর নাই জানিয়া সে মনে মনে অসাবধান মূঢ় আপনাকেই যেন ছিন্ন ছিন্ন করিতে লাগিল । কাছারিতে এইরূপ পাগলামি করিয়া সে চাপাতলায় আবার খোজাখুঁজি করিতে লাগিল । মনে মনে মাতৃদিব্য করিয়া সে প্রতিজ্ঞা করিল, “ষে করিয়া হউক। এ কাগজগুলা পুনরায় উদ্ধার করিব তবে আমি ছাড়িব ।’ কেমন করিয়া উদ্ধার করিবে তাহা চিন্তা করিবার সামর্থ্য তাহার ছিল না, কেবল ক্রুদ্ধ বালকের মতো বার বার মাটিতে পদাঘাত করিতে করিতে বলিল, “উদ্ধার করি বই, করিবাই, করিবই।” শ্ৰান্তদেহে সে গাছতলায় বসিল । কেহ নাই, তাহার কেহ নাই এবং তাহার কিছুই নাই। এখন হইতে নিঃসম্বলে আপন ভাগ্যের সঙ্গে এবং সংসারের সঙ্গে তাহাকে লড়াই করিতে হইবে । তাহার পক্ষে মানসম্রাম নাই, ভদ্রতা নাই, প্ৰেম নাই, স্নেহ নাই, কিছুই নাই । আছে কেবল মরিবার এবং মারিবার অধ্যবসায় । এইরূপ মনে মনে ছটফট করিতে করিতে নিরতিশয় ক্লাস্তিতে চাতালের উপর পড়িয়া কখন সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। যখন জাগিয়া উঠিল তখন হঠাৎ বুঝিতে পারিল না, কোথায় সে আছে। ভালো করিয়া সজাগ হইয়া উঠিয়া বসিয়া দেখে তাহার শিয়রের কাছে হরিদাস বসিয়া । বনোয়ারিকে জাগিতে দেখিয়া হরিদাস বলিয়া উঠিল, “জ্যাঠামশায়, তোমার কী হারাইয়াছে বলে দেখি ।” বনোয়ারি স্তব্ধ হইয়া গেলা- হরিদাসের এ প্রশ্নের উত্তর করিতে পারিল না । হরিদাস কহিল, “আমি যদি দিতে পারি। আমাকে কী দিবে।” বনোয়ারির মনে হইল, হয়তো আর-কিছু। সে বলিল, “আমার যাহা আছে সব তোকে দিব ।” এ কথা সে পরিহাস করিয়াই বলিল ; সে জানে, তাহার কিছুই নাই । তখন হরিদাস আপনি কাপড়ের ভিতর হইতে বনোয়ারির রুমালে-মোড়া সেই কাগজের তাড়া বাহির করিল । এই রঙিন রুমালটাতে বাঘের ছবি আঁকা ছিল ; সেই ছবি তাহার জ্যাঠা তাহাকে অনেকবার দেখাইয়াছে। এই রুমালটার প্রতি হরিদাসের বিশেষ লোভ । সেইজন্যই অগ্নিদাহের গোলমালে ভূত্যেরা যখন বাহিরে ছুটিয়াছিল। সেই অবকাশে বাগানে আসিয়া হরিদাস চাপাতলায় দূর হইতে এই রুমালটা দেখিয়াই চিনিতে পারিয়াছিল । হরিদাসকে বনোয়ারি বুকের কাছে টানিয়া লইয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল ; কিছুক্ষণ পরে তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল। তাহার মনে পড়িল, অনেকদিন পূর্বে সে তাহার এক নূতন-কেনা কুকুরকে শায়েস্তা করিবার জন্য তাহাকে বারংবার চাবুক মারিতে বাধ্য হইয়াছিল । একবার তাহার চাবুক হারাইয়া গিয়াছিল, কোথাও সে খুঁজিয়া পাইতেছিল না। যখন চাবুকের আশা পরিত্যাগ করিয়া সে বসিয়া আছে এমন সময় দেখিল, সেই কুকুরটা কোথা হইতে চাবুকটা মুখে করিয়া মনিবের সুখ আনিয়া পরমানলে লেজ নাড়িতেছে। আর কােনােনি কুকুরকে সে চাবুক মারিতে পারে বনোয়ারি তাড়াতাড়ি চােখের জল মুছিয়া ফেলিয়া কহিল, “হরিদাস, তুই কী চাস আমাকে বল।” হরিদাস কহিল, “আমি তোমার ঐ রুমালটা চাই, জ্যাঠামশায় ।” বনোয়ারি কহিল, “আয় হরিদাস, তোকে কঁধে চড়াই ।” হরিদাসকে কাধে তুলিয়া লইয়া বনোয়ারি তৎক্ষণাৎ অন্তঃপুরে চলিয়া গেল । শয়নঘরে গিয়া দেখিল, কিরণ সারাদিন-রৌদ্রে-দেওয়া কম্বলখনি বারান্দা হইতে তুলিয়া আনিয়া ঘরের মেজের উপর পাতিতেছে। বনোয়ারির কাধের উপর হরিদাসকে দেখিয়া সে উদবিগ্ন হইয়া বলিয়া উঠিল, “নামাইয়া