পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\968 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মনে কহিল, "এতদিনের পর ঘোমটা খুলিল, এই ঘোর অন্ধকারের মধ্যে আবরণ ঘুচিল— অনেক কাদাইয়াছ- সুন্দর, হে সুন্দর, তুমি আর ফাকি দিতে পরিবে না।” 8 “কষ্ট হচ্ছে, মাসি, কিন্তু যত কষ্ট মনে করছ, তার কিছুই নয় । আমার সঙ্গে আমার কষ্টের ক্রমশই যেন বিচ্ছেদ হয়ে আসছে। বোঝাই নীেকার মতো এতদিন সে আমার জীবন-জাহাজের সঙ্গে বাধা ছিল ; আজ যেন বঁাধন কাটা পড়েছে, সে আমার সব বোঝা নিয়ে দূরে ভেসে চলল। এখনো তাকে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু তাকে যেন আর আমার বলে মনে হচ্ছে না- এ দুদিন মণিকে একবারও দেখি নি, মাসি ।” “পিঠের কাছে আর-একটা বালিশ দেব কি, যতীন ।” “আমার মনে হচ্ছে, মাসি, মণিও যেন চলে গেছে। আমার বঁাধন-ছেড়া দুঃখের নীেকাটির মতো ।” “বাবা, একটু বেদােনর রস খাও, তোমার গলা শুকিয়ে আসছে।” “আমার উইলটা কাল লেখা হয়ে গেছে- সে কি আমি তোমাকে দেখিয়েছি- ঠিক মনে পড়ছে। की ।” “মা যখন মারা যান আমার তো কিছুই ছিল না । তোমার খেয়ে তোমার হাতে আমি মানুষ । তাই বলছিলুম-” “ সে আবার কী কথা । আমার তো কেবল এই একখানা বাড়ি আর সামান্য কিছু সম্পত্তি ছিল । বাকি সবই তো তোমার নিজের রোজগার ।” “কিন্তু এই বাড়িটা—” “কিসের বাড়ি আমার ! কত দালান তুমি বাড়িয়েছ, আমার সেটুকু কোথায় আছে খুঁজেই পাওয়া यश कीं ।" “মণি তোমাকে ভিতরে ভিতরে খুব-” “সে কি জানি নে, যতীন । তুই এখন ঘুমো ।” “আমি মণিকে সব লিখে দিলুম বটে, কিন্তু তোমারই সব রইল, মাসি ৷৷ ও তো তোমাকে কখনো অমান্য করবে না ।” “ সেজন্যে অত ভাবিছ কেন, বাছা ।” “তোমার আশীর্বাদেই আমার সব, তুমি আমার উইল দেখে এমন কথা কোনোদিন মনে কোরো "-س-}6N “ও কী কথা যতীন । তোমার জিনিস তুমি মণিকে দিয়েছ বলে আমি মনে করব ? আমার এমনি পোড়া মন ? তোমার জিনিস ওর নামে লিখে দিয়ে যেতে পারছি বলে তোমার যে-সুখ সেই তো আমার সকল সুখের বেশি, বাপ ।” “কিন্তু, তোমাকেও আমি-” “দেখ, যতীন, এইবার আমি রাগ করব । তুই চলে যাবি, আর তুই আমাকে টাকা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে যাবি ?” “মাসি, টাকার চেয়ে আরো বড়ো যদি কিছু তোমাকে-” “দিয়েছিস, যতীন, ঢের দিয়েছিস । আমার শূন্য ঘর ভরে ছিলি, এ আমার অনেক জন্মের ভাগ্য । এতদিন তো বুক ভরে পেয়েছি, আজ আমার পাওনা যদি ফুরিয়ে গিয়ে থাকে তো নালিশ করব না । দাও, সব লিখে দাও, লিখে দাও- বাড়িঘর, জিনিসপত্র, ঘোড়াগাড়ি, তালুকমুলুক- যা আছে সব মণির নামে লিখে দাও- এ-সব বোঝা আমার সইবে না ।”