পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Փ8Եr রবীন্দ্র-রচনাবলী ধড়াসা করিয়া দরজাটা পড়িল, ঘরে কে প্রবেশ করিল। আমি আপাদমস্তক চমকিয়া উঠিলাম। দেখিলাম, তখনো রৌদ্র আছে। ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলাম ; সুবোধ ঘরে ঢুকিতেই আমার ঘুম ভাঙিয়াছে। সুবোধ হাটখোলা বড়োবাজার বেলেঘাটা প্রভৃতি যেখানে যেখানে প্ৰসন্নর দেখা পাইবার সম্ভাবনা ছিল সমস্ত দিন ধরিয়া সব জায়গায় খুজিয়াছে। যে করিয়াই হউক তাহাকে যে আনিতে পারে নাই, এই অপরাধের ভয়ে তার মুখ স্নান হইয়া গিয়াছিল। এতদিন পরে দেখিলাম, কী সুন্দর তার মুখখানি, কী করুণায় ভরা তার দুইটি চোখ ! আমি বলিলাম, “আয় বাবা সুবোধ, আয় আমার কোলে আয় ।” সে আমার কথা বুঝিতেই পারিল না ; ভাবিল, আমি বিদ্রুপ করিতেছি। ফ্যালফ্যাল করিয়া আমার মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল এবং খানিকক্ষণ দাড়াইয়াই মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়া গেল । মুহুর্তে আমার বাতের পঙ্গুতা কোথায় চলিয়া গেল। আমি ছুটিয়া গিয়া কোলে করিয়া তাহাকে বিছানায় আনিয়া ফেলিলাম। কুঁজায় জল ছিল, তার মুখে মাথায় ছিটা দিয়া কিছুতেই তার চৈতন্য হইল না । ডাক্তার ডাকিতে পাঠাইলাম । ডাক্তার আসিয়া তার অবস্থা দেখিয়া বিস্মিত হইলেন । বলিলেন, “এ যে একেবারে ক্লান্তির চরম সীমায় আসিয়াছে । কী করিয়া এমন হওয়া সম্ভব হইল।” আমি বলিলাম, “আজ কোনো কারণে সমস্ত দিন উহাকে পরিশ্রম করিতে হইয়াছে।” তিনি বলিলেন, “এ তো একদিনের কাজ নয় । বোধ হয় দীর্ঘকাল ধরিয়া ইহার ক্ষয় চলিতেছিল, 6कठ् कलाका का कारैि ।” উত্তেজক ঔষধ ও পথ্য দিয়া ডাক্তার তার চৈতন্যসাধন করিয়া চলিয়া গেলেন । বলিলেন, “বহু যত্নে যদি দৈবাৎ বাচিয়া যায় তো বাচিবে, কিন্তু ইহার শরীরে প্রাণশক্তি নিঃশেষ হইয়া গেছে । বোধ করি শেষ-কয়েকদিন এ ছেলে কেবলমাত্র মনের জোরে চলাফেরা করিয়াছে।” আমি আমার রোগ ভুলিয়া গেলাম। সুবোধকে আমার বিছানায় শোয়াইয়া দিনরাত তার সেবা করিতে লাগিলাম। ডাক্তারের যে ফি দিব এমন টাকা আমার ঘরে নাই । স্ত্রীর গহনার বাক্স খুলিলাম । সেই পান্নার কণ্ঠীটি তুলিয়া লইয়া স্ত্রীকে দিয়া বলিলাম, “এইটি তুমি রাখো।” বাকি সবগুলি লইয়া বন্ধক দিয়া টাকা লইয়া আসিলাম । কিন্তু টাকায় তো মানুষ বঁাচে না । উহার প্রাণ যে আমি এতদিন ধরিয়া দলিয়া নিঃশেষ করিয়া দিয়াছি। যে স্নেহের অন্ন হইতে উহাকে দিনের পর দিন বঞ্চিত করিয়া রাখিয়াছি আজ যখন তাহা হৃদয় ভরিয়া তাহাকে আনিয়া দিলাম তখন সে আর তাহা গ্ৰহণ করিতে পারিল না । শূন্য হাতে তার মার কাছে সে ফিরিয়া গেল । VE SVSS শেষের রাত্রি “মাসি ।” “ঘুমোও, যতীন, রাত হল যে ।” “ হােক-না। রাত, আমার দিন তো বেশি নেই। আমি বলছিলুম, মণিকে তার বাপের বাড়ি- ভুলে যাচ্ছি, ওর বাপ এখন কোথায়-” সীতারামপুরে ।” “ই সীতারামপুরে। সেইখানে মণিকে পাঠিয়ে দাও, আরো কতদিন ও রোগীর সেবা করবে । ওর