পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ናimi«ጳPጂ \S) SG? এই বলিয়া সে বহু যত্নে ফুলগুলি আপনি আঁচলের প্রান্তে বাধিয়া লইয়া মাথায় ঠেকাইয়া বলিল, “আমার ঠাকুরকে আমি লইয়া যাই ।” কেবল ফুলদানিতে রাখিলেই যে ফুলের আদর হয় না, তাহা বুঝিতে আমার বিলম্ব হইল না । আমার মনে হইল, ফুলগুলিকে যেন ইস্কুলের পড়া-না-পারা ছেলেদের মতো প্রতিদিন আমি বেঞ্চের উপর দাড় করাইয়া রাখি । সেইদিন সন্ধ্যার সময় যখন ছাদে বসিয়াছি, বোষ্টমী আমার পায়ের কাছে আসিয়া বসিল । কহিল, “আজ সকালে নাম শুনাইবার সময় তোমার প্রসাদী ফুলগুলি ঘরে ঘরে দিয়া আসিয়াছি। আমার ভক্তি দেখিয়া বেণী চক্রবর্তী হাসিয়া বলিল, ‘পাগলি, কাকে ভক্তি করিস তুই ? বিশ্বের লোকে যে তাকে মন্দ বলে ।” হাগো, সকলে নাকি তোমাকে গালি দেয় ?” কেবল এক মুহুর্তের জন্য মনটা সংকুচিত হইয়া গেল। কালির ছিটা এত দূরেও ছড়ায় ! বোষ্টমী বলিল, “বেণী ভাবিয়াছিল, আমার ভক্তিটাকে এক ফুয়ে নিবাইয়া দিবে। কিন্তু, এ তো তেলের বাতি নয়, এ যে আগুন ! আমার গীের, ওরা তোমাকে গালি দেয় কেন গো ।” আমি বলিলাম, “আমার পাওনা আছে বলিয়া । আমি হয়তো একদিন লুকাইয়া উহাদের মন চুরি করিবার লোভ করিয়াছিলাম ।” বোষ্টমী কহিল, “মানুষের মনে বিষ যে কত সে তো দেখিলে । লোভ আর টিকিবে না।” আমি বলিলাম, “মনে লোভ থাকিলেই মারের মুখে থাকিতে হয়। তখন নিজেকে মারিবার বিষ নিজের মনই জোগায় । তাই আমার ওঝা আমারই মনটাকে নির্বিষ করিবার জন্য এত কড়া করিয়া ঝাড়া দিতেছেন ।” বোষ্টমী কহিল, “দয়াল ঠাকুর মারিতে মারিতে। তবে মারকে খেদান । শেষ পর্যন্ত যে সহিতে পারে সেই বাচিয়া যায় ।” সেইদিন সন্ধ্যার সময় অন্ধকার ছাদের উপর সন্ধ্যাতারা উঠিয়া আবার অন্ত গেল ; বোষ্টমী তাহার জীবনের কথা আমাকে শুনাইল - আমার স্বামী বড়ো সাদা মানুষ । কোনো কোনো লোকে মনে করিত র্তাহার বুঝিবার শক্তি কম । কিন্তু, আমি জানি, যাহারা সাদা করিয়া বুঝিতে পারে তাহারাই মোটের উপর ঠিক বোঝে । ইহাও দেখিয়াছি, তাহার চাষবাস জমিজমার কাজে তিনি যে ঠকিতেন তাহা নহে। বিষয়কাজ এবং ঘরের কাজ দুইই তাহার গোছালো ছিল । ধান-চাল-পাটের সামান্য যে একটু ব্যাবসা করিতেন, কখনো তাহাতে লোকসান করেন নাই। কেননা, তাহার লোভ অল্প। যেটুকু তাহার দরকার সেটুকু তিনি হিসাব করিয়া চলিতেন ; তার চেয়ে বেশি যা তাহা তিনি বুঝিতেনও না, তাহাতে হাতও দিতেন না । আমার বিবাহের পূর্বেই আমার শ্বশুর মারা গিয়াছিলেন এবং আমার বিবাহের অল্পদিন পরেই শাশুড়ির মৃত্যু হয় । সংসারে আমাদের মাথার উপরে কেহই ছিল না । আমার স্বামী মাথার উপরে একজন উপরওয়ালাকে না বসাইয়া থাকিতে পারিতেন না । এমন-কি, বলিতে লজা হয়, আমাকে যেন তিনি ভক্তি করিতেন । তবু আমার বিশ্বাস, তিনি আমার চেয়ে বুঝিতেন বেশি, আমি তাহার চেয়ে বলিতাম বেশি। তিনি সকলের চেয়ে ভক্তি করিতেন তাহার গুরুঠাকুরকে । শুধু ভক্তি নয়, সে ভালোবাসা- এমন vöGrizsi fel RR Rt. গুরুঠাকুর তার চেয়ে বয়সে কিছু কম। কী সুন্দর রূপ তার। বলিতে বলিতে বোষ্টমী ক্ষণকাল থামিয়া তাহার সেই দূরবিহারী চক্ষু দুটিকে বহু দূরে পাঠাইয়া দিল এবং গুনগুনা করিয়া গাহিল অরুশকিরণ খানি তরুণ অমৃতে ছানি কোনবিধি নিরমিল দেহা ।