পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

test \O(G?) কোথা থেকে আমার মনের ভিতরটি আজ এমন আনন্দে ভরে উঠেছে।” মাসি আস্তে আন্তে যতীনের কপালে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিলেন। অন্ধকরে তাহার দুই চক্ষু বাহিয়া যে জল পড়িতেছিল। তাহা কেহ দেখিতে পাইল না । “আমি ভাবছি, মাসি, ওর অল্প বয়স, ও কী নিয়ে থাকবে ।” “অল্প বয়স কিসের, যতীন ? এ তে ওর ঠিক বয়স । আমরাও তো, বাছা, অল্প বয়সেই দেবতাকে সংসারের দিকে ভাসিয়ে অন্তরের মধ্যে বসিয়েছি- তাতে ক্ষতি হয়েছে কী । তাও বলি, সুখেরই বা বেশি দরকার কিসের ” “মাসি, মণির মনটি যেই জাগবার সময় হল অমনি আমি-” “ভাব কেন, যতীন ? মন যদি জাগে তবে সেই কি কম ভাগ্য !” হঠাৎ অনেক দিনের শোনা একটা বাউলের গান যতীনের মনে পড়িয়া গেল v33 মন, যখন জাগলি না রে তখন মনের মানুষ এল দ্বারে । তার চলে যাবার শব্দ শুনে ভাঙল রে ঘুম, ও তোর ভাঙল রে ঘুম অন্ধকারে । “মাসি, ঘড়িতে ক'টা বেজেছে ।” “न्ा'फ्नो दाऊद ।” “সবে নটা ? আমি ভাবছিলুম, বুঝি দুটাে, তিনটে, কি কটা হবে । সন্ধ্যার পর থেকেই আমার দুপুর রাত আরম্ভ হয় । তবে তুমি আমার ঘুমের জন্যে অত ব্যস্ত হয়েছিলে কেন ।” “কালও সন্ধ্যার পর এই রকম কথা কইতে কইতে কত রাত পর্যন্ত তোমার আর ঘুম এল না, তাই আজ তোমাকে সকাল-সকাল ঘুমোতে বলছি।” “মণি কি ঘুমিয়েছে।” “না, সে তোমার জন্যে মসুরির ডালের সুপ তৈরি করে তবে ঘুমোতে যায়।” “বলো কী, মাসি, মণি কি তবে-” “সেই তো তোমার জন্যে সব পথ্যি তৈরি করে দেয় । তার কি বিশ্রাম আছে।” “আমি ভাবতুম, মণি বুঝি-” “মেয়েমানুষের কি আর এ-সব শিখতে হয় । দায়ে পড়লেই আপনি করে নেয় ।” “আজি দুপুরবেলা মীেরলা মাছের যে ঝোল হয়েছিল তাতে বড়ো সুন্দর একটি তার ছিল । আমি ভাবছিলুম, তোমারই হাতের তৈরি ।” “কপাল আমার ! মণি কি আমাকে কিছু করতে দেয় । তোমার গামছা তোয়ালে নিজের হাতে কেচে শুকিয়ে রাখে । জানে যে, কোথাও কিছু নোংরা তুমি দেখতে পার না । তোমার বাইরের বৈঠকখানা যদি একবার দেখ তবে দেখতে পাবে, মণি দুবেলা সমস্ত ঝেড়ে মুছে কেমন তকতকে ক’রে রেখে দিয়েছে ; আমি যদি তোমার এ ঘরে ওকে সর্বদা আসতে দিতুম তা হলে কি আর রক্ষা থাকত ! ও তো তাই চায় ।” “মণির শরীরটা বুঝি—” “ডাক্তাররা বলে, রোগীর ঘরে ওকে সর্বদা আনাগোনা করতে দেওয়া কিছু নয় । ওর মন বড়ো নরম কি না, তোমার কষ্ট দেখলে দুদিনে যে শরীর ভেঙে পড়বে।” “মাসি, ওকে তুমি ঠেকিয়ে রাখা কী করে।” “আমাকে ও বডেড মানে বলেই পারি। তবু বার বার গিয়ে খবর দিয়ে আসতে হয়- ঐ আমার আর-এক কাজ হয়েছে ।