পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻雷9灭 969ܘ “না, তুমি বলতে পারবে না যে যাচ্ছি।” “তা বেশ, কিছু বলব না, কিন্তু আমি দেরি করতে পারব না। কালই অন্নপ্রাশন- আজ যদি না যাই তো চলবে না ।” “আমি জোড়হাত করছি, বউ, আমার কথা আজ একদিনের মতো রাখো । আজ মন একটু শান্ত করে যতীনের কাছে এসে বসে- তাড়াতাড়ি কোরো না ।” “তা, কী করব বলো, গাড়ি তো আমার জন্যে বসে থাকবে না । অনাথ চলে গেছে- দশ মিনিট পরেই সে এসে আমাকে নিয়ে যাবে । এই বেলা তার সঙ্গে দেখা সেরে আসি গে৷ ” “না, তবে থােক- তুমি যাও । এমন করে তার কাছে যেতে দেব না। ওরে অভাগিনী, তুই যাকে এত দুঃখ দিলি সে তো সব বিসর্জন দিয়ে আজ বাদে কাল চলে যাবে- কিন্তু, যত দিন বেঁচে থাকবি এ দিনের কথা তোকে চিরদিন মনে রাখতে হবে- ভগবান আছেন, ভগবান আছেন, সে কথা একদিন বুঝবি ।” “মাসি, তুমি আমন করে শাপ দিয়ে না বলছি!” “ওরে বাপ রে, আর কেন বেঁচে আছিস রে বাপ । পাপের যে শেষ নেই- আমি আর ঠেকিয়ে রাখতে পারলুম না।” মাসি একটু দেরি করিয়া রোগীর ঘরে গেলেন । আশা করিলেন, যতীন ঘুমাইয়া পড়িবে। কিন্তু ঘরে ঢুকিতেই দেখিলেন, বিছানার উপর যতীন নড়িয়া-চড়িয়া উঠিল । মাসি বলিলেন, “এই এক কাণ্ড করে বসেছে ।” “কী হয়েছে। মণি এল না ? এত দেরি করলে কেন, মাসি ।” “গিয়ে দেখি, সে তোমার দুধ জ্বাল দিতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে বলে কান্না । আমি বলি, “হয়েছে কী, আরো তো দুধ আছে।” কিন্তু, অসাবধান হয়ে তোমার খাবার দুধ পুড়িয়ে ফেলেছে, বউয়ের এ লজ্জা আর কিছুতেই যায় না। আমি তাকে অনেক ক’রে ঠাণ্ডা করে বিছানায় শুইয়ে রেখে এসেছি। আজ আর তাকে আনলুম না । সে একটু ঘুমোক ৷” মণি আসল না বলিয়া যতীনের বুকের মধ্যে যেমন বাজিল, তেমনি সে আরামও পাইল । তাহার মনে আশঙ্কা ছিল যে, পাছে মণি সশরীরে আসিয়া মণির ধ্যান-মাধুরীটুকুর প্রতি জুলুম করিয়া যায়। কেননা, তাহার জীবনে এমন অনেকবার ঘটিয়াছে। দুধ পুড়াইয়া ফেলিয়া মণির কোমল হৃদয় অনুতাপে ব্যথিত হইয়া উঠিয়াছে, ইহারই রাসটুকুতে তাহার হৃদয় ভরিয়া ভরিয়া উঠিতে লাগিল । ས་སྐཤེp” “কী, বাবা ।” “আমি বেশ জনছি, আমার দিন শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু, আমার মনে কোনো খেদ নেই। তুমি আমার জন্যে শোক কোরো না ।” “না, বাবা, আমি শোক করব না । জীবনেই যে মঙ্গল আর মরণে যে নয়, এ কথা আমি মনে করি (କମ୍ୟ ।” “মাসি, তোমাকে সত্য বলছি, মৃত্যুকে আমার মধুর মনে হচ্ছে।” অন্ধকার আকাশের দিকে তাকাইয়া যতীন দেখিতেছিল, তাহার মণিই আজ মৃত্যুর বেশ ধরিয়া আসিয়া দাড়াইয়াছে। সে আজ অক্ষয় যৌবনে পূৰ্ণ- সে গৃহিণী, সে জননী ; সে রূপসী, সে কল্যাণী । তাহারই এলোচুলের উপরে ঐ আকাশের তারাগুলি লক্ষ্মীর স্বহস্তের আশীর্বাদের মালা । তাহাদের দুজনের মাথার উপরে এই অন্ধকারের মঙ্গলবন্ত্রখানি মেলিয়া ধরিয়া আবার যেন নূতন করিয়া শুভদৃষ্টি হইল। রাত্রির এই বিপুল অন্ধকার ভরিয়া গেল মণির অনিমেষ প্রেমের দৃষ্টিপাতে। এই ঘরের বধু মণি, এই একটুখানি মণি, আজ বিশ্বরূপ ধরিল ; জীবনমরণের সংগমতীর্থে ঐ নক্ষত্ৰবেদীর উপরে সে বসিল ; নিস্তবন্ধ রাত্রি মঙ্গলঘােটর মতো পুণ্যধারায় ভরিয়া উঠিল । যতীন জোড়হাত করিয়া মনে