পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ܓ ܠ 9 দাও, নামাইয়া দাও- উহাকে তুমি ফেলিয়া দিবে।” বনোয়ারি কিরণের মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি রাখিয়া কহিল, “আমাকে আর ভয় করিয়ো না, আমি ফেলিয়া দিব না ।” 幽 এই বলিয়া সে কাধি হইতে নামাইয়া হরিদাসকে কিরণের কোলের কাছে অগ্রসর করিয়া দিল । তাহার পরে সেই কাগজগুলি লইয়া কিরণের হাতে দিয়া কহিল, “এগুলি হরিদাসের বিষয়সম্পত্তির দলিল ।। যত্ন করিয়া রাখিয়ো ।” কিরণ আশ্চর্য হইয়া কহিল, “তুমি কোথা হইতে পাইলে ।” তাহার পর হরিদাসকে বুকে টানিয়া কহিল, “এই নে বাবা, তোর জ্যাঠামশায়ের যে মূল্যবান সম্পত্তিটির প্রতি তোর লোভ পড়িয়াছে, এই নে ৷” বলিয়া রুমালটি তাহার হাতে দিল । তাহার পর আর-একবার ভালো করিয়া কিরণের দিকে তাকাইয়া দেখিল ; দেখিল, সেই তথ্বী এখন তো তখী নাই, কখন মোটা হইয়াছে সে তাহা লক্ষ্য করে নাই ; এতদিনে হালদারগোষ্ঠীর বড়োবউয়ের উপযুক্ত চেহারা তাহার ভরিয়া উঠিয়াছে ; আর কেন, এখন অমরুশতকের কবিতাগুলাও বনোযারির অন্য সমস্ত সম্পত্তির সঙ্গে বিসর্জন দেওয়াই ভালো । সেই রাত্রেই বনোয়ারির আর দেখা নাই । কেবল সে একছত্ৰ চিঠি লিখিয়া গেছে যে, সে চাকবি খুজিতে বাহির হইল । বাপের শ্রাদ্ধ পর্যন্ত সে অপেক্ষা করিল না ! দেশসৃদ্ধ লোক তাই লইয়া তাহাকে ধিক ধিক করিতে ढ्नांकिळ । stళి ల్ని হৈমন্তী কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না । তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে । মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গেছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চিৎ উপরে আছে, সেইজন্যই তাড়া । আমি ছিলাম বর । সুতরাং, বিবাহসম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল । আমার কাজ আমি করিয়াছি, এফ. এ. পাস করিয়া বৃত্তি পাইয়াছি । তাই প্ৰজাপতির দুই পক্ষ, কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষ ঘন ঘন বিচলিত হইয়া উঠিল । আমাদের দেশে যে-মানুষ একবার বিবাহ করিয়াছে বিবাহ সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোনো উদবেগ থাকে না ! নরমাংসের স্বাদ পাইলে মানুষের সম্বন্ধে বাঘের যে দশা হয়, স্ত্রীর সম্বন্ধে তাহার ভাবটা সেইরূপ হইয়া উঠে। অবস্থা যেমনি ও বয়স যতই হউক, স্ত্রীর অভাব ঘটিবামাত্র তাহা পূরণ করিয়া লাইতে তাহার কোনো দ্বিধা থাকে না । যত দ্বিধা ও দুশ্চিন্তা সে দেখি আমাদের নবীন ছাত্রদের । বিবাহের পৌনঃপুনিক প্রস্তাবে তাহদের পিতৃপক্ষের পাকা চুল কলাপের আশীর্বাদে পুনঃপুন কঁচা হইয়া উঠে, আর প্রথম ঘটকালির আঁচেই ইহাদের কাচা চুল ভাবনায় একরাত্রে পাকিবার উপক্রম হয় । সত্য বলিতেছি, আমার মনে এমন বিষম উদবেগ জন্মে নাই । বরঞ্চ বিবাহের কথায় আমার মনের মধ্যে যেন দক্ষিনে হাওয়া দিতে লাগিল। কৌতুহলী কল্পনার কিশলয়গুলির মধ্যে একটা যেন কানাকানি পড়িয়া গেল। যাহাকে বার্কের ফ্রেঞ্চ রেভোলুশনের নোট পাঁচ-সাত খাতা মুখস্থ করিতে হইবে, তাহার পক্ষে এ ভাবটা দোষের । আমার এ লেখা যদি টেকসটবুক-কমিটির অনুমোদিত হইবার কোনো আশঙ্কা থাকিত তবে সাবধান হইতাম ।