পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VVS রবীন্দ্র-রচনাবলী স্যাকরা গহনা হাতে তুলিয়া লইয়া বলিল, “এ আর দেখিব কী । ইহাতে খাদ নাই- এমন সোনা এখনকার দিনে ব্যবহারই হয় না।” এই বলিয়া সে মকরমুখ মোটা একখানা বালায় একটু চাপ দিয়া দেখাইল, তাহা বাকিয়া যায় । মামা তখনি তার নোটবইয়ে গহনাগুলির ফর্দ টুকিয়া লইলেন, পাছে যাহা দেখানো হইল তাহার কোনোটা কম পড়ে । হিসাব করিয়া দেখিলেন, গহনা যো-পরিমাণ দিবার কথা এগুলি সংখ্যায় দরে এবং ভারে তার অনেক বেশি । গহনাগুলির মধ্যে একজোড়া এয়ারিং ছিল । শম্ভুনাথ সেইটো স্যাকরার হাতে দিয়া বলিলেন, “এইটে একবার পরখ করিয়া দেখো ।” স্যাকরা কহিল, “ইহা বিলাতি মাল, ইহাতে সোনার ভাগ সামান্যই আছে।” শভুবাবু এয়ারিংজোড়া মামার হাতে দিয়া বলিলেন, “এটা আপনারাই রাখিয়া দিন ।” মামা সেটা হাতে লইয়া দেখিলেন, এই এয়ারিং দিয়াই কন্যাকে তাহারা আশীৰ্বাদ করিয়াছিলেন । মামার মুখ লাল হইয়া উঠিল। দরিদ্র তাহকে ঠকাইতে চাহিবে কিন্তু তিনি ঠকিবেন না, এই আনন্দ-সম্ভোগ হইতে বঞ্চিত হইলেন এবং তাহার উপরেও কিছু উপরি-পাওনা জুটিল । অত্যন্ত মুখ ভার করিয়া বলিলেন, “অনুপম, যাও তুমি সভায় গিয়া বোসো গে।” শভুনাথবাবু বলিলেন, “না, এখন সভায় বসিতে হইবে না। চলুন, আগে আপনাদের খাওয়াইয়া निश् ।।” মামা বলিলেন, “সে কী কথা । লগ্ন-” শম্ভুনাথবাবু বলিলেন, “সেজন্য কিছু ভাবিবেন না— এখন উঠন ।” লোকটি নেহাত ভালোমানুষ ধরনের কিন্তু ভিতরে বেশ একটু জোর আছে বলিয়া বোধ হইল । মামাকে উঠিতে হইল । বরযাত্রদেরও আহার হইয়া গেল । আয়োজনের আড়ম্বর ছিল না । কিন্তু, রান্না ভালো এবং সমস্ত বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলিয়া সকলেরই তৃপ্তি হইল । বরযাত্রদের খাওয়া শেষ হইলে শম্ভুনাথবাবু আমাকে খাইতে বলিলেন । মামা বলিলেন, “সে কী কথা । বিবাহের পূর্বে বর খাইবে কেমন করিয়া ।” এ সম্বন্ধে মামার কোনো মতপ্রকাশকে তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “তুমি কী বল । বসিয়া যাইতে দোষ কিছু আছে ?” মূর্তিমতী মাতৃ-আজ্ঞা-স্বরূপে মামা উপস্থিত, তার বিরুদ্ধে চলা আমার পক্ষে অসম্ভব । আমি আহারে বসিতে পারিলাম না । তখন শম্ভুনাথবাবু মামাকে বলিলেন, “আপনাদিগকে অনেক কষ্ট দিয়াছি। আমরা ধনী নই, আপনাদের যোগ্য আয়োজন করিতে পারি নাই, ক্ষমা করিবেন । রাত হইয়া গেছে, আর আপনাদের কষ্ট বাড়াইতে ইচ্ছা করি না । এখন তবে-” মামা বলিলেন, “তা, সভায় চলুন, আমরা তো প্ৰস্তুত আছি।” শম্ভুনাথ বলিলেন, “তবে আপনাদের গাড়ি বলিয়া দিই ?” মামা আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “ঠাট্টা করিতেছেন নাকি ?” শম্ভুনাথ কহিলেন, “ঠাট্টা তো আপনিই করিয়া সারিয়াছেন । ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা! আমার নাই ।” মামা দুই চোখ এতবড়ো করিয়া মেলিয়া অবাক হইয়া রহিলেন । শদ্ভুনাথ কহিলেন, “আমার কন্যার গহনা আমি চুরি করিব, এ কথা যারা মনে করে তাদের হাতে डाभि कमा निष्ठ १ोंखेिं नां ।” আমাকে একটি কথা বলাও তিনি আবশ্যক বোধ করিলেন না । কারণ, প্ৰমাণ হইয়া গেছে, আমি 6कश्रै ब्रै । তার পরে যা হইল সে আমি বলিতে ইচ্ছা করি না। ঝাড়লণ্ঠন ভাঙিয়া-চুরিয়া, জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড